ছবিটি তুলেছেন মোঃ সানাউল্লাহ্ রিয়াদ, বার্তা সম্পাদক, দৈনিক স্বাধীন বাণী

একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ দেশটির ইতিহাস যেমন মর্মান্তিক, রক্তক্ষয়ী; তেমনি গৌরবের। আর এ দেশের মানুষ ইতিহাসের কালো অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমধুর ফল হিসেবে ভোগ করে আসছে নানামুখী সুযোগ-সুবিধা। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে হাঁটছে। আর এই স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে এসডিজি’র ১৭টি লক্ষ্যে পরিপূর্ণতা অর্জন করতে হবে।

অথচ এই প্রতিটি লক্ষ্য থেকেই পিছিয়ে রয়েছে বেদে সম্প্রদায়। বেদেরা মূলত ঐতিহ্যগতভাবেই নদীতে ‘জল যাযাবর’ বা ‘নদী যাযাবর’ হিসেবেই বসবাস করে আসছিল। বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা জীবিকার তাগিদে শহর কিংবা গ্রাম-গঞ্জে ২০ টাকা প্রতি ধর্ম শিঙা আর ১৫ টাকা প্রতি ক্যাচা শিঙা টেনে ও জাদুটোনা দেখিয়ে আয় করে থাকেন। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হলে পুরুষরা সাপের বিভিন্ন খেলা দেখান হাটে-বাজারে। এতে করে বেদের ঘরে জন্ম নেয়া ছোট্ট শিশুটিও একসময় বাবা-মায়ের শেখানো পথ ধরেই হাটে। মূলত এই যাযাবর বেদেরা ঢাকার  বিক্রমপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু জীবিকার তাগিদে এভাবেই ঘুরে বেড়ান দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

এই বেদে সম্প্রদায়ের বয়জ্যেষ্ঠ থেকে শুরু করে কোনো শিশুর নেই কোন অক্ষর জ্ঞান। ফলে তারা এসডিজি গোলের চার নম্বরে থাকা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা থেকে সৃষ্টি হতে পারে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। তাই এ সমাজের অংশ হিসেবে তাদের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একটি পরিপূর্ণ সমাজ গড়তে হবে।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, দেশে প্রায় আট লক্ষ বেদে সম্প্রদায়ের বসবাস। তারা বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসলেও সেই আগের পরিস্থিতিতেই রয়ে গেছে। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বরগুনা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধূপতী এলাকায় বসবাস করে আসছেন এই জেলায় বসবাস করা সকল বেদের সর্দার স্বাধীন ও তার স্ত্রী  সামসুন্নাহারের গোটা পরিবার। কয়েক মাস হল শহরের আরেকটি প্রাণকেন্দ্র ঢলুয়ায় বসবাস শুরু করেছে এই সম্প্রদায়ের আরেকটি দল। সব মিলিয়ে বরগুনা শহরে প্রায় ত্রিশটি পরিবারে শতাধিক বেদে সম্প্রদায়ের বসবাস। এরা কেউই লেখাপড়া জানেন না। তবে সম্প্রতি স্বপ্ন পূরণ যুব ফাউন্ডেশন থেকে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার এখানকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করে আসছে। এ সংগঠনটির মাধ্যমে ধূপতী এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কেউ কেউ শিক্ষা গ্রহণও শুরু করেছে। তবে এতেও তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিৎ। এর কারণ; যেহেতু এ সম্প্রদায় যাযাবর; তাই তারা এক স্থানে থাকেন না। ফলে স্কুল পরিবর্তন কিংবা পরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছে শিশুরা পুনরায় শিক্ষা জীবনে প্রবেশ করবে কিনা, তা প্রশ্নই থেকে যায়। প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে এই বেদে সম্প্রদায়ের জন্য স্থায়ী মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। এতে করে এই সম্প্রদায় যেমনি সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, তেমনি এসডিজি গোলের লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হবে।

তবে এই বেদে সম্প্রদায় মানসম্পন্ন শিক্ষাতেই কেবল আটকে নয়, রয়েছে এসডিজি’র তিন নম্বরে থাকা সুস্বাস্থ্য, ছয় নম্বরে থাকা বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, আট নম্বরে থাকা উপযুক্ত কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মতো জায়গা থেকে পুরোপুরি পিছিয়ে। তাই বেদে সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে একটি শক্ত ও পরিপূর্ণ পরিকল্পনা তৈরি করা। যে পরিকল্পনায় উঠে আসতে পারে বর্তমান বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমানের এক ভিন্ন গল্প, যে গল্প থাকবে এসডিজি’র প্রতিটি লক্ষ্যের সাথে পরিপূরক।


এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ‘যুবদের জন্য উন্নয়ন সাংবাদিকতা’ বিষয়ক একটি কর্মশালা গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে আয়োজন করা হয়। এই কর্মশালায় বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ থেকে ৩৭জন যুব সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার বিষয়বস্তু ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদেরকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের অর্জন ও প্রতিবন্ধকতা অথবা উন্নয়ন নিয়ে যুবদের চাহিদা ও প্রত্যাশা সম্পর্কে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়।

এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন জনাব মোঃ সানাউল্লাহ্ রিয়াদ, বার্তা সম্পাদক, দৈনিক স্বাধীন বাণী।