সবার প্রস্তুতি সমান নয়, সরকারি অনুদানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে

করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে গতবছরের মার্চ মাস থেকে প্রায় এক বছর বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল। শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষ স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে মতামতা দিলেও, তারা মনে করেন, স্কুল খুলে দিলে সংক্রমণের হার বেড়ে যেতে পারে। শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে প্রনীত গাইডলাইন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আর্থিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমান ভাবে প্রস্তুত নয়। স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা অনুযায়ী সুরক্ষা নিশ্চিত করার অতিরিক্ত ব্যয়ভার পূরণ করতে সরকারি অনুদানের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে।

এ সকল তথ্য উঠে আসে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত “অবশেষে স্কুল খুলছে: আমরা কতখানি প্রস্তুত?” শীর্ষক সংলাপে। সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে যেখানে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের “নাগরিক প্ল্যাটফর্ম অনলাইন জরিপ ২০২১ (ফেব্রুয়ারি ২০২১)” শীর্ষক অনলাইন জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য

১,৯৬০ জনের অংশগ্রহণে এই অনলাইন জরিপের ফলাফলে উঠে আসে যে, ৫৪.৭% অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করছেন না। অন্যদিকে, ৬৮% শিক্ষক স্কুলে যেতে নিরাপদ বোধ করছেন বলে মতামত প্রকাশ করেন এই জরিপের মাধ্যমে। ৬৭% অভিভাবক সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত ফি প্রদানে আগ্রহী নন এবং ৬৮.৮% শিক্ষক অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহনে সরকারি অনুদানের কথা উল্লেখ করেন। ৫০.৭% অভিভাবক মনে করেন তাদের সন্তানের স্কুল, স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা মেনে চলতে সক্ষম না, যদিও ৬৮% শিক্ষক মনে করেন তাদের স্কুলের স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা নিশ্চিত করার সামর্থ্য রয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী অন্যান্যদের মধ্যে ৬০.৫% অংশগ্রহনকারী মনে করেন স্কুল খোলা উচিৎ, যদিও ৫২.২% অংশগ্রহনকারী মনে করেন এতে সংক্রমন বাড়ার আশংকা রয়েছে।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, স্কুল খোলার পরিস্থিতি নিয়ে একটি মিশ্র চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন যে স্কুল খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সকলের প্রস্তুতি সমান নয়। আলোচনার সারসংক্ষেপ করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন- স্কুল বন্ধ থাকায় তথ্যপ্রযুক্তির অভিগম্যতায় বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের প্রস্তুতিতে পার্থক্যের পাশাপাশি শহর ও গ্রামের স্কুলের মাঝেও পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার ওপরেও জোর দেন তিনি। এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সরকারি পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সংলাপের প্রারম্ভিক বক্তা, এডুকেশন ওয়াচের মীখয গবেষক ড. মঞ্জুর আহমেদ প্রস্তাব করেন, সব বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে, শুধু কিছু মৌলিক বিষয়ে জোর দিয়ে স্কুল খোলা হলে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কম পরবে। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য রাশেদা কে চৌধূরী সংলাপের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মন্তব্য করেন যে, শিক্ষার্থীদের শুধু স্কুলে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এক্ষেত্রে সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক মনে করেন, স্বাস্থ্য-নির্দেশিকাগুলো বিশদ এবং স্কুলের ভেতর সকল নিয়মাবলী মেনে চলা কঠিন হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ একই মত প্রকাশ করে বলেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল খোলা যেতে পারে।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মোট ১৬টি জেলা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাবক এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।