বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলকতার অভাব মোকাবিলার জন্য গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা শক্তিশালীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিককালের শাসন ব্যবস্থার সমস্যাগুলো একটি সামগ্রিক সংস্কারের প্রয়োজনীতা তুলে ধরেছে। বিশেষত নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীরসহ সকল প্রান্তিক সম্প্রদায়ের কন্ঠস্বর শাসন ব্যবস্থাপর প্রতিটি স্তরে যাতে প্রতিফলিত হয়। বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে নাগরিকদের ক্ষমতায়নের জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অর্ন্তভুক্তির ভিত্তিতে একটি জনমুখী মাসন ব্যবস্থার মডেল তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম,বাংলাদেশ গত ৮–৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে ‘সুশাসনের জন্য জনসম্পৃক্ত সংস্কার, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক নাগরিক সম্মেলনের আয়োজন করে। ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতা করে। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক তারাননুম জিনান অনুষ্ঠানের শুরুতেই জানান, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের নাগরিক সম্মেলনের ভিন্ন অর্থ রয়েছে। জনসম্পৃক্ত সংস্কারের জন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কী চায়, তা জানা সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য।
স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বিতর্ককে প্রভাবিত করা এবং শাসন ব্যবস্থায় নাগরিকদের বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমিকা ছিল এই সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য । নীতি প্রণয়ন ও সরকারি সেবা সরবরাহের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও সরবরাহ প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ওপর সম্মেলনে আলোকপাত করা হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো সরকারি সেবা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে কীভাবে আরও কার্যকরভাবে পৌছানো যায়, তা নিয়ে একটি মডেল শাসন ব্যবস্থার কৌশল প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পরিবর্তন বিষয়ে একটি সংলাপের সূচনা করা।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহবায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি সম্মেলনের প্রেক্ষিত উপস্থাপন করেন এবং সুশাসনের জন্য জনসম্পৃক্ত সংস্কার নিশ্চিত করতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কন্ঠস্বর জোরালো করার আহবান জানান। বিশেষ বক্তা ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, ইউএনডিপি, বাংলাদেশ এর আবাসিক সমন্বয়ক ষ্টেফান লিলার এবং সুইজারল্যান্ড দুতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কোরিন হ্যানসাস পিগনানি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী দিনের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর জন্য স্থানীয় পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে কোন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা যেতে পারে এবং তাদের ভাতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা কীভাবে জোরদার করা যায়– তার পরিকল্পনা নিয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।