বাংলাদেশে যেকোন ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। এটি সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় সরকার থেকে প্রদান করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স ব্যতীত কোন ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি নেই এবং তা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ।
কেন ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন
- এটি ব্যবসা করার বৈধ উপায়
- যে কোনো ব্যবসা-সংক্রান্ত ব্যাংক ঋণের জন্য প্রয়োজন
- সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে আস্থা তৈরি করে
- ভবিষ্যতে কোনো আইনি সহায়তার জন্য
- যেকোন ধরনের ব্যবসা-সংক্রান্ত চুক্তির জন্য
- যেকোন ব্যবসায়ী সমিতির/এসোসিয়েশন সদস্য হতে হলে
- অপরিমাপযোগ্য সম্পদ (যেমন ট্রেডমার্ক, ব্যবসার নাম ইত্যাদি) নিরাপদ রাখার জন্য
বাংলাদেশে ব্যবসার ধরণ
- এক মালিকানাধীন ব্যবসা – একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন এবং মালিক কর্তৃক পরিচালিত ব্যবসা। এক মালিকানাধীন ব্যবসা এবং মালিক দুটি আলাদা স্বত্বা নয়, বরং ব্যবসার সকল দায়-দেনা এবং সম্পদ সমস্তই মালিকের একার।
- অংশীদারি ব্যবসা – চুক্তির দ্বারা দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের জন্যে যে ব্যবসা গড়ে উঠে, সেটিই অংশীদারি ব্যবসা। এই ব্যবসাতে সর্বনিম্ন ২জন হতে হয় ও সর্বোচ্চ ২০জন হওয়া সম্ভব। ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ২জন থেকে সর্বোচ্চ ১০জন হবে।
- লিমিটেড কোম্পানি
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- নির্দিষ্ট আবেদন পত্র- সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার জোনাল অফিস থেকে পাওয়া যায় এবং সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যায়
- উদ্যোক্তার জাতীয় পরিচয়পত্র- প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার কর্তৃক যথাযথভাবে সত্যায়িত
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থানটি নিজের হলে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের রশিদ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থানটি নিজের হলে, আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থানটি ভাড়া হলে ভাড়ার চুক্তিনামা অথবা রশিদ
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি – ৩ কপি, প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার কর্তৃক যথাযথভাবে সত্যায়িত
- নির্ধারিত নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে অঙ্গীকারনামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- টিন/ই-টিন সনদ
- বাড়ির ইউটিলিটি বিল এর কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, অথবা পানি)
- ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী নির্ধারিত ফি
অংশীদারি ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের পূর্বে পার্টনারশীপ চুক্তি/ডিড করে নিতে হবে এবং ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য উপরের সব কাগজপত্রের সাথে পার্টনারশীপ চুক্তি /ডিড এর কপি দিতে হবে | পার্টনারশীপ অ্যাক্ট ১৯৩২ অনুযায়ী আপনার অংশীদারি ব্যবসার জন্য পার্টনারশীপ চুক্তি/ডিড করা বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে পার্টনার/অংশিদারদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দরকার হলে, পার্টনারশীপ চুক্তি/ডিড না থাকলে, কোনো আইনি সহায়তা পাওয়া যাবে না।
ব্যবসা করার জন্য ব্যবসার নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। নিজের নামে কোনো ব্যাংক একাউন্ট থেকে থাকলে তা দিয়ে ব্যবসার কোনো আর্থিক লেনদেন করা যাবে না।
ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী নির্ধারিত ফি এর উপর ১৫% ভ্যাট আরোপ হবে। বাংলাদেশের সব ব্যবসা প্ৰতিষ্ঠানের উপরেই ভ্যাট প্ৰযোজ্য।
যে ধরনের ব্যবসার জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
১. আমদানিকারক
২. রপ্তানিকারক
৩. করযোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী
৪. করযোগ্য পণ্য প্রদানকারী
৫. পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী
প্রথমবার ট্রেড লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই বাছাই এর জন্য লাইসেন্স সুপারভাইজার পরিদর্শনে আসতে পারেন । কোন ভুল বা অসঙ্গতি থাকলে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয় না।
কোথায় পাওয়া যাবে?
- যদি ব্যবসা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে থাকে- সিটি কর্পোরেশন অফিস/সিটি কর্পোরেশন জোনাল অফিস
- ব্যবসা যদি সিটি কর্পোরেশন/মহানগর এলাকার বাইরে হয়- ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/উপজেলা/জেলা পরিষদ অফিস
এছাড়াও যদি ব্যবসা নিম্নোক্ত সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়ে থাকে, ট্রেড লাইসেন্সের জন্য সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে আবেদন করা যাবে।
ট্রেড লাইসেন্স প্রতি অর্থবছরে (১ জুলাই থেকে ৩০ জুন) নবায়ন করতে হয়। একজন উদ্যোক্তার ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য তিন মাস সময় থাকবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নবায়ন না করলে, প্রতি মাসে ১০% হারে জরিমানা করা হবে।
নবায়নের সময় নির্ধারিত ফি, ভ্যাট এর সাথে উৎস করও আরোপ হবে।
১৮ বছরের কম বয়সী ব্যক্তি ব্যবসা শুরু করতে পারবে না।