ধরিত্রীর রূপান্তর: ২০৩০ সালের পথে টেকসই উন্নয়ন অভিযাত্রা
২০১৫ সালে জাতিসংঘে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বা ২০৩০ এজেন্ডা গৃহীত হওয়ার পর পৃথিবীব্যাপী উন্নয়ন চিন্তায় ও কর্মকাণ্ডে এক নতুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশেও এই নতুন উন্নয়ন দর্শনের ঢেউ এসে লাগছে।
রূপান্তরমুখী, অংশীদারিত্বমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সার্বজনীন – এসডিজি’র বিশেষ এই বৈশিষ্ট্যকে সামনে রেখে ২০১৬ সালের জুন মাসে কয়েকজন উদ্যোগী ব্যক্তির চেষ্টায় “এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়। বেসরকারি ও ব্যক্তিখাতের দেশব্যাপী বিভিন্ন পর্যায়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে এই প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে। প্ল্যাটফর্মের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এসডিজি বাস্তবায়নের জাতীয় উদ্যোগের সাথে যুক্ত হওয়া; এবং একই সাথে আরেকটি বিশেষ উদ্দেশ্য হলো এসডিজি’র অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ সম্পর্কে সকল পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
এসডিজি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকেই বিভিন্ন সময়ে এই এজেন্ডা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক ২০৩০ এজেন্ডা শীর্ষক দলিলটি বারবার ব্যবহার করতে হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে এসডিজি’র বিষয়সমূহ বেশ জটিল বিধায় এর বিভিন্ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও বোঝার জন্য দলিলটির একটি বাংলা অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। সেই চাহিদা পূরণ করার জন্যই বর্তমান প্রকাশনাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই প্রকাশনাটি প্রস্তুতকরণে প্ল্যাটফর্মের সচিবালয় হিসেবে কার্যরত সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সহকারী প্রধান জনাব শেখ মঈনুল ইসলাম মঈনকে, যিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দলিলটির বাংলা অনুবাদে সাহায্য করেছেন। অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক পর্যায়ে এই দলিলটি সম্পাদনায় সহায়তা করেছেন। তাকেও ধন্যবাদ জানাই। এই প্রকাশনার একটি অংশ (অভীষ্ট, লক্ষ্যমাত্রা এবং এর ব্যাখ্যাসমূহ) বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন-এর সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক বাংলায় অনুদিত প্রকাশনার পরিমার্জিত রূপ।
বাংলায় অনুদিত এই প্রকাশনাটি এসডিজি কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। একই সাথে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে এসডিজি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
আশা করি এসডিজি’র মূল চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এমন একটি দেশে পরিণত হবে, যেখানে উন্নয়ন সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রে “কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না।”
ঢাকা
নভেম্বর, ২০১৭
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
আহ্বায়ক
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ
পৃথিবী ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এই এজেন্ডা। ব্যাপকতর স্বাধীনতায় বৈশ্বিক শান্তির বলিষ্ঠ ভিত রচনাও এর উদ্দেশ্য। আমরা স্বীকার করি যে, চরম দারিদ্র্যসহ সকল মাত্রায় ও সকল ধরনের দারিদ্র্য দূরীকরণ হলো আমাদের সময়কার বৃহত্তম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যা টেকসই উন্নয়নের একটি অনস্বীকার্য পূর্বশর্তও। সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পৃথিবীর সকল দেশ এবং সকল অংশীজন (ও অংশী প্রতিষ্ঠান) এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে অংশ নেবে। অভাব-অনটন ও দারিদ্র্যের নিপীড়ন থেকে মানবজাতির মুক্তিকল্পে এবং পৃথিবী নামক গ্রহের নিরাময় সাধনে, এবং সর্বোপরি এ গ্রহকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একটি টেকসই ও প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু পথের অভিমুখে বাঁক পরিবর্তন এখন পৃথিবীর জন্য অপরিহার্য। এ জন্য আমরা সাহসী ও রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ নিতে স্থিরসংকল্প। এই যৌথ অভিযাত্রার শুরুতেই আমরা প্রতিজ্ঞা করছি পেছনে পড়ে থাকবে না কেউ। যে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার ঘোষণা আজ আমরা করছি, তা এই নতুন বিশ্বজনীন এজেন্ডার ব্যাপ্তি ও উচ্চাকাক্সক্ষারই বহিঃপ্রকাশ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টের যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু এই নতুন অভীষ্ট-লক্ষ্যের যাত্রা, পূর্বসুরি লক্ষ্যসমূহের অসমাপ্ত অংশের সফল সমাপনই এর অভিপ্রায়। সকলের জন্য মানবাধিকার বাস্তবায়ন, নারী-পুরুষের সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও অল্পবয়সী মেয়ের ক্ষমতায়ন এর অন্বিষ্ট। এই অভীষ্টগুলো অবিচ্ছেদ্য, পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং টেকসই উন্নয়নের তিনটি মূল স্তম্ভ – অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশ-এর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করবে। এই অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পরবর্তী পনেরো বছর ধরে পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কর্মোদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে।
জনগণ
সকল রূপে ও সকল মাত্রায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিলুপ্তি সাধনে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে সকল মানুষ যেন একটি স্বাস্থ্যকর, সুষ্ঠু পরিবেশে, মর্যাদায় ও সমতায় তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে।
ধরিত্রী
টেকসই ভোগ ও উৎপাদন, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে পৃথিবী নামক গ্রহের অবক্ষয় রোধে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফলে শুধু বর্তমানের নয়, অনাগত প্রজন্মের চাহিদাও মেটাতে পারবে এই গ্রহ।
সমৃদ্ধি
সকল মানুষ যেন প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্রগতির ধারায় সমৃদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ জীবনের আস্বাদ উপভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শান্তি
ভয়-ভীতি ও সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ, ন্যায়পরায়ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার বিকাশে আমরা প্রতিজ্ঞবদ্ধ। শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া যেমন টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি শান্তির পূর্বশর্তও হলো টেকসই উন্নয়ন।
অংশীদারিত্ব
টেকসই উন্নয়নের জন্য পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই এজেন্ডার সফল বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সকল উপায় খুঁজে পেতে সংকল্পবদ্ধ আমরা। এই কর্মযজ্ঞের ভিত্তি হবে বলিষ্ঠ বৈশ্বিক সংহতি এবং এর মূলে থাকবে সবচেয়ে অরক্ষিত-ঝুঁকিগ্রস্ত ও দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর চাহিদা। পৃথিবীর সকল দেশ, সকল মানুষ ও অংশীদজনদের সহযোগে সম্পূর্ণ হবে এই সুবিশাল কর্মপ্রচেষ্টা। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের আন্তঃসংযোগ ও সমন্বিত বৈশিষ্ট্য নতুন এই এজেন্ডার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। পূর্ণ পরিসরে এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের যে অভিলাষ আমরা পোষণ করি তা যদি সফল হয়, সবার জীবনে আসবে সারগর্ভ ইতিবাচক পরিবর্তন। ফলে একটি উন্নততর অবস্থায় রূপান্তরিত হবে আমাদের এই ধরিত্রী।
৫৪. একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তঃরাষ্ট্রীয় মতবিনিময় প্রক্রিয়ার অনুসরণে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ক উন্মুক্ত কর্মীদলের (Open Working Group) প্রস্তাবের<a href=”#_ftn1″ name=”_ftnref1″> [1] </a> ভিত্তিতে এবং আমাদের সকলের সম্মতিসহ (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের প্রাসঙ্গিকতার বর্ণনাসংবলিত একটি উপক্রমণিকা সংযুক্ত রয়েছে এ প্রস্তাবে) নিম্নোক্ত অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে।
৫৫. বিভিন্ন দেশের জাতীয় বাস্তবতা , সক্ষমতা ও উন্নয়ন সোপানে এদের অবস্থান বিবেচনায় রেখে এবং জাতীয় নীতিমালা ও অগ্রাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রণীত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পর ¯ পর সমন্বিত ও অবিচ্ছেদ্য , বৈশ্বিক প্রকৃতির ও সর্বজনীনভাবে প্রয়োগযোগ্য। বৈশ্বিক পর্যায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এবং জাতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি দেশ একটি নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থির করেছে চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বৈশ্বিক মাত্রার এসব লক্ষ্যমাত্রাসমূহকে কীভাবে জাতীয় পরিকল্পনা প্রক্রিয়া , নীতিমালা ও কৌশলের অঙ্গীভূত করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভারও অর্পণ করা হয়েছে প্রতিটি দেশের সরকারের ওপর।
৫৬. এই অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ নির্ধারণে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে উদ্ভূত প্রতিটি দেশের সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহ আমাদের বিবেচনায় ছিল। সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত দেশসমূহ ছিল আমাদের নিকট শীর্ষ গুরুত্ববাহী ; বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ , স্বল্পোন্নত দেশ , স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ , উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো এতে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। সংঘর্ষপীড়িত দেশগুলোও আকর্ষণ করেছে বিশেষ মনোযোগ। টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক , সামাজিক ও পরিবেশগত অন্যান্য সংশ্লিষ্ট চলমান প্রক্রিয়ার সাথে যে যোগসূত্র রয়েছে তা অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫৭. আমরা দেখেছি যে অনেক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ভিত্তি-তথ্য নেই। আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে , সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জাতীয় ও বৈশ্বিক ভিত্তি-তথ্য গড়ে তুলতে বর্ধিত সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের ঘাটতি নিরূপণে আমরা প্রতিশ্রুত হচ্ছি ; বিশেষ করে সেই সব লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে যাদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যাগত পরিমাপক নেই।
৫৮. আমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উদ্দেশ্যে চলমান প্রচেষ্টায় অন্যান্য ফোরামে রাষ্ট্রসমূহের অংশগ্রহণকে আমরা উৎসাহিত করি। এসব প্রক্রিয়ার স্বাধীন অনুশাসনের (mandate) প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। এসব প্রক্রিয়া ও গৃহীত সিদ্ধান্তে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে এবং এই এজেন্ডা ও এর বাস্তবায়ন প্রয়াসে কোনো রূপ বিরূপ ভাব পোষণ করা হবে না।
৫৯. আমরা উপলব্ধি করি, টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে জাতীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিটি দেশেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কার্যপ্রণালী, রূপকল্প, মডেল ও পদ্ধতি ( tools )। আমরা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করছি যে পৃথিবী নামের গ্রহ ও এর প্রতিবেশ আমাদের সবার ঠিকানা এবং “ জননী ধরিত্রী ” বহু সংখ্যক দেশ ও অঞ্চলের প্রচলিত বচন।
<em><a href=”#_ftnref1″ name=”_ftn1″> [1] </a> সাধারণ পরিষদের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ক উন্মুক্ত কর্মীদলের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত (এ/৬৮/৯৭০ এবং শুদ্ধিপত্র ১ ; আরও দ্রষ্টব্য এ/৬৮/৯৭০/সংযোজনী ১ ও ২)।</em>
<span style=”color: #e6243e;”> টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ </span>
<img class=”aligncenter size-full wp-image-13424″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/টেকসই-উন্নয়ন-অভীষ্টসমূহ.jpg” alt=”” width=”1040″ height=”605″ />
৬০. নতুন এই এজেন্ডার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার পুনর্নিশ্চয়তা ব্যক্ত করছি আমরা। আমরা স্বীকার করি যে পুনরুজ্জীবিত ও দৃঢ়তর বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব ও তুলনামূলকভাবে উচ্চঙ্ক্ষাখী বাস্তবায়নের উপায় ছাড়া এই উচ্চাভিলাষী অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জন সম্ভব নয়। পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত, জাতিসংঘ ও অন্যান্য কুশীলবদের একত্র করে এবং বিদ্যমান সম্পদসমূহের সমাবেশ ঘটিয়ে অভীষ্ট ও লক্ষ্য সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়ন পদ্ধতির সমর্থনে নিবিড় বৈশ্বিক অংশগ্রহণ সম্ভব হবে।
