মূল প্রতিবেদন ডাউনলোড করতে এইখানে ক্লিক করুন
কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সরকারের একটি গূরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হলেও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ এবং কারিগরিভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান অনুকূল করার ক্ষেত্রে এখনো আশানুরূপ পরিবর্তন হয়নি। কারিগরি শিক্ষার মান, দেশ ও বিশ্ববাজারের বাজারচাহিদা অনুযায়ী উপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরি, শিক্ষক সংকট, পাঠদানের মান, অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও ঘাটতি রয়ে গেছে।
বাংলাদেশে সরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সম্প্রতি পঞ্চগড়, সুনামগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলায় একটি সামাজিক নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
৩ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সুনামগঞ্জ-এ সিপিডির উদ্যোগে এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় ‘যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি নীতি সংলাপে এই সামজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও সংগ্রহকৃত সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হয়। আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি ও আহ্বায়ক, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম সংলাপের সভাপতির বক্তব্যে মানসম্মত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন বাংলাদেশ গড়তে জবাবদিহিতা, সহযোগীতা এবং গনতান্ত্রিকতার জাগরণকে ধরে রাখতে হবে”।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান। সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে তিনি বলেন, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। বাজার চাহিদার সাথে কারিগরি পাঠ্যক্রমের সমন্বয় করা প্রয়োজন। তিনি কারিগরি শিক্ষার চ্যালেঞ্জসমূহ উল্লেখ করে বহির্বিশ্বে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা এবং সুনামগঞ্জে দক্ষ অভিবাসীকর্মী প্রেরণ সম্পর্কেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নীতিসহায়ক সুপারিশে তিনি পাঠ্যক্রমের উন্নয়ন, শিক্ষা দক্ষতা মূল্যায়ন, কর্মসংস্থান সহায়তার সম্প্রসারণের উপর আলোকপাত করেন।
সংলাপে সম্মানিত অতিথি ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ, জেলার মৎস এবং কৃষিখাতের বিপুল সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে শিল্পাঞ্চলভিত্তিক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রচলনের প্রতি গুরুত্বআরোপ করেন।
সুনামগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের চীফ ইন্সট্রাক্টর ও অধ্যক্ষ জনাব মোঃ আজিজুল সিকদার বলেন, স্থানীয়ভাবে শিল্পায়ন না হওয়ায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জেলায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। পুরাতন পাঠ্যক্রম পূনর্মূল্যায়ন করে চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
জনাব এম এন এম আসিফ, উপব্যবস্থাপক, জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বলেন, শিল্প-উদ্যোক্তাদের যারা প্রশিক্ষণের আওতায় আসছেন তাদের ৭০ শতাংশই নারী। তবে সুনামগঞ্জে এমন কিছু প্রশিক্ষণের প্রয়োজন যা অভিবাসনের জন্য দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানকে বিশেষায়িত করা প্রয়োজন। একই সাথে প্রয়োজন কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তির ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদকে মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমমূল্যায়ন সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা ও শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।
জনাব ইভা রায়, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ বলেন, মূলাধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ঝরে পড়ার হার অনেক বেশী। প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষার ধারা বাংলাদেশে পরিচিত। কারিগরি শিক্ষার মান মূল্যায়ন এবং সনদ দেয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (শিক্ষা) জনাব জুই চাকমা বলেন, নীতি সুপারিশের জন্য মাঠ পর্যায়ের সংলাপ খুবই প্রয়োজনীয়। তিনি তাঁর আলোচনায় দক্ষ শিক্ষক এবং প্রশিক্ষকের সংকটকে নিরসনের প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্ব দেন।
জনাব আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, সমন্বয়ক, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বলেন, বাংলাদেশে ব্যবস্থাপনার অভাব এবং প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন না করেই বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরির ক্ষেত্রেও তা সত্যি। এখন সমন্বিতভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি ও কোর গ্রুপ সদস্য, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম সংলাপে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, শুধু কারিগরি শিক্ষায় নয়, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। সম্মিলিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়তে মনোজগতের পরিবর্তনের সাথে পরিকল্পিত পদক্ষেপের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়া সংলাপে উপস্থিত অংশগ্রহনকারীরা সুনামগঞ্জে কারিগরি শিক্ষাকে জোরদার করা, দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, কারিগরি শিক্ষাকে নারীবান্ধব করা, যুগোপযোগী মেশিন স্থাপন, ইত্যাদি সুপারিশ উন্মুক্ত আলোচনায় তুলে ধরেন। এছাড়াও, কারিগরি শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সম্মানের সাথে দেখার প্রতি আহ্বান জানান উপস্থিত সকলে।
Leave A Comment