চলমান অতিমারিতে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, ত্রাণ ও নগদ সহয়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় নাগরিক সমাজের সংগঠন ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। অতিমারি মোকাবেলা সংক্রান্ত কার্যক্রম ছাড়াও স্থানীয় সংস্থাসমূহ তাদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। তবে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসায় স্থানীয় পর্যায়ের নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আর্থিক সংকট সহ অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সীমিত আকারে পরিচালনার ফলে সকল কাজের অগ্রগতি পুর্ণাঙ্গভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ কর্তৃক পরিচালিত এক মতামত জরিপ থেকে দেখা যায়, দেশের স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করছে এমন প্রায় ৯০% শতাংশ বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে সম্পদের অপ্রতুলতা রয়েছে। প্রায় ৭৭% স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে এমন ৬৮% বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রীর যেমন, পিপিই, মাস্ক ইত্যাদির অভাব রয়েছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান নানাবিধ ভূমিকা রাখলেও সরকারি নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে পর্যাপ্ত স্বীকৃতির অভাব রয়েছে। গণমাধ্যমেও তাদের অবদানের প্রচারণা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অতিমারির বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলায় সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত তথ্য প্রচারে ধর্মীয় নেতাদের যুক্ত করা প্রয়োজন। চলমান অতিমারির নানামুখী চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে জাতীয় নীতি কাঠামো প্রণয়ন করে সেখানে স্থানীয় নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানকে যুক করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অতিমারীর সময়কালে স্থানীয় পর্যায়ে তৎপর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সরকারি নীতি-কৌশল ও কর্মপন্থার সাথে যুক্ত করা হয়নি। এই প্রেক্ষিতে জাতীয় পর্যায়ে একটি নীতি-কৌশল গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ে তা দ্রুত ক্রীয়াশীল করা দরকার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ও স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সচেতন ও কার্যকর ভাবে যুক্ত করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে তৎপর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এসডিজি বাস্তবায়ন বিশেষ করে পিছিয়ে থাকা মানুষদের উন্নতিকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। তাই এদের এই দূর্যোগকালীণ সময়ে টিকে থাকার জন্য আর্থিক সহায়তা ও নীতি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা সরকারের পক্ষ থেকে খুবই জরুরী। পিছিয়ে থাকা নাগরিকদের অধিকার সমুন্নত রাখায় যুক্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে এই সরকারি সমর্থনের আওতায় আনতে হবে। চলমান অতিমারীর সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো ব্যপক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে ও করছে। সরকারি কর্মসূচী বাস্তবায়নেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। তৃণমূল পর্যায়ে তাদের এই অবস্থান জাতীয়ভাবে এখন পর্যন্ত খুব কমই স্বীকৃতি লাভ করেছে। মিডিয়াতেও এদের কথা যথেষ্টভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয় না। এই দূর্যোগকালীণ সময়ে তথ্য প্রবাহের এই ঘাটতি দ্রুত পূরণ করা প্রয়োজন।
সংলাপে স্বপন কুমার গুহ, নির্বাহী পরিচালক, রূপান্তর, খুলনা; রহিমা সুলতানা কাজল, নির্বাহী পরিচালক, আভাস, বরিশাল; রাসেল আহমেদ লিটন, নির্বাহী পরিচালক, এসকেএস ফাউন্ডেশন, গাইবান্ধা; আরিফুর রাহমান, নির্বাহী পরিচালক, ইপসা, চট্টগ্রাম; বজলে মুস্তফা রাজি, নির্বাহী পরিচালক, এফআইভিডিবি, সিলেট; মমতাজ আরা বেগম, নির্বাহী পরিচালক, মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, কুষ্টিয়া; সালিমা সারোয়ার, নির্বাহী পরিচালক, এসিডি, রাজশাহী আলোচক হিসেবে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এসডিজি প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্যবৃন্দের মাঝে ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, এডভাইজার, ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি, রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণস্বাক্ষরতা অভিযান এবং জনাব আসিফ ইব্রাহীম, ভাইস-চেয়ার, নিউ এজ গ্রুপ এ সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
এ সংলাপের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে একটি নীতি সংক্ষেপ প্রস্তুত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় করণীয় নির্ধারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে। সংলাপে যুব প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, পেশাজীবি এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
মতামত জরিপের ফলাফল