৬১. এজেন্ডাভুক্ত অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহই আমাদের সমন্বিত উচ্চাকাক্সক্ষার সফল রূপায়নের পন্থা নিরূপণ করে। এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের মূলে থাকবে পূর্বে উল্লেখিত প্রতিটি টেকসই উন্নয়ন এবং অভীষ্ট ১৭ বাস্তবায়নের উপায় সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহ। অন্যান্য অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার মতোই সমান গুরুত্ব বহন করে বাস্তবায়ন পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট এই অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ। বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা এবং অগ্রগতি পরিমাপের জন্য প্রস্তুত বৈশ্বিক নির্দেশক কাঠামোর সমমাত্রার অগ্রাধিকার পাবে এই বিশেষ লক্ষ্যমাত্রাসমূহ।
৬২. আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা[1] গৃহীত সংহত নীতিমালা ও কর্মকান্ডের পৃষ্ঠপোষণায় টেকসই উন্নয়ন অভিলাষী একটি পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক অংশীদারিত কাঠামোর আওতায় বাস্তবায়ন সম্ভব এই এজেন্ডার ও সংশ্লিষ্ট অভীষ্টসমূহের। উল্লেখ্য যে, টেকসই উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট ২০৩০ এজেন্ডার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা। ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নের উপায় সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহের সমর্থন ও পরিপূরণই কেবল নয়, এদের প্রাসঙ্গিকতা প্রতিষ্ঠায়ও সহায়তা প্রদান করে এই অ্যাকশন এজেন্ডা। অভ্যন্তরীণ সরকারি সম্পদ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও অর্থায়নব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা, উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ঋণ ও ঋণ প্রদান সক্ষমতা, পদ্ধতিগত বিষয়সমূহ এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উপাত্ত, পরিবীক্ষণ ও ফলো-আপ প্রভৃতির নিবিড় সংশ্লিষ্টতায় এই এজেন্ডা ঋদ্ধ।
৬৩. আমাদের প্রচেষ্টার মূলকেন্দ্রে থাকবে একটি সমন্বিত জাতীয় অর্থায়ন কাঠামোর সমর্থনপুষ্ট জাতীয়ভাবে গৃহীত পস্পরপর-সহযোগী একগুচ্ছ টেকসই উন্নয়ন কৌশল। আমরা পুনরায় ব্যক্ত করছি যে, প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রাথমিক দায়িত্বভার তাদের নিজেদের ওপরই বর্তায়, ফলে জাতীয় নীতিমালা ও উন্নয়ন কৌশলসমূহের ভূমিকার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে সর্বতোভাবে বাহুল্য। প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক বিধিমালা ও প্রতিশ্রুতিসমূহের সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রাখার পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা সকল দেশের নীতি স্বাধীনতা ও নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একই সময়ে, সুসঙ্গত ও পস্পপর-সহযোগী বৈশ্বিক বাণিজ্য, অর্থ ও অর্থায়ন ব্যবস্থা, বর্ধিত ও জোরদার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাসহ সহায়ক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকতে হবে জাতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টায়। উপযুক্ত জ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ এবং বৈশ্বিকভাবে এদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াও প্রভূত গুরুত্ববাহী। সকল কুশীলবের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়ক পরিবেশ ও নীতি অনুসরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অন্বেষায় বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের পুনরুজ্জীবনও আমদের প্রতিজ্ঞাভুক্ত।
৬৪. সকল প্রাসঙ্গিক কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা, যথা: ইস্তাম্বুল ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের বর্ধিত কর্মব্যবস্থা প্রণালীর