জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং শিক্ষাবিদ নিলুফার মঞ্জুরের মতো দেশবরেণ্য ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গুণী নাগরিকদের প্রয়াণে দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, মূল্যবোধের বিকাশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অপূরণীয় অভিভাবকশূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশপ্রেম ও নাগরিক দায়িত্ববোধের উদাহরণ হিসেবে তাঁদের দর্শন, শিক্ষা ও অবদান সর্বদা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

বিশিষ্ট প্রকৌশলী জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরাসরি যুক্ত থেকে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলি টানেলসহ দেশের প্রায় সকল উন্নয়ন প্রকল্পে তিনি সরাসরি যুক্ত থেকে অবদান রেখেছেন। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের প্রতিটি প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনসংগ্রামে সক্রিয় অবদান রেখেছেন দেশের প্রতিটি সংকটকালে তাঁর বক্তব্য, মন্তব্য এবং ভূমিকা দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে শিক্ষাবিদ নিলুফার মঞ্জুর একজন প্রচারবিমুখ সফল শিক্ষা উদ্যোক্তা। শিশুদের মাঝে দেশপ্রেম ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশে গুণগত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। নাগরিক সমাজের এই তিন পুরোধা ব্যক্তিত্বের অবদান বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

সোমবার ৮ জুন ২০২০ এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং শিক্ষাবিদ নিলুফার মঞ্জুরের কর্ম, জীবন এবং দেশের প্রতি তাঁদের অবদান নিয়ে এসব আলোচনা করা হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এসডিজি প্ল্যাটফর্মের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।

এসডিজি প্ল্যাটফর্মের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং শিক্ষাবিদ নিলুফার মঞ্জুর – এই তিনজনের থেকে যে বিষয়টি আমাদের মূল শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত তা হলো, দেশপ্রেম। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধের দায় মেটাতে তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে গেছেন। আজ সেই কাজ আমাদের সকলের জন্য এক একটি অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে আছে। আমাদের সকলের উচিত হবে তাঁদের জীবনদর্শন থেকে মূল্যবোধ ও ন্যায়ের শিক্ষা নেওয়া এবং নাগরিক কর্তব্যের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়া।

মাননীয় সংসদ সদস্য সেলিমা আহমেদ, এমপি এবং অ্যারোমা দত্ত, এমপি এ স্মরণসভায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রয়াত মনীষিদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। স্মরণসভায় জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং শিক্ষাবিদ নিলুফার মঞ্জুরের পরিবারের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এসডিজি প্ল্যাটফর্মের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মাঝে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জনাব মোস্তফা মনোয়ার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং এসডিজি প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্যদের মাঝে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, গণসাক্ষরতা অভিযান-এর নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ব্র্যাকের সাবেক ভাইস চেয়ার জনাব ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, নিউ এজ গ্রুপের ভাইস চেয়ার জনাব আসিফ ইব্রাহিম, এবং এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব নাসিম মঞ্জুর এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জনাব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার, বেঙ্গল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান জনাব আবুল খায়ের লিটুসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা এ স্মরণসভায় অংশগ্রহণ করেন।

এসডিজি প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ স্মরণসভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য প্রদান করেন এবং এসডিজি প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।