Published in মানবজমিন on 31 August 2020
এই মুহুর্তে দেশে প্রতি চারজনে একজন যুবক বেকার এবং প্রতি তিনজনে একজন শিক্ষিত যুবক বেকার। অর্থাৎ যে যতো শিক্ষিত সে ততো বেকার থাকছে। এই সময়ে দেশের যুবসমাজ একটা অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে পড়েছে। কারণ আগেই তাদের কর্মসংস্থানের বাজার অনেক দুর্বল ছিলো এখন করোনার অতিমারির পরে কি হবে আমরা জানি না। আমি খুবই জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করছি বারবার, যে এই যুবসমাজের জন্য একটি অবশ্যই বেকার ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি এদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা না করি তাহলে বাংলাদেশে গত ১০ বছরে সরকারের যে বড় অর্জন সেটি দুর্বল হয়ে যাবে। এজন্য কমংসংস্থান একটি বড় বিষয়। এদিকে মনোযোগ দেয়া খুবই জরুরি।
গতরাতে মানবজমিনের ‘না বলা কথা’ ১৯তম পর্বে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। আলতাফ হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি মানবজমিনের ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয়।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শুধু মাত্র প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করা এটা প্রাগৈতিহাসিক ধারণা। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হলেই যে সবার উপকার হয় তা নয়। অর্থনীতিবিদরা প্রবৃদ্ধি নির্ভর অর্থনীতি বহু আগে ফেলে দিয়েছে। এখানে আবার মৌলিক চাহিদার কথা এসেছে। এরপর আমরা সাম্প্রতিককালে মানব উন্নয়ন সূচকের ভেতর গেছি, সেখানে শুধু মাত্র আয় নয় সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয় এসেছে। এরপর এখনতো আমরা বৈশ্যিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে গেছি যেটাকে আমরা এসডিজি বলি।
সেখানে শুধু মাত্র শিক্ষা, কর্মসংস্থান নয় সেখানে নাগরিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, সমাবেশের অধিকার, আইনের শাসনসহ ইত্যাদি বিষয় এখন চলে এসেছে। সেখানে প্রবৃদ্ধি দিয়ে উন্নয়নকে বোঝানো এটা একমাত্র প্রাগৈতিহাসিক অর্ধ শিক্ষিত এবং সংকীর্ণ চিন্তার ফলাফল। আসলে আপনার চিন্তা করতে হবে সাধারণ মানুষের তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ তারা দিতে পারছে কি-না। একটা গুনমান সম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারছে কি-না, স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছে কি-না, নিরাপত্তা দিতে পারছে কি-না, কথা বলার অধিকার দিতে পারছে কি-না। এই প্রবৃদ্ধির যে পরিমিতি এতে যে গড়মিল আছে এটা আমরা পরিস্কার করেছি। এটার সঙ্গে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের কোন মিল নাই, ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রবাহের মিল নাই, এটার সঙ্গে পুঁজিপতির আমদানির মিল নাই, কর্মসংস্থানের মিল নাই, শিল্প উৎপাদনের মিল নাই এগুলো আমরা পরিস্কারভাবে দেখেছি এর বৈপরীত্ব। প্রবৃদ্ধি নিয়ে এতো উচ্ছাস প্রকাশ করা ঠিক নয় এখানে টেকসই উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
দেশে টাকা পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে আইনের বরখেলাপ আছে নাকি প্রাতিষ্ঠানিক অসুবিধা । এই মুহুর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার নতুন আইন করছে এবং সাম্প্রতিককালে বাজেটে একদিকে কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দিয়েছে অন্যদিকে আবার জরিমানার পরিমানও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিরকম বৈপরীত্ব দেখেন- এক হাতে বলছে চুরি করো আরেক হাতে বলছে চুরির টাকা আমরা নিয়ে নেব। বিদেশে টাকা পাচারকারীদের নাম বিদেশী পত্রিকাসহ বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেল কিন্তু সরকারতো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দৃশ্যমান কোন পদক্ষে সরকারের নেই। আমার কথা হলো এটা এক সময় অর্থনীতির বিষয় ছিলো, এরপর এটি রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয় হয়েছে, এখন এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। এখন রাজনৈতিকভাবে যদি এর ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে এর কিছু হবে না। যেমনটি ক্যাসিনোকাণ্ডে হয়েছে। এটা নির্ভর করে সরকারের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার ওপর। সেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, করোনা আমাদের উলঙ্গভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে আমরা গত এক দশক ধরে যা বলে আসছি তা সঠিক ছিলো। আমরা বলেছি, আমরা একটি মধ্য আয়ের দেশে আমরা যাচ্ছি, স্বল্পন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হচ্ছি। আর মাত্র আমার দেশজ আয়ের এক শতাংশ ব্যয় করা হবে স্বাস্থ্য খাতের জন্য, এটা কোন ভদ্র সমাজে হয়? আর আমরা এক শতাংশ দেব তার ২০-২৫ শতাংশ ব্যবহার করতে পারবো না এটা হতে পারে না। আর যেটা ব্যবহার করবো সেটার ১০ টাকার জিনিস হাজার টাকা দিয়ে কিনে এনে বলবো আমি হাজার টাকার কাজ করেছি। আসলে ১০ টাকার কাজ করেছি- কোন সভ্য সমাজে দুর্নীতির এই মাত্রা হতে পারে না। তিনি বলেন, তিনটি জিনিস আমরা বলেছি, আপনি টাকা কম দিচ্ছেন, দ্বিতীয়ত বাস্তবায়ন করতে পারছেন না এবং তৃতীয়ত যা করছেন তার ভেতরে দুর্নীতি অনেক আছে। এই বিষয়গুলো আপনি করোনা পরিস্থিতিতে উৎকোটভাবে দেখছেন। কি দেখলেন? আপনি জাল সার্টিফিকেট দেন, পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই, যার ফলে পুরো বিদেশে আমাদের বদনাম হয়ে গেছে।
পুরো আলোচনা দেখতে এখানে ক্লিক করুন।