‘জাতীয় বাজেটে আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট নাগরিক সভা ২০১৮ এর সমান্তরাল অধিবেশন আজ ৫ মে ২০১৮ তারিখ সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসি কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জন-বাজেট সংসদ ২০১৮ এর সমান্তরাল এই সভার আয়োজন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কাপেং ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং-এর সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক জনাব ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর সৌরভ সিকদার এবং ডেভেলেপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর কাজী মারুফুল ইসলাম, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য শ্রী উষাতন তালুকদার এমপি এবং শ্রী মৃণাল কান্তি দাস এমপি প্রমূখ। বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা এর সঞ্চলনায় আলোচনা সভার স্বাগত বক্তব্য দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার হিরন মিত্র চাকমা, মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী সোহেল চন্দ্র হাজং ও কনসালটেন্ট খোকন সুইটেন মুরমু।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, বাংলাদেশে কেউ জাতিগত ভেদাভেদ, ধর্ম ও বর্ণের কারনে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। তাই আসন্ন বাজেটে ভিশন-২০৩০ এর শ্লোগান ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয়’ বাস্তবায়নে আদিবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, সমতল আদিবাসীদের পৃথক মন্ত্রণালয় গঠিত না হওয়া পর্যন্ত প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ কর্মসূচিকে স্বচ্ছতার ও জবাবদিহীতা জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের’ বিশেষ সেলে স্থানান্তরিত করা উচিত।

মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে বেগবান করার জন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন খুবই জরুরী। দেশের শাসন তান্ত্রিক ব্যবস্থায় মূল স্রােতের জনগণের তাই আদিবাসীদের ব্যপারে দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন জরুরী। পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগনেকে উন্নয়নের সমান রেখায় আনতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান সময়ের দাবি। আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস বাজেটে আদিবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দের জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।

ঊষাতন তালুকদার এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট প্রণয়ন করা উচিত। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যাতে উন্নয়নের অংশীদার হতে পারে এই জন্য সেখানে শিল্পাঞ্চল স্থাপন করতে হবে। এবং কর্ণফুলী পেপার মিলের মত ঝিমিয়ে পড়া শিল্প গুলো সংস্কারের জন্যও বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সাথে পার্বত্য শান্তি চুক্তি পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সভায় প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক এ আর আমান, আচিক মিচিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সুলেখা ম্রং, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। প্যানেলিস্ট বৃন্দের এবং মুক্ত আলোচনায় যে বিষয় সমূহ ফুটে ওঠেছে সেটা ‘জাতীয় বাজেটে আদিবাসী অধিকার সুনিশ্চিতকরণের দাবী সমূহকেই প্রতিফলিত করে। দাবি সমূহ নিম্নে প্রদান করা হলঃ

  • আদিবাসী জনগণের উন্নয়নের জন্য খাতভিত্তিক ও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
  • সকল মন্ত্রণালয়ের/বিভাগের বাজেটে আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা এবং বরাদ্দের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আদিবাসীদের সম্পৃত্ত করতে হবে, এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করহে হবে।
  • জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় আদিবাসী বিষয়ে স্পষ্ট বিবরণী থাকতে হবে। আদিবাসী জনগনের সঠিক সংখ্যা নিরুপণ এবং সংখ্যার ভিত্তিতে আদিবাসীদের বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে;
  • বাজেট বরাদ্দ সাধারণত হয় মন্ত্রণালয় ভিত্তিক। সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসীর বাস সমতলে। সমতলের আদিবাসীদের বিষয়টি দেখার জন্য এখনও কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নেই। তাই, সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ সমূহের বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা শক্তিশালী করণে পর্যাপ্ত বাজেট রাখতে হবে;
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৯৯৭ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর যথাযথ বাস্তবায়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আভ্যন্তরীন শরণার্থী পূর্নবাসনের টাস্কফোর্স ও ভূমি কমিশনের কাজ যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।
  • আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমী গুলোতে আদিবাসী সংস্কৃতি উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। শুধু নাচ-গান নয়, গবেষণার দিকে মনযোগী হতে হবে এবং এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমী গুলোতে আদিবাসী সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা;
  • সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও সামাজিক ক্ষমতায়নের বাজেট খাতে আদিবাসী উপকারভোগী যাতে নিশ্চিত হয়, তার জন্য এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকতে হবে।
  • উচ্চ শিক্ষা ও কারিগরী শিক্ষায় বৃত্তিসহ আদিবাসী নারী ও তরুণদের আত্ম-কর্ম সংস্থানের জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে।