ঋতু

ঋতু কমিক বই এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে ঋতু সারা দেশের কিশোরী এবং তরুণীদের মাঝে বয়ঃসন্ধি এবং মাসিক নিয়ে সচেতনতা তৈরী করে। এই ওয়ার্কশপগুলো কিশোরীদের পাশাপাশি তাদের মা-বাবা, শিক্ষক, প্রতিবেশী এবং কমিউনিটির অন্যান্য মানুষ সবাইকে নিয়ে করা হয় কারণ পিরিয়ড নিয়ে লজ্জা ভাঙতে হলে মাসিক ও মাসিক হাইজিন ম্যানেজমেন্ট (এম এইচ এম) এর গুরুত্ব সবার মাঝে একসাথে ছড়িয়ে দেয়াতে বিশ্বাসী ঋতু। এছাড়া ঋতু  গাইনী ডাক্তার সেবা প্রদান করে এবং এক বছর ব্যবহারযোগ্য ঋতু রিইউজেবল স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করে।

কোভিড১৯ এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রোগ্রামেটিক হস্তক্ষেপ

কোভিড-১৯ গত দশ মাসে আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মানুষের কাজ, ব্যবসা বানিজ্য, দেশের অর্থনীতি সব লম্বা সময় বন্ধ থাকার কারণে সব কিছুতে স্থবিরতা চলে এসেছে। এই সংকট কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন দূরত্ব তৈরি করেছে আবার একে অন্যের জন্য পারস্পরিক নির্ভরতার উৎস হয়ে ওঠার উদাহরণটাও কিন্তু কম নয়। আমরা দেখেছি কিভাবে ডাক্তার, নার্স, ভলান্টিয়ার এবং অন্যান্যরা তাদের নিজেদের জীবনের তোয়াক্কা না করে কোভিডের সময় মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংকটের সময় আমরা তাই বার বার দেখেছি মানুষকে মানুষের জন্য এগিয়ে আসতে, সবাই মিলে সমস্যার সমাধান করতে।

ঋতুর বেশীরভাগ কার্যক্রমের টার্গেট পপুলেশন ছিল সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী এবং নারীরা তবে অন্যান্য আর্থ-সামাজিক পটভূমিতে অবস্থানরত নারীরাও ঋতুর কাছ থেকে বিভিন্ন সার্ভিস নিয়েছে যেমন – অনলাইন গাইনী সেবা, রিইউজেবল প্যাড নেয়া ইত্যাদি। গত ১০ মাসে ঋতু ৫০০০+ কিশোরী এবং নারীদের কাছে পৌছাতে পেরেছে তাদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে।

কি কি কাজ করা হয়েছে?

ঋতু এই দশ মাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজকর্ম করেছে যেমন-

১। ত্রাণ বিতরণ

২। ফ্রী প্যাড বিতরণ

৩। ফ্রী এডুকেশনাল ম্যাটেরিয়াল বিতরণ

৪। ফ্রী পিরিয়ড কনসালটেশন (টেলিমেডিসিন)

৫। অল্প খরচে জরুরী গাইণী সেবা (টেলিমেডিসিন)

৬। ডোনেশন তুলে বন্যাদুর্গত এলাকার (বগুড়া, ফরিদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা) মেয়ে এবং মহিলাদের জন্য  ঋতু রিইউজেবল স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেছে। এই প্রজেক্টে ঋতুকে সাপোর্ট করেছে জাস্ট পিপলস। ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনার হিসেবে ছিল আমাল ফাউন্ডেশন, ইয়েস বাংলা ফাউন্ডেশন এবং উইথ শী।

লিঙ্ক – https://www.youtube.com/watch?v=wQLvCZ88tao

৭। অনলাইনে বয়ঃসন্ধি, পিরিয়ড, পিরিয়ড ট্যাবুর বিরুদ্ধে এডভোকেসি করে গিয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, লাইভ সেশন ডিসকাশন, ভিডিও, ছবি ইত্যাদির মাধ্যমে।

৮। রেকর্ডেড সেশন, কুইজ, কন্টেস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক মাসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করেছিল ঋতু ২৭ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত। এই প্রজেক্টে ঋতুকে সাপোর্ট করেছে ই এম কে সেন্টার।

৯। অ্যামেরিকান কর্নার খুলনা এর ১০০+ ভলান্টিয়ারকে অনলাইনে এম এইচ এম ট্রেনিং প্রদান করেছে ঋতু।

