৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সিডও দিবস। উক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বিকাল ৩:৩০ মিনিটে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খানম মিলনায়তনে‘‘নারীর মানবাধিকার দলিল সিডও: অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা  নিশ্চিতে করণীয়’’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার, এনডিসি। সভায় বক্তব্য রাখেন ইউএন উইমেন এর উইমেন্স ইকোনমিক ইমপাওয়ারমেন্টের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তপতী সাহা। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অন্যতম সহ-সভাপতি ডা.ফওজিয়া মোসলেম। সভায় প্রস্তাব পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন  সংগঠনের আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা। সভাটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসী ডিরেক্টর জনা গোস্বামী

সভায় কেন্দ্রীয় কমিটি এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, দীর্ঘ দিনের নারী আন্দোলনের  নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার এক মাইল ফলক অর্জন জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর মানবাধিকার সনদ ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ’ সংক্রান্ত সনদ-সিডও। পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষে সিডও সনদে নারীর জীবনের সার্বিক দিক নিয়ে কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ বছর সিডও দিবসে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুরক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সিডও সনদের বিভিন্ন ধারার বাস্তবায়নের উপর গুরূত্ব আরোপ করেছে।

সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা ‘স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা’ (এসডিজি) পূরণ যে ঘনিষ্ট সম্পর্কযুক্ত-এটি বক্তাদের আলোচনার মধ্য থেকে উঠে  এসেছে। বলা হয়েছে, স্থায়িত্বশীল বা টেঁকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জেন্ডার সমতা অর্জনে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন অপরিহার্য পূর্ব শর্ত।

নারীদের জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে মানসম্পন্ন কাজের সুযোগ আরো প্রসারিত করার, দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সম্ভাবনা চিহ্নিত করার, নারীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার এবং অভিবাসন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে নারীদের প্রতারণা, বৈষম্য আর সহিংসতার শিকার হওয়া থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সভায় দাবি জানানো হয়েছে।

আলোচনায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে একদিকে বাংলাদেশ সরকার সিডও সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে নারীর পূর্ণ মানবাধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষে সকল প্রকার বৈষম্যমুক্ত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকারে আবদ্ধ। অন্যদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য মাত্রা পূরণের দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ।

কাজেই সিডও সনদের ধারা ২ এবং ১৬.১ (গ) থেকে সরকারের সংরক্ষণ প্রত্যাহারসহ কর্মসংস্থান ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ধারা ১১, নারীদের জন্য আর্থিক সুবিধাদি সংশ্লিষ্ট ধারা ১৩, নারীরর মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সংশ্লিষ্ট ধারা ৩ এবং নারী-পুরুষের প্রচলিত ভূমিকা ও কর্মকান্ডভিত্তিক নেতিবাচক সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ধারা ৫-এর বাস্তবায়ন অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অত্যাবশ্যকীয়। ঠিক একইভাবে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সার্বিক অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রার জেন্ডার সমতা বিষয়ক  ৫নং লক্ষ্য, সুস্বাস্থ্য ও কল্যান বিষয়ক ৩নং লক্ষ্য, সবার জন্য উন্নত মানের কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিষয়ক ৮নং লক্ষ্য, বৈষম্য হ্রাসকরণ বিষয়ক ১০ নং লক্ষ্য এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য অংশিদারিত্ব বিষয়ক ১৭ নং লক্ষ্য পূরণও অপরিহার্য। সভায় গুরূত্বের সাথে বলা হয় যে এর জন্য প্রয়োজন বৈদেশিক কর্মসংস্থান, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকার, নারী আন্দোলন এবং নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ।

সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার নেত্রী ও সংগঠক, বিভিন্ন সংগঠন থেকে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সাংবাদিক সহ মোট  ১১০ জন উপস্থিত ছিলেন ।