(বাম থেকে ডানে) টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ব্লাস্ট-এর অনারারি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্যারিস্টার সারা হোসেন, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নুরুল আলম বাবু চৌধুরী এবং সম্পাদক অ্যাডভোকেট  ফজলুল হক।

Resources

নতুন বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডার আলোকে শান্তি, নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও সুশাসনের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে হবে।  বাংলাদেশ সরকার বিগত সময়ে সুশাসনের বেশ কিছু নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসবের বাস্তবায়ন এখনও মানুষের জীবনকে স্পর্শ করেনি। তাই প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক সক্ষমতা দৃঢ় করা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে দৃশ্যমান করা। মাদারীপুরে এক আলোচনা সভায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথাগুলো বলেন।

গত ৪ মার্চ ২০১৭ শনিবার সকাল ১০ টায় মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশন এবং টিআইবি’র সচেতন নাগরিক কমিটি, মাদারীপুর-এর আয়োজনে ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় নতুন বৈশ্বিক উন্নয়ন: শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও সুশাসন শীর্ষক এ আলোচনা সভাটি মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশন-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।

Good-Governance-needs-awareness,-capacity-and-commitment-02সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও আহ্বায়ক, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং সভাপতি, মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশন। অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। সভায় সভাপতিত্ব করেন মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি প্রাক্তন মেয়র নুরুল আলম বাবু চৌধুরী। সভায় মাদারীপুর পৌরসভার বর্তমান পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন অর্ন্তভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সুশাসন এবং কার্যকরী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুশাসনের মতো শান্তি ও নিরাপত্তাও উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠছে। পৃথিবীর যে সকল দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত বা যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছে সেখানেই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মানবাধিকারের সাথে উন্নয়নের সম্পর্ক আরও বেশি স্পষ্ট। মানবাধিকার সুরক্ষাকারী ভিত্তি ছাড়া কোনো উন্নয়ন কাঠামোই টেকসই হতে পারে না। এবং ফলস্বরূপ জনগণের জীবনযাপনে উন্নয়ন প্রকৃত ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে না।

তিনি আরো বলেন আইনের শাসন. শান্তি ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের বড় ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে সরকার ও বেসরকারি সংগঠনসমূহকে বিনিয়োগ করতে হবে, সৃষ্টিশীল হতে হবে।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের পাশাপাশি জাতীয়ভাবে সরকারের পক্ষ থেকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্র্নীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক গুরুত্বপূর্ণ আইনী, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও তথ্য অধিকার আইন অন্যতম। এসবের কার্যকর প্রয়োগ অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক দলের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা ব্যতিরেকে অন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা অসম্ভব। নাগরিকের মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে “কাউকে পেছনে ফেলে নয়” এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অগ্রগতি অসম্ভব।

ব্লাস্ট-এর অনারারি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন এসডিজির ১৬ নম্বর অভীষ্ট অর্জনে আমাদের দরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা, শিশু নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭ এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু সকল নারী ও শিশু অধিকার সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে এই আইনে বিশেষ বিধান রেখে প্রতিজ্ঞা পূরণ করা সম্ভব কি-না তা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন । তিনি প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইনের বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করেন।

মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশন-এর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন দুর্নীতি না কমানো গেলে উন্নয়নের ফসল আমরা ভোগ করতে পারবো না। তিনি প্রত্যেককে আহ্বান জানিয়ে বলেন আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই যেন দুর্নীতিকে ঘৃনা করি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসি।