ব্রিফিং নোট [ English , বাংলা ]

করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশজুড়ে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্য ও কৃষি সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা, নগদ সহায়তা, নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বেসরকারি খাতের এ সকল অবদানের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সমন্বয় সাধনের জন্য একটি জাতীয় কাঠামো প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহকে যুক্ত করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে সহযোগিতার আওতায় আনা সম্ভব হবে। এই মহামারির ফলে দেশের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এসডিজি বাস্তবায়নের গতি অব্যাহত রাখতে সরকার একটি এসডিজি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করতে পারে। চলমান অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে যে সকল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঝুঁকির মুখে পড়বে তারা এই ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে বলে মনে করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ।

 

শনিবার ১৮ এপ্রিল ২০২০ এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর আয়োজনে “কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের তৎপরতার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সরকারের প্রতি সুপারিশ” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ সকল সুপারিশ তুলে ধরেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সংবাদ সম্মেলনে  বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অবদান, চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় নির্ধারণে সরকারের প্রতি সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এই সুপারিশমালাটি এসডিজি প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে আলোচনা, পরামর্শ ও জরিপের মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় উল্লেখ করেন, মহামারির ফলে সৃষ্ট লকডাউন পরিস্থিতিতে দেশের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কর্মহীনতা-আয়হীনতার কারণে খাদ্যাভাব ও পুষ্টিহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লকডাউন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এই জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা নিশ্চিতকরণে সরকারকে এখন থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশব্যাপী খাদ্য সংকট সৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে হলে সার্বিক খাদ্য ও কৃষিপণ্য পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সরকারিভাবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য ক্রয় ও পরিবহনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গঠন করা যেতে পারে। এতে করে কৃষকও উপকৃত হবেন এবং ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা যায়।

ড. দেবপ্রিয়  আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের যুব সমাজকে মাদকাসক্তি ও জঙ্গিবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। লকডাউনের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব সমস্যা রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ও বাল্যবিবাহ রোধে গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর কোর গ্রুপ সদস্য শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান, এবং অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি এবং নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন। তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন এবং পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।