উপস্থাপনা

অতিমারির সময়কালে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। তাদের জন্য সরকার প্রণোদনার ব্যাবস্থা করলেও তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক কাগজপত্রেরর অভাবে প্রবাসীরা ঋণের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। অনেকক্ষেত্রে তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে ব্যাংকও ঋণ দিতে দ্বিধান্বিত থাকছে। বেশকিছু সংখ্যক প্রবাসী ছুটিতে দেশে আসার পরে লকডাউনের কারণে এখন আর কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারছেনা। যার ফলে তাদের জীবনযাত্রায় তার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদিও বর্তমানে দেশের বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে বেশ ভালো  প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিন্তু দেশে ফিরে আসা এই প্রবাসীরা নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্যদিকে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত দুই শতাংশ প্রণোদনা কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে টাকা পাঠানোর হার বেড়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।

এ সকল মন্তব্য উঠে আসে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত “সাম্প্রতিক রেমিটেন্স প্রবাহঃ এত টাকাআসছে কোথা থেকে’? শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে। সংলাপটি রবিবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২১ অনুষ্ঠানটি হয়।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে দেশে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেলেও ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখা কষ্টকর হবে। তিনি আর বলেন, যারা দেশে ফেরত এসেছেন বা আসতে বাধয হয়েছেন তারা অনেকেই সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আসছেন না। এ বিষয়ে তিনি সকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানত বিহীন ঋণের খবর সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার উপরে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বর্তমান প্রবাসী আয়ের এই প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করার ক্ষেত্রে সবাইকে পরামর্শ দেবার জন্য অনুরোধ করেন।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হারের জন্য দরিদ্র্য পরিবারের যে উন্নয়ন হচ্ছে এটা ভাবা সঠিক হবে না। কেননা এই প্রবাসী আয়ের ৫০ শতাংশের উপরে আসে দারিদ্র্য সীমার উপরের মানুষদের থেকে। হুন্ডি ব্যাবসার প্রকোপ কমা, হজ্বের জন্য জমানো টাকা দেশে পাঠানো সহ অন্যান্য বিষয় এই বৃদ্ধির কারোন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীরা এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। তাদের বলেন, সরকারের দুই শতাংশ প্রণোদনা বর্তমানের এই প্রাবসী আয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তারা ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসুবিধার কথাগুলো তুলে ধরেন এবং অতিসত্বর এই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ সুবিধার তথ্য অনেকেই পাননি বলে জানান। এছাড়াও অনেকেই কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন।

সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস (এনআরবি) সভাপতি জনাব এম এস সেকিল চৌধুরী জানান, বিদেশে অবস্থারত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলির কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোর উপরে জোর দেন। এছাড়াও যারা দেশে ফেরত আসছেন তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করা জরুরী।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, নারী প্রাবাসীরা অধিক পরিমাণে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন কারণ কোভিডের কারণে তাদের চাকরি হারানোর হার কম ছিল।

জনাব শরিফুল ইসলাম হাসান, ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান জানান- যারা ফেরত এসেছেন তাদের কাজ প্রয়োজন। জনাব সৈয়দ সাইফুল হক, চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ফর রাইটস অব বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টসের (ওয়ারবি) বলেন, যে ক্ষেত্রে থেকে কোনো বিনিয়োগ ছাড়া অর্থ আসছে সে ক্ষেত্রে আরো বেশি নজর দেওয়া দরকার। তিনি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে যে প্রণোদনা রয়েছে তা বৃদ্ধি করে পাঁচ শতাংশ করার পক্ষে তার মতামত তুলে ধরেন। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, বলেন দুই শতাংশ প্রণোদনা আর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য রেমিট্যান্স অনেক শতাংশই বৃদ্ধি পেয়েছে।

ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, কাতারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস’র শ্রম কাউন্সিলর বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রাবসীদের জন্য সবসময় কাজ করছেন এবং তাদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে যেনো কোনধরনের সমস্যা না হয় সে বিষয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং অভিবাসী বিশেষজ্ঞ জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বিদেশে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে তৎপরতা বৃদ্ধির কথা বলেন। সৌদি আররে অবস্থারত একজন ব্যবসায়ী জনাব তাজাম্মুল ইসলাম চৌধুরী বক্তব্য প্রদান করেন।

ড. রেহমান সোবহান, চেয়ারম্যান, সিপিডি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই প্রবাসীদের অবস্থার ক্ষেত্রে টেকসই কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি। তাই নীতি নির্ধারকদের এ নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

সংলাপে প্রধান অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সাংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি, তার বক্তব্যে বলেন, বিদেশ থেকে ফেরত আসা এই মানুষগুলোর পূর্নবাসনের সঠিক ব্যাবস্থা করতে হবে, এছাড়াও প্রণোদনা আরো বৃদ্ধি করা যায় বলেও তিনি মনে করেন। কোভিড টিকা পাবার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মতামত প্রকাশ করেন।