সরকারের সদিচ্ছা এবং অর্পিত সম্পত্তি আইনের সংশোধনী হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনের মনোভঙ্গির কারণে মাঠ পর্যায়ে আইনের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভার্চুয়াল সংলাপে অংশগ্রহণকারী বক্তারা। প্রান্তিক নারী, ধর্মীয়, জাতিগত এবং ভাষাগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে চিন্তায় এবং আচরণে পরিবর্তন আনার প্রতি গুরুত্ব দেন বক্তারা।

আজ ৩০ মে ২০২১ সকাল ১১ টায় “নারী এবং সংখ্যালঘুদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা”বিষয়ক একটি ভার্চুয়াল সংলাপ আয়োজিত হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ এ সংলাপটির আয়োজন করে। এতে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিলো বেসরকারি সংস্থা এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব সাইফুজ্জামান চৌধুরী, এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ তসলীমুল ইসলাম, এনডিসি, মহাপরিচালক (অতিঃ সচিব), ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর; অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; রানী ইয়েন ইয়েন, চাকমা রানী এবং বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী; এবং ড. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জনাব শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি। সভাপতিত্ব করেন খুশী কবির, সমন্বয়ক, নিজেরা করি। এবং সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আহ্বায়ক, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ।

এ সংলাপে নারী, আদিবাসী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় মূলত আইনী এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা তুলে ধরে মূল প্রবন্ধে বলা হয় যে নারী এবং কৃষকদের শ্রমে দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ হলেও তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নারীর ভূমি তথা উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড তৈরির দাবি তোলা হলেও এ বিষয়ে সরকারের আগ্রহ দৃশ্যমান নয়। এছাড়াও, প্রান্তিক আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি আইন ও নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়াকে দায়ী করেছেন। পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে ভূমি কমিশন গঠিত হলেও প্রয়োজনীয় লোকবল ও অর্থের অভাবে এবং বিধিমালা না হওয়ার কারণে কমিশন কাজ করতে পারছে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় আগ্রহের কারণে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনটি ৫ বার সংশোধন করা হয়। এছাড়াও, আদালতের রায় পাওয়ার পরও প্রশাসনের ইতিবাচক মানসিকতার অভাবে ভূক্তভোগীরা তাদের জমির মালিকানা ফেরত পাচ্ছে না। ‘খ’তফসিল বাতিল হওয়ার পরও ভূমি প্রশাসন থেকে নাম জারি হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের ৮ দফা নির্দেশনাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অর্পিত সম্পত্তিবিষয়ক অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য একটি মনিটরিং সেল খোলার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। সরকার যেহেতু এসডিজি পূরণে আন্তরিক, তাই এর মূলমন্ত্র অনুযায়ী পিছিয়ে থাকা সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে কার্যকর আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

সংলাপের প্রধান অতিথি মাননীয় ভূমিমন্ত্রী জনাব সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষিবান্ধব একজন মানুষ। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তিন ফসলা জমি কোনোভাবেই কাউকে দিচ্ছি না। প্রয়োজনে আমরা দুই ফসলি কৃষিজমি সুরক্ষার ক্ষেত্রেও একই নীতি ব্যবহার করবো। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদান পূর্বেও ছিলো, ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীর উত্তরাধিকার নির্দিষ্ট আছে। হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দরা সম্মিলিতভাবে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও, তিনি বলেন যে ভূমিবিষয়ক মামলা, সহিংসতা, ও জটিলতা দূরিকরণে সরকার ভূমি দখলিস্বত্ত্ব আইন সংশোধনের কাজ করছে। এবং আগামী জুলাই মাস থেকে অনলাইনে ভূমির খাজনা পরিশোধ কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি খাসজমি উদ্ধার ও ভূমিহীনদের মাঝে তা বিতরণের বিষয়টি মনিটরিং করছে। ভূমিবিষয়ক তথ্যভান্ডারও খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এছাড়াও, এ সংলাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারের প্রতিনিধি জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সহকারি কমিশনার (ভূমি), নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ, মাঠপর্যায়ের নারী কৃষক অংশগ্রহণ করেছেন।

[/su_spoiler]