গত ৬ আগস্ট ২০১৭ দি ডেইলী স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ও বাংলাদেশের আদিবাসী নারীর অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভা। এই কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওর্য়াক, কাপেং ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওর্য়াকের সম্পাদক চঞ্চনা চাকমা এর সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাকমা সার্কেলের রানী য়েন য়েন, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আর্ন্তজাতিক কমিশনের সদস্য ও নিজেরা করি’র সম্বন্বয়কারী খুশি কবির এবং সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক ও সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচায প্রমূখ। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সঞ্চলনায় ফাল্গুনী ত্রিপুরা আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, বাঙালি নারীদের চেয়ে আদিবাসী নারীরা জাতিগতভাবে অধিক নিপীড়নের শিকার। বৈষম্যমূলক এ সমাজে আদিবাসী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা কঠিন ব্যপার। আদিবাসী নারীরা সীমাবদ্ধ জীবন থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। আদিবাসী নারীরা সমাজে অবহেলিত এবং জাতিগত ভাবে শোষণ ও নির্যাতনের শিকার।বাংলাদেশে গনমুখী শাসন ব্যবস্থা কায়েম না হলে আদিবাসী ও বাঙালি কোন নারীরাই নিরাপদ নয়।

পেপারটি ডাউনলোড করুন

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বহুত্ববাদকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা আজ একমূখী হতে চলেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আদিবাসীদের অর্ন্তভূক্তিকরণ অনেকটাই বিন্দুর মাঝে সিন্ধু খোঁজার মত। আদিবাসীদের সঠিক উন্নয়ন করতে হলে প্রথমে অদৃশ্য আদিবাসীদের দৃশ্যমান করতে হবে। আদিবাসীদের জন্য তাই পৃথক আদমশুমারীর ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। আদিবাসীদের নাগরিক অধিকার তাহলেই নিশ্চিত হবে এবং সঠিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে করা সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করা যাবে। তিনি আরও বলেন আদিবাসী নারীরা প্রধানত তিনভাবে অবহেলার কারণে সমাজের পিছনে পড়ে রয়েছেন; কাঠামোগত, সম্প্রদায়গত এবং জাতীয়ভাবে অবহেলার কারণে।

খুশি কবির বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সারকথা, কাউকে পিছনে ফেলে নয়। বাংলাদেশের সরকার এখানে ‘কাউকে’ এই বাক্যের সুনিদিষ্ট জনগণকে এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না। সরকার আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছেন যেখানে সে জায়গায় আদিবাসী নারীরা স্বাভাবিকভাবেই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আদিবাসী নারীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারেKapeeng Foundation Roundatable discussionর সদিচ্ছার প্রয়োজন।

ব্যরিস্টার সারা হোসেন বলেন, সামগ্রিক ভাবে নারী অধিকারের বিষয়গুলোকেই সরকার আমলে নিচ্ছে না।আদিবাসী নারীদের বিষয়ত বাদেই থেকে যাচ্ছে বরাবর। এমনকি সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও আদিবাসী নারী সংগঠন গুলোকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দূর্গম পাহাড়ী এলাকার নারীরা প্রতিকূল পরিবেশ এবং ভাষাগত কারনে ভিকটিম সার্পোট সেন্টার বা আইন সহায়তা কেন্দ্রগুলোর সাহায্য নিতে পারছে না। ‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়’ এই শ্লোগানে তখনই সার্থক হবে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আদিবাসীরাও সামনে এগিয়ে যাবে।
রানী ইয়েন ইয়েন বলেন, পিছনে যারা পড়ে রয়েছে তাদের নিয়ে কার্যক্রম গ্রহন করতে হবে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরা বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। সরকারি পরিকল্পনা পত্রের মধ্যে আদিবাসী নারীদের অর্ন্তভূক্তি করা না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অনবদ্য বিষয়টি বাদ থেকে যাবে। মূলত: আদিবাসীদের গোষ্ঠীগত অধিকার নিশ্চিত করা না হলে আদিবাসীদের মানবাধিকার কখনও নিশ্চিত করা যাবে না। সরকারের ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও শুধু কাগজের পাতায় পড়ে থাকলে উন্নয়ন হবে না। সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সেই সাথে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিষয়টিও সরকারের আমলে নেওয়া উচিত। আদিবাসীরা মনে করে সরকার চুক্তির শর্তগুলি ইতিমধ্যেই ভেঙ্গেছে।

সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্তিকরণ বাদ থাকার কারণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্তিকরণ আদিবাসীদের উন্নয়নে আশার সঞ্চার করেছে। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন কৌশলপত্র ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে আদিবাসী এবং আদিবাসী নারীরা আজও অদৃশ্যমান। যদিও সরকার আর্ন্তজাতিকভাবে বিভিন্ন ফোরামে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন দেশে আদিবাসীরা দেখতে পায় না। প্রবন্ধকার ফাল্গুনী ত্রিপুরা মূল প্রবন্ধে আদিবাসী নারীদের উন্নয়নের জন্যে সরকারের নিকট ১০ টি সুপারিশ প্রদান করেন যার মাধ্যমে আদিবাসী নারীরা মূলস্্েরাতের সাথে উন্নয়নের ধারায় আসতে পারবে।