‘ইম্প্রুভিং ইনডিজিনাস পিপলস একসেস টু জাস্টিস এন্ড ডেভেলেপমেন্ট থ্রু কমিউনিটি বেসড মনিটরিং’ প্রকল্পের দুইদিনব্যাপী জাতীয় পরিচিতিমূলক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আজ ২৬ মার্চ ২০১৭ তারিখ সকাল ১০টায় ওয়াইডব্লিউসিএ কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করে মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন ও আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা।
কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা এর সভাপতিত্বে এই কর্মশালার উদ্বোধনীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত অতিরিক্ত সচিব মানিক লাল বনিক। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক ও সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য এবং প্রকল্পের পরিচিতমূলক সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি আলেক্সসিউস চিছাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানিক লাল বনিক বলেন, আদিবাসীদের জন্য আদিবাসী নেভিগেটর প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন উদ্যোগ। বাংলাদেশ সরকারের শান্তি চুক্তির পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশনের কার্যক্রম সরকারের সদিচ্ছারই একটি ফসল। আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য সরকার ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আদিবাসীদের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের বিষয়গুলোকে অর্ন্তভূক্ত করেছেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আদিবাসীদের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে সব সময় সুনির্দিষ্ট ও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। সরকারের তথ্যসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলোতে সঠিকভাবে এই বিষয় সমূহের তথ্যের পর্যাপ্ততা থাকবে তখনই যখন আদিবাসীরা নিজে থেকেই এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করবে। এ জন্যই কাপেং ফাউন্ডেশন ও আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থার নতুন এই প্রকল্পটি স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে আদিবাসীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ সহায়ক হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সংগ্রামের ভাষাকে মূল জন¯্রােতের উন্নয়নের ধারায় অর্ন্তভূক্ত করার জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আদিবাসী বা ইন্ডিজিনাস নেভিগেটরের এই প্রকল্পটির মাধ্যমে আদিবাসীরা উপকার পাবে যদি আদিবাসীরা দেশের প্রকৃত উন্নয়নের রুপান্তরের প্রকৃয়ায় শামিল হন। তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসীদের সুনিদিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালায় আদিবাসীরা সেগুলোকে অর্ন্তভূক্ত করতে পারবে। সরকারের বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের জরিপের সাথে প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য উপাত্তের সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে আদিবাসী বিষয়ে তথ্যের এই সংমিশ্রন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবে।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, বাংলাদেশের আদিবাসীরা গত ১০ বছরে কতটুকু জমি হারিয়েছেন এর সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। আদিবাসীদের কাছেও সুনির্দিষ্টভাবে নেই। কতজন আদিবাসী গত ১০ বছরে দেশান্তরিত হয়েছে এ পরিসংখ্যান সরকার ও আদিবাসীদের অজানা। তাই আদিবাসীদের বিচ্ছিন্ন এই তথ্যগুলোকে নিয়ে আদিবাসী নেভিগেটরের এ প্রকল্প আদিবাসীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং জাতীয় নীতিমালা গ্রহনে আদিবাসী এবং সরকারের জন্যে সহায়ক হবে।
পরিচিতিমূলক কর্মশালার উদ্বোধণী বক্তব্যে আলেক্সসিউস চিছাম বলেন: এই প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসীরা আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকারের মধ্যে নিজেদেরকে কিভাবে আরো বেশি অর্ন্তভূক্ত করতে পারবে সে বিষয়ে কাজ করবে। বিশেষ করে স্থানীয়, জাতীয় ও বিশ্বব্যপী এসডিজি পর্যবেক্ষণে তথ্য দিয়ে অবদান রাখা এবং আদিবাসী জনগণ পিছনে পড়ে রয়েছে কি না তা নিরীক্ষণের মাধ্যমে তুলনামুলক তথ্য তৈরীতে আদিবাসীদেরকে সাহায্য করবে প্রকল্পটি। আদিবাসীরা সংগ্রহিত তথ্যের মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারবে এবং নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও নিজ নিজ দেশের সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবে। ‘কেউ বাদ যাবে না’ এসডিজির এই শ্লোগানের সহিত আর্ন্তজাতিক মানবাধিকারের মূল সনদ এবং বিশ্ব আদিবাসী সম্মেলনের সব বিষয়গুলোকে অর্ন্তভূক্ত করেই এ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পাদন করা হবে। উক্ত প্রকল্পটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় ৩ বছর মেয়াদী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের আদিবাসীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের কাজ করবে।