বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ২৩ জুলাই ২০১৭ রবিবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে “নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ’’ বিষয়ে স্থানীয় সরকারের নারী পৌর মেয়র এবং উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকালের উপ-সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী। সভাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেসি লবি ডিরেক্টর জনা গোস্বামী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে নারীর মানবাধিকার রক্ষায়, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ আইনে নারীরা নির্বাচিত হচ্ছে। প্রশাসনেও নারীর অংশ গ্রহণ বৃদ্ধ পেয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা অগ্রসর হলেও নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তারা কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছে তা আমাদের আজ দেখার বিষয়। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন কিভাবে নিশ্চিত করা যায় এবং তার মাধ্যমে নারীর মানবাধিকার কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেই লক্ষ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে স্থানীয় সরকারের নারী পৌর মেয়র এবং উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার শাক্তিশালীকরণ বিষয়ে এই মতবিনিময় সভা করা হয়।
সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট গোল বা স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রার মেট ১৬ টি লক্ষের ৫ এবং ১৬ নম্বর লক্ষ হচ্ছে জেন্ডার সমতা [Gender Equality]: শান্তি ও ন্যায়বিচার [Peace, Justice & Strong Institutions]. বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এই মতবিনিময় সভাটির লক্ষ সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট গোল বা স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য এই দুইটি লক্ষমাত্রার সাথে একিভূত। আলোচকদের আলোচনায় স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণে নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের ভূমিকা এবং ন্যায় বিচার এবং সর্বস্তরে কার্যকর, জবাবদিহি এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়টি উঠে আসে।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপিত আয়শা খানম বলেন নারী আন্দোলন একটি ধারাবাহিক কাজ। ঐতিহাসিক ভাবে শতাব্দির পর শতাব্দি বিশ্ব নারী আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তাই বলে। তিনি বলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দীর্ঘ ৪৭ বছরের অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন তৃণমূলে নারীরা এলে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হয়, স্থানীয় সরকার
শক্তিশালী হলে গণতন্ত্র ভিত্তি পায়। নারী হিসেবে শতাব্দির পর শতাব্দি অবহেলা, অবজ্ঞা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে নারীরা। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও থাকার কারণে নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হন। পুরুষতন্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। গোটা দেশে রাজনীতিতে নারীর অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে, নারীকে পূর্ণ মানবসন্তান ভাবতে হবে। তিনি বলেন এসডিজি বাস্তবায়নে কেউ পিছনে থাকবে না, সরকারের এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নারী ভাইসচেয়ারম্যানরাও এগিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন। তারা জানান তাদেরকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যানরা যথাযথ মর্যাদা দেন না। বিভিন্ন সভার নোটিশ তাদের দেয়া হয় না, সভার সিদ্ধান্ত সমূহ তাদের জানানো হয় না। কোন কাগজপত্রে তাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয় না। পরিপত্রে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ নেই।এলাকার স্থাানীয় এমপি, ইউএনও, চেয়ারম্যান তাদের যথার্ত মূল্যায়ন করে না। স্বাক্ষরতাদের না জানিয়েই বিভিন্ন প্রকল্প কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকায় যেতে তাদের পরিবহণ (গাড়ি) সুবিধা না থাকায় নিরাপত্তাসহ নানান ঝুঁকির সম্মুখিন হতে হয়। তারা বলেন যে কোন কাজ হোক বা না হোক সেখানে নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের যেন স্বাক্ষর নেয়া হয়। তবে এই পদবীর কারণে কিছুটা হলেও তারা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারছেন বলে উল্লেখ করেন। ভিজিটি কার্ডগুলো চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বরাদ্দ হচ্ছে যা তারা জানেন না। নির্বাচনী এলাকার তুলনায় নারী জনপ্রতিনিধিদের সম্মাণী অনেক কম বলে তারা জানান। বাজেটে যেন সুপষ্টভাবে নারী জনপ্রতিনিধিদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় তার সুপারিশও রাখেন তারা। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যান ও যুব অধিদপ্তরের প্রতিটি কাজে যেন তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হয় সেই দাবি রাখেন তারা। বরাদ্দের মোট কত অংশ নারীকে দেয়া হবে তা যদি উল্লেখ করে দেয়া হয় তাহলে তারা ভালভাবে কাজ করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন ভাইসচেয়ারম্যানরা।
সভায় উপস্থিত ২১ টি জেলা থেকে আগত ৬০জন নারী ভাইসচেয়ারম্যান সকলেই এই এসকল বক্তব্যের সাথে একমত পকাশ করেন।