বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ। এই বিশ্বায়নের যুগে প্রতিনিয়ত মানুষ তার জীবন মান উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সেই সংগ্রাম করার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ স্বাচ্ছন্দে জীবনধারণ এবং সমাজে নিজেকে সম্মানজনক স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মতো যুব সমাজের কিছু নিজস্ব মতামত রয়েছে। সেই মতামত তুলে আনার জন্য আমরা গিয়েছিলাম চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ সহ আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের নানা স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে। কিছু শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে আমরা তাদের চাহিদা এবং প্রত্যাশার কথা জানতে চেষ্টা করি।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, “বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যা এবং পাঠ্যবই নিয়ে আটকে আছি, যার কারণে আমাদের বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে ভালো কিছু করা সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে।”
কিছু শিক্ষার্থীকে নতুন শিক্ষা পাঠ্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাদের উত্তরে অসন্তোষ প্রকাশ পায়। স্নাতক তৃতীয় র্বষের শিক্ষার্থী আব্দুল মাজীদের ভাষ্যে, “বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে যে অসঙ্গতি এবং বিভিন্ন বিতর্কমূলক আলোচনা চলছে, তা নিরসন করে একটি গ্রহণযোগ্য শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করা প্রয়োজন।” তিনি আরো জানান, “এই বিতর্কমূলক শিক্ষা নিয়ে আমরা মানসিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, কারণ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। এছাড়া নৈতিক শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সৎ ও নিষ্ঠাবান জাতি গড়ে তুলতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাঠ্যবইয়ের অসঙ্গতিপূর্ণ পাঠ যা নৈতিক বিপর্যয় ঘটায় তা বাদ দিতে হবে।”
বর্তমান যুবসমাজের বেশিরভাগ যুবদের প্রত্যাশা চাকরি কিংবা ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। তবে যুবসমাজের এই ব্যাপারে যথেষ্ঠ সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় দেশে চাকরির সুয়োগ কম এবং অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার কারণে টিকে থাকা বেশ কঠিন। উদ্যেক্তা হওয়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়।
আরো শিক্ষার্থীরা বলেন, “বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে যে ধরণের বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই পড়াশোনা শেষ করে চাকরির প্রতিয়োগিতায় টিকে থাকার জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মমুখী, বাস্তবধর্মী ও জীবনমুখী শিক্ষার আদলে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বলে মনে করেন যুব সমাজ এবং শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কার্যকরী কারিগরী শিক্ষাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুবসমাজের চাহিদা ও প্রত্যাশার কথা বলা যুবদের মাঝে উল্লেেখযোগ্য সংখ্যক যুবর বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের চাহিদা দেশের প্রান্তিক পর্যায় যেমন ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নিয়মিত জীবনমুখী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা, যাতে তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, এবং নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।
চুয়াডাঙ্গার যুবসমাজের চাহিদা ও প্রত্যাশার মধ্যে রয়েছে এই এলাকায় একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা, যার মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার মান উন্নয়ন সুনিশ্চিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা দেশের একটি গুরত্বপূর্ণ জনপদ, যার অবস্থান ভৌগলিক দিক দিয়ে অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এই জনপদ নানা গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৮৬২ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানীর সর্বপ্রথম চুয়াডাঙ্গা দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন করা। কিন্তু ১৮৬২-২০২৪ সাল অবধি দীর্ঘ ১৬২ বছরেও চুয়াডাঙ্গায় কোন অধুনিক রেল স্টেশন তৈরি হয়নি, যা অন্য শহর থেকে চুয়াডাঙ্গাকে পিছেয়ে রেখেছে। তাই যুবসমাজের প্রত্যাশা, দ্রুত সময়ের মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতে একটি অধুনিক রেল স্টেশনও যাতে নির্মাণ করা হয়। এছাড়া শিল্প-কারখানা না থাকার কারণে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা, তাই শিল্প-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
সবশেষে চুয়াডাঙ্গার যুবসমাজের দাবি ও প্রত্যাশা হল আধুনিক মানের চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে একটি মাত্র সরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে চিকিৎসার জন্য নেই পর্যাপ্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এই জনপদের মানুষের সুচিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত ছুটতে হয় ঢাকা, রাজশাহী বা খুলনার মতো বড় বড় শহরে, যার কারণে তাদের জীবনমান প্রতিনিয়ত ব্যহত হচ্ছে। তাই যুবসমাজের জোর প্রত্যাশা, চুয়াডাঙ্গায় যেন একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়। সেইসাথে চুয়াডাঙ্গা জেলায় যে হাসপাতালগুলো সরকারি তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী ও ঔষধ সররবাহ নিশ্চিত করে উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা সুযোগ তৈরি হওয়া এই জনপদের যুবসমাজের বড় প্রত্যাশা।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ‘যুবদের জন্য উন্নয়ন সাংবাদিকতা’ বিষয়ক একটি কর্মশালা গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে আয়োজন করা হয়। এই কর্মশালায় বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ থেকে ৩৭জন যুব সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার বিষয়বস্তু ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদেরকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের অর্জন ও প্রতিবন্ধকতা অথবা উন্নয়ন নিয়ে যুবদের চাহিদা ও প্রত্যাশা সম্পর্কে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়।
এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন জনাব বালাদুল আমিন, স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আমাদের সংবাদ।
Leave A Comment