১০।  ঋতুর সর্বশেষ কার্যক্রম ছিল ২৫ শে নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর। এই ১৬ দিন ঋতু করোনাকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপী  আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়া লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছে। এই ধরনের আক্রমণের মানসিক প্রভাব কত সুদুর প্রসারী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করেছে কিশোরীদের সাথে। তিনটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং বস্তি এলাকায় প্রায় ১৫০ জন কিশোরীদের সাথে তিনটি লাইভ সেশন এবং উপহার বিতরণ কার্যকম ছিল। ৮ – ১৬ বছরের মেয়েদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা কী, লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতাগুলো সনাক্তকরণ ও তাদের প্রকারভেদ, দৈনন্দিন জীবনে সহিংসতার অভিজ্ঞতা, করোনার মধ্যে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা এত বেশী হচ্ছে কেন, প্রতিহত করতে হলে কি করতে হবে এসব নিয়ে আলোচনা। এছাড়া করোনার সময় কিভাবে নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে, পিরিয়ডের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে বা স্যানিটারি প্যাড না থাকলে কিভাবে পিরিয়ডের রক্ত ম্যানেজ করতে হবে, ছোট কারো প্রথম পিরিয়ড হতে দেখলে কিভাবে তাদের সাথে পিরিয়ড স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে হবে এসব নিয়েও কিশোরীদের সাথে কথা হয়েছে এই সেশনগুলোতে। সেশনগুলো শুরুর আগে আমরা উপস্থিত সবার সাথে মাস্ক দিয়ে সঠিক সুরক্ষা নির্দেশিকা বজায় রেখে সেশন নিয়েছি। এই প্রজেক্টে ঋতুর সাপোর্টিং পার্টনার ছিল বি ডি ও এস এন, ই এম কে সেন্টার এবং ওয়ান্ডার ওমেন। তাদের সহায়তায় ঋতু ১৫০ জন কিশোরীদের মাঝে ঋতু কমিক বই এবং ঋতু রিইউজেবল স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেছে। ১০ ডিসেম্বর একটি ওয়েবিনারের মাধ্যমে ঋতুর ১৬ দিনের কার্যক্রম শেষ হয়। এই ওয়েবিনারের টপিক ছিল ‘নারীদের স্বাস্থ্যসেবা এবং পিরিয়ড ম্যানেজমেন্টে লিঙ্গ ভূমিকার প্রভাব’। বক্তারা ইউ এন এফ পি এ, সেরাক-বাংলাদেশ, বি এন পি এস, এয়ারকি.কম, এলা প্যাড থেকে জয়েন করেছিলেন। আমাদের দেশ এবং করোনার প্রেক্ষাপটে বক্তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। ওয়েবিনারটি দেখতে লিঙ্ক ভিজিট করুন।

লিঙ্ক –

১। ওয়েবিনার – https://www.youtube.com/watch?v=Jaj7fRXC8-U

২। https://www.youtube.com/watch?v=u-L8Cbm21uk&t=2s

 

প্রতিকূলতা

কাজ করতে যেয়ে অনেক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে ঋতুকে।

১। চাহিদার তুলনায় বিভিন্ন পণ্য বা সেবা সরবরাহ করতে না পারা ফান্ডের লিমিটেশন থাকার কারণে

২। কোভিড-১৯ এর লকডাউনের কারণে বেশীরভাগ প্রজেক্টে ফিল্ডে গিয়ে বেনিফিসিয়ারীদের সাথে সরাসরি কথা না বলতে পারা না তাদের কথা না শুনতে পারা।

৩। কোভিড-১৯ এর কারণে বেনিফিসিয়ারীদের কাছে প্রডাক্ট বা সেবা পৌছাতে ঝামেলা হয়েছে, খরচ বেশি লেগেছে এবং ভলান্টিয়ার পাওয়া যাচ্ছিল না।

৪। অনলাইনের মাধ্যমে ভলান্টিয়ারদের মনিটর করা চ্যালেঞ্জিং ছিল

ভবিষ্যত ভাবনা

কোভিড-১৯ প্যানডেমিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল, ছোট হোক বড় হোক যে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানই দরকারের সময় প্রযুক্তিগতভাবে অ্যাডাপ্টিভ হতে পারে। একদম ফিল্ড লেভেলের কাজ ছাড়া প্রায় সব ধরনের কাজই আমরা যে কোন জায়গা থেকে করতে পারি যদি কম্পিউটার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকে। এই প্র্যাক্টিস আমাদেরকে নিজেদের কাজ নিজে মনিটর করে আরও অ্যাাকাউন্ট্যাবেল হতে শিখিয়েছে। কিন্তু বাসা এবং কর্মক্ষেত্র একই জায়গায় হওয়ায় অনেক সময় বাসার কাজ এবং অফিসের কাজের মধ্যে টাইম ম্যানেজমেন্টে সমস্যা হয়েছে। অনেক বেশি সময় ঘরে থাকার কারণে মানসিক অবসাদ এবং অনেক বেশি মানসিক স্ট্রেস গিয়েছে আমাদের টীম মেম্বারদের মধ্যে।

কোভিড-১৯ বা এ ধরনের অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের দেশের বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই কোন ব্যবস্থা নেই। কিন্তু ২০২০ সালের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কিছু ব্যবস্থা করে রাখতে পারি। যেমন –

১। কমিউনিটি বেজড ক্লাবগুলোতে লোকাল ভলান্টিয়ারদের ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা রাখা যেন এমন ইমারজেন্সি অবস্থায় সবাই জানে কি করতে হবে

২। বস্তি, অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা বিভিন্ন লোকালিটির মানুষের আচার-ব্যবহার হঠাৎ করে পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই কিছুদিন পর পর সরকার বা বিভিন্ন এনজিওর বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের কমিউনিটি হিসেবে জড়িত রাখতে হবে। সরকার থেকে এ বিষয়ে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে ভাল হবে।

 

কোভিড-১৯ এর সময় ঋতুর কার্যক্রমের ডিটেইল ফেসবুক থেকে জানা যাবে

 https://www.facebook.com/WreetuBook/

 

প্রচারপত্র