টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০-এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে অংশগ্রহণমূলক করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যুব সমাজকে এসডিজি বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার গৃহীত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসমূহে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। একইসাথে, যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ এবং ২০২০ সালে দুইটি ভলান্ট্রি ন্যাশানাল রিভিউ (ভিএনআর) রিপোর্ট প্রস্তুতকালে যুব সংগঠন ও যুব প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেছিল। কিন্তু তাদের মতামত ও পরামর্শসমূহ সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। এছাড়াও, এই প্রক্রিয়ার সাথে গ্রামীণ ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যুবরা অন্তর্ভূক্ত ছিল না। সুতরাং এটি অনস্বীকার্য যে, জাতীয় এবং বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের যুব সমাজের কার্যকর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা আছে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। এই প্রক্ষিতে, বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান যুবদের দ্বারা স্থানীয় পর্যায়ে এসিডিজি বাস্তবায়ণের মূল্যায়ন শুরু করে। যার মাধ্যমে এসডিজি’র আকাঙ্খার সাথে স্থানীয় পর্যায়ের যুব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সংশ্লেষ ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। এ উদ্যোগের অভিজ্ঞতা এবং বিস্তারিত আলোচনার জন্য এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর আয়োজনে এবং একশনএইড বাংলাদেশ-এর সহযোগীতায় “এসডিজি বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা: স্থানীয় প্রেক্ষিত ও যুব সমাজ” শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করা হয় রবিবার ২৩ মে ২০২১ তারিখে।
সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের গবেষক নাজীবা আলতাফ। তিনি বলেন, শুধু কর্মভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ না করে, সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যুব-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং যুবদের অধিকার সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচীরও উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ। শুধুমাত্র পরোক্ষভাবে পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়া নয়, যুবদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি জবাবদিহি প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট এসডিজি সম্পর্কিত এবং যুব-ভিত্তিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ।
সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ আজহারুল ইসলাম খান, (অতিরিক্ত সচিব), মহাপরিচালক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। তিনি বলেন এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এসডিজি’র জবাবদিহিতা এবং যুবকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মোঃ রাশেদুল ইসলাম, মহাপরিচালক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংলাপে আরেকজন সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মন্তব্য করেন যে, যুব প্রশিক্ষণগুলোর যথাযথ প্রতিবেদন এবং প্রভাব বিশ্লেষণের অভাব রয়েছে, তাই একশনএইড এবং নাগরিকের প্ল্যাটফর্মের মত অন্যান্য সংস্থাকে সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার বিষয়ে তিনি গুরুত্ত্বারোপ করেন।
সংলাপে সম্মানিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. রমিজ উদ্দিন, হেড অফ এক্সপেরিমেন্টেশন, অ্যাাকসেলারেটর ল্যাব, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি), বাংলাদেশ; মাহমুদ হাসান, প্রজেক্ট অফিসার, গভর্নেস ক্লাস্টার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি), বাংলাদেশ; নাজমুল আহসান, ম্যানেজার, একশনএইড বাংলাদেশ; অমিয় প্রাপন চক্রবর্ত্তী (অর্ক), সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী পরিচালক, ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডিওয়াইডিএফ); বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)-এর প্রেসিডেন্ট এজাজ আহমেদ এবং শামীম আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ফর সাস্টেনিবিলিটি (ইয়েস), বাংলাদেশ।
এসডিজি বাস্তবায়নে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রধান লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন ফারাহ কবির, কান্ট্রি ডিরেক্টর, একশনএইড বাংলাদেশ। তিনি সংলাপে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন। ২০১৭ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশ ভিএনআর-এ এসডিজি বাস্তবায়নের প্রগতি তুলে ধরলেও পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী ও যুব সমাজকে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই অতিমারির কারণে পিছিয়ে পরা যুবদের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করা দরকার।
সমাপনী বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আহ্বায়ক, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ বলেন যে, যুব কণ্ঠস্বরকে জোরালো করার জন্য কাজ করতে হবে। তিনি স্থানীয়ভাবে যুবকদের ক্ষমতায়ন করার ক্ষেত্রে তথ্য ও উপাত্তের প্রয়োজনীয়তা উপর জোর দিয়েছেন। যুবদের সংখ্যা বাড়ালেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে তাদের অংশগ্রহণ এখনো সেভাবে বাড়ানো যায়নি।
সংলাপটি সঞ্চালনা করেন অভ্র ভট্টাচার্য, যুগ্ম পরিচালক, সংলাপ এবং প্রচার, সিপিডি।
সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন যুব সংগঠন, যুব প্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন–এই ভার্চুয়াল সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত ও মন্তব্য তুলে ধরবেন। এছাড়াও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ এনজিও প্রতিনিধি, সমাজকর্মী, পেশাজীবি এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।