বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিভিন্ন রূপে বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি নড়াইলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাথে এই ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষিতে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২ তারিখে “সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: নাগরিক প্রতিক্রিয়া” শীর্ষক একটি সভার আয়োজন করে। সভায় নাগরিক প্ল্যাটফর্মের নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ এবং আক্রান্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সরাসরি উপস্থিত থেকে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)’এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, গত অক্টোবরে এরকম একটি প্রতিবাদ সভার কিছুদিনের মধ্যেই যে আবারো এ ধরনের আরেকটি সভার আয়োজন করতে হচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি বলেন, সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর যে সহিংসতামূলক হামলা করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের সাথে সংহতি প্রকাশ এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করা এই নাগরিক প্রতিবাদ সভার অন্যতম উদ্দেশ্য।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সভার সভাপতিত্ব করেন। তিনি মনে করেন, সংখ্যালঘু বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। সবাই মানুষ, সবাই বাংলাদেশী- এটাই স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সবাইকে আমরা সম-অধিকার, সম-মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেখি- যেখানে কোন ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ব্যবধান নেই। সাম্প্রতিককালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো উদ্বেগজনক এবং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যে কোন বিষয়ে ধারাবাহিকতা না থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয় না,  তাই সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

নড়াইলে সহিংসতামূলক হামলার অন্যতম একজন শিকার হ্যামলেট সাহা প্রথমেই সেই অঞ্চলের মাননীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর আলোচনা আরম্ভ করেন। এছাড়াও সেই দুর্বিষহ সময়ে পাশে থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার জন্য তিনি স্থানীয় আরো কয়েকজন প্রতিবেশী ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মাঝে দেশ পরিত্যাগের কথা মাথায় আসলেও এ ধরনের মানুষদের জন্যই এখনো তারা স্বদেশে থাকার কথা ভাবতে পারছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে মিথ্যা পোস্টের ভিত্তিতেই ঘটনার সূত্রপাত বলে উল্লেখ করেন তিনি। অভিযুক্ত অশোক সাহাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পরপরই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অত্র এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীদের বাড়ি, দোকানগুলোতে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। শুভ-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় এ ধরনের সহিংসতামূলক হামলাগুলো আরো বেড়ে যায় বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, হামলায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নাকি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা তো কোন ক্ষতিপূরণ দাবী করেন নি! বরং, এ ঘটনায় তাদের হৃদয়ের যে ক্ষতি সাধন হয়েছে তা পূরণ করার দায়ভার কে নেবে? – এ প্রশ্ন করেন হ্যামলেট সাহা

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর সাবেক বিচারপতি (আপিল বিভাগ) জাস্টিস এম এ মতিন বলেন, আমাদের দেশের সংবিধানে ধর্ম নিরপক্ষেতার কথা বলা হলেও আসলেই কি তাই? আমরা ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পেরেছি কী? তিনি মহানবী (সঃ) এর নানান অসাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ ও বাণী আলোচনা করেন। জনাব মতিন অন্যান্য আলোচকগণের সাথে সহমত প্রকাশ করে বলেন যে ধর্ম মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার বা নাশকতার শিক্ষা দেয় না। আমাদের আগে প্রকৃত একজন মানুষ হতে হবে।

ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বলেন, ‘’বাংলাদেশ সকলের জন্য নিরাপদ’’ এই কথাটি বলার অধিকার আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কেননা, সংখ্যালঘুরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ধর্মের নামে লুণ্ঠন এটাই এখন এদেশের বাস্তবতা। ইসলাম ধর্মের উগ্রবাদী ব্যাখ্যা অনেক মানুষের মনোজপগতে স্থান করে নিয়েছে। অথচ, কোন ধর্মই অন্য ধর্মের কারো প্রতি সহিংস হতে বলে না। আমাদের এক সময়ের সেই উদার-মানবিক সমাজের কিভাবে যেন আজ পদস্খলিত হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি হতাশ, তবুও আশা ছাড়া বাঁচেন কি করে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতাগুলো দেখে বলা যায় এর রূপ সাম্প্রদায়িক হলেও, চরিত্রটা রাজনৈতিক। রাষ্ট্র ছোট থেক বড় হয়েছে, অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আবার অনেকেই এই উন্নয়নের দ্বারা নিষ্পেষিত হচ্ছে। এজন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। কোন একদলীয় নয়, সর্বদলীয় একটা আন্দোলন প্রয়োজন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব জনাব আলি ইমাম মজুমদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জেরে পূর্ববর্তী ও সাম্প্রিতিক সহিংসতামূলক ঘটনাগুলোর সঠিক কারণ অনুসন্ধান আজ সময়ের দাবী। প্রকৃত অর্থেই দায়ীরা কি আসলেই আইন ও বিচারের আওতায় এসেছে? সঠিকভাবে এগুলোর বিচার হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে।

বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব জনাব মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের একটি সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি দরকার। গত ৫০ বছরে নানাভাবে রাষ্ট্রকে, সমাজকে গ্রাস করেছে। সমাজের এই গভীর অসুখগুলো আজ বের হয়ে আসছে। যেখানে শিক্ষকের একমাত্র স্পৃশ্য অঙ্গ পা, সেখানে আজ আমরা শিক্ষকগণকে কোথায় দাঁড় করিয়েছি। জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এ হেন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে।

জনাব উষাতন তালুকদার বলেন, কোথায় যেন একটা শুভঙ্করের ফাঁকি থেকেই যাচ্ছে। প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষার সাথে নিযুক্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতেই এখন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। শুধু প্রতিবাদ করলেই হবে না বরং, এসব ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করতে হবে। গোটা দেশকে সরব হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব জনাব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক আজ নিজ দেশেই পরাধীন, নিজ বাসভূমে পরবাসী। বর্তমানে আমাদের সমাজ ব্যপকভাবে বিভাজিত হয়ে ভয়ঙ্কর একটি রূপ ধারন করেছে। সাম্প্রতিক ও পূর্ববর্তীতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতামূলক হামলার সাথে ১৯৭১ এর পাক-হানাদারদের অনাচার ও লুটপাটের মিল খুঁজে পান তিনি। প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের বাস্তব প্রয়োগ দাবী করেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে সরকারকে বিভিন্ন দ্বিধা থেকে বের হয়ে এসে তার অস্তিত্বকে জানান দিতে হবে। এটি এখন সামাজিক একটি আন্দোলন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মিজ শাহীন আনাম  বলেন, ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটিই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য অপমানজনক। নাগরিক সমাজের অবশ্যই এক্ষেত্রে একটা দায়িত্ব রয়েছে। যে কোন অনাকংক্ষিত ঘটনা ঘটার পরে পুলিশ আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ ধরনের পরিস্থিতি উদ্ভূত হওয়ার আগেই এর বিরুদ্ধে যেন তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। উক্ত ঘটনায় যে অজ্ঞাতনামা ১৫০০ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হলো, এই অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করে লাভটা আসলে কি সেটিও খতিয়ে দেখার একটা বিষয়। আবার, এ ধরনের ফেসবুক পোস্টগুলো যে মিথ্যা হয় তা জানার পরেও কিভাবে বারংবার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাও উদ্বেগের একটা বিষয়। এগুলোর পুনরাবৃত্তি এড়াতে রাষ্ট্রকে অবশ্যই এর দায়িত্ব নিতে হবে।

জনাব আসিফ ইব্রাহিম, সভাপতি, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ মনে করেন, দেশের নানান অর্থনৈতিক অর্জনের ফলেই আজ চারপাশে এত উন্নয়নের ছোঁয়া। তবে, সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে না পারলে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের সকল নাগরিকই সম-অধিকার সম্পন্ন বলে তিনি বিশ্বাস করেন এবং সবাইকে সাথে নিয়েই সামনে আরো এগিয়ে যেতে চান।

নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী প্রধান জনাব জাকির হোসেন বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এর জের ধরে গত ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সহিংসতামূলক মোট ৩৫৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং উল্লিখিত সময়ে উপাসনালয়ে হামলার সংখ্যা ১৬৭৮। এ সকল ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার অভাব অনেক বড় একটি সমস্যা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সমস্যাগুলোর সমাধান অনেক জটিল। আমাদের চারপাশে উন্নয়নের জোয়ার দেখতে পেলেও আমাদের সমাজ এক কথায় বেহাত হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক মননশীললতার সংহতি কিভাবে ঘটানো যায় সেটি চিন্তা করতে হবে।

রানী ইয়েন ইয়েন, চাকমা রানী এবং মানবাধিকার কর্মী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সবাই আমরা বাঙালি না। তবে এই সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। তিনি জানতে চান এখন পর্যন্ত কতজন সংখ্যালঘুর দ্বারা সংখ্যাগুরুদের ওপর হামলা করা হয়েছে? এ সকল ক্ষেত্রে আসলে ক্ষমতাই মুখ্য, ধর্ম নয়। তাই, আমাদের বল-প্রয়োগের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে ও আইনের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আমরা সম্পদ না বাঁচিয়ে সম্মান বাঁচাই। আমাদের নির্লিপ্ত থাকাও অনেকাংশে দায়ী বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য। অতীতে দেশের নানান প্রয়োজনে মাননীয় আদালতের ভূমিকা, বিভিন্ন কমিশন গঠন লক্ষ্য করা গেলেও এখন এমন উদ্যোগ খুব কমই দেখা যায়। যা চিন্তা করার মতোই একটি বিষয়।

একশনএইড বাংলাদেশ –এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মিজ ফারাহ কবির বলেন, আমরা রাষ্ট্রের জবাবদিহিতার কথা বলি আবার, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেরাই এর সাথে আপস করে ফেলি। এই সমাজ তো বহু আগে থেকেই নারী-শিশু-সংখ্যালঘুদের সাথে বৈষম্য করে আসছে। এক্ষেত্রে একটা সাধারণ মতাদর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। নিজেদের আত্মবিশ্বাস নিজেদেরকেই বাড়াতে হবে অসাম্প্রদায়িক কর্ম-কাণ্ডের পরিধি বিস্তৃতকরণের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু আত্মগ্লানি বোধ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের আসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে জন্ম নেয়া এই দেশে এ ধরনের সহিংসতামূলক ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি নিজের জন্যই লজ্জাজনক। তিনি মনে করেন এগুলো সবই রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল মাত্র। এ সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্র-সমাজ বরাবর-ই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে, যার সুযোগ নিচ্ছে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তিনি আক্ষেপ করে বলেন যে, যেখানে আমরা নিজেদের সংবিধানকেই রক্ষা করতে পারিনি, সেখানে একজন ব্যক্তি মানুষের অধিকার কে কিভাবে রক্ষা করতে পারি!

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী প্রধান অ্যাডভোকেট সাইদা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানুষের আস্থার জায়গায় ফাটল ধরেছে। একটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যদি পরপর দুইবার বিতর্কিত হয়ে যায়, এমনকি তৃতীয়বারও এমন আশঙ্কা করতে হয় তবে, সামাজিক নিরাপত্তার প্যারামিটারে আমাদের অবস্থান কোথায় সেটা নিয়ে ভাবনার জায়গা রয়েছে। যদি কোথাও কোনো জবাবদিহিতা না থাকে, তবে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের জবাবদিহিতা থাকবে, এটা ভাবার কোন কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, সরকার ব্যর্থ হলেও জনগণের ব্যর্থ হওয়া চলবে না।

প্রফেসর কাবেরী গায়েন বলেন, রাষ্ট্রের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরের কথা, আমরা এটাকে অন্তত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বলতে পারি না। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বিবেচনা করে বলা যায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং আইন প্রয়োগের অভাবের ফলে রাষ্ট্র কিছু ক্ষেত্রে মিথ্যাচার করছে, প্রকৃত সত্যকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তিনি আরও উল্লেখ করেন, একই প্রতিবাদ বারবার করতে হয় মানে প্রতিবাদগুলো কাজে আসছে না। ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ভুলে গিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা কিভাবে তৈরি করবো সেটি চিন্তা করার এখনই সময়।

ধ্রুবতারা যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন –এর সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী পরিচালক জনাব অর্ক চক্রবর্তী বলেন, নতুন প্রজন্মকে বিশেষ করে তরুণ সমাজকে এ সকল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর, কিছুদিন পরেই দূর্গা পূজা। তখনও যে এ ধরনের সহিংসতামূলক কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা তার ভরসা কে দেবে? – এর উত্তর আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জনাব কাজল দেবনাথ উলেখ করেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এ দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্রের সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সহিংসতামূলক ঘটনাগুলোর একটির সাথে আরেকটির মিল রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জনাব সঞ্জিব দ্রং বলেন, একটি রাষ্ট্রে বসবাসকারী অন্যান্যদের মত একজন সংখ্যালঘুর অধিকার রক্ষার দায়িত্বও সরকারের। রাষ্ট্রকে বোঝাতে হবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে তাদের ন্যায্য অধিকার না দেয়া হলে বিপুল সম্ভাবনার এই দেশ ধীরে-ধীরে হারাবে তার বৈচিত্র্যময় স্বকীয়তা। প্রস্তাবিত জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের ব্যপারেও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী মিজ পদ্মাবতী দেবনাথ জবাবদিহিতা ও আইনের বাস্তব প্রয়োগের অভাববোধ করে বলেন, রাষ্ট্রের প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের এ সকল ক্ষেত্রে দ্রুত ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ধরনের সহিংসতামূলক সাম্প্রদায়িকতার সাথে জড়িতদের খুব দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যেন, পরবর্তীতে এমন অনাকংক্ষিত ঘটনা আবার না ঘটে।

অনুষ্ঠানে আরো অনেক বিশিষ্ট নাগরিক উপস্থিত থেকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।