“১০ কাঠায় রসুন আর একটু জমিতে গমের আবাদ করেছি। যে সময় যেই আবাদ আসে, সেগুলো চাষবাস করে সংসার চালাই। চাষবাস করতে কত সমস্যায় যে পড়ি, কেউ একটু আগায় আসে না। সরকারি কোনো কিছু দেয় না, একটু পরামর্শ চেয়েও পাই না।” এভাবেই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন নাটোর সদর উপজেলার চন্দ্রকলা এলাকার সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দা কৃষক, আপন উড়াও।
বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ। এই বিশ্বায়নের যুগে প্রতিনিয়ত মানুষ তার জীবন মান উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সেই সংগ্রাম করার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ স্বাচ্ছন্দে জীবনধারণ এবং সমাজে নিজেকে সম্মানজনক স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মতো যুব সমাজের কিছু নিজস্ব মতামত রয়েছে।
প্রকৃতি তার নিজস্ব খেয়ালে সৃষ্টি করলেও, পরিবার বা সমাজ আপন করেনি কখনও। নিজ ঘরে মেলেনি আশ্রয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা’র মতো মৌলিক পাঁচটি চাহিদাগুল ঠিকঠাক না পেয়েে চলছে তাদের জীবন। তৃতীয় লিঙ্গের হলেও নারী কিংবা পুুরুষ পরিচয়ে ভবলীলা সাঙ্গ হয়, জন্মই যেন তাদের আজন্ম পাপ। গল্পটি যশোরের হিজড়া জনগোষ্ঠীর।
কিংবদন্তি বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্রের ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের পূণ্যভূমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের আদিবাসী অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রাম কার্তিকপুর, বাসুগ্রাম, জমিনকমিন, লইলাপাড়া, ধরইল শ্যামপুর। এই গ্রামগুলো ঘুরলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বাংলাদেশের মিল খুঁজে পাওয়া কিছুটা কঠিন।
শতবছর পূর্বে কক্সবাজারে বসতি গড়া রাখাইনদের অনেকেই শামিল হয়েছেন বাঙালি মূল শ্রোতধারায়। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে নারী সদস্য মনোনীত হওয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখাইনরা আসিন হয়েছেন। তবে সময়ের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠী আবারও বাঙালি মূল শ্রোতধারায় ফিরতে সরকারের নানা স্বীকৃতি চায় ।
অজয়, গুনগুন ও টিটলী। হরিজন সম্প্রদায়ের এই তিন ভাইবোন উচ্চশিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকরি করতে চায়। একই স্বপ্ন দেখে তুরামনি-তুর্জয়রাও। একজন হতে চায় চিকিৎসক, অন্যজন শিক্ষক। পরিচ্ছন্নকর্মী কাজল তার কন্যাকে বানাতে চান আইনজীবী। নবম শ্রেণী পড়ুয়া দুর্জয়ের স্বপ্ন হল সুন্দর পরিবেশ, একটি খেলার মাঠ।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কাপাসডাঙ্গা এলাকার অন্তর্গত কৈগরদাসকাঠি চরে সহস্রাধিক মানুষের বাস। রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোলঘেষা চরের বাসিন্দাদের বেশিরভাগের না আছে স্থায়ী কোনো আবাস, না আছে কর্মসংস্থান। সম্প্রতি চরে সরকারি ৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
বেদেরা মূলত ঐতিহ্যগতভাবেই নদীতে ‘জল যাযাবর’ বা ‘নদী যাযাবর’ হিসেবেই বসবাস করে আসছিল। বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা জীবিকার তাগিদে শহর কিংবা গ্রাম-গঞ্জে ২০ টাকা প্রতি ধর্ম শিঙা আর ১৫ টাকা প্রতি ক্যাচা শিঙা টেনে ও জাদুটোনা দেখিয়ে আয় করে থাকেন। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হলে পুরুষরা সাপের বিভিন্ন খেলা দেখান হাটে-বাজারে।
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম যৌনপল্লি হিসেবে খ্যাত রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লি। ১৯৮৮ সালে গড়ে ওঠা দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বসবাস প্রায় ৫ হাজার মানুষের। এর মাঝে যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০। এ ছাড়া পল্লির শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬০০।
সিলেটের চা-শ্রমিকরা যেন সেই সাদাকালোর ছন্দহীন জীবনেই বাস করছেন এখনো! নেই যুগের সাথে তাল মেলানো মজুরী, নেই পর্যাপ্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা, নেই চোখে পড়ার মতো স্যানিটেশন ব্যবস্থা, নেই নারী-শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তাও। এ যেন আলোর যুগে এক অন্ধকারের বসতি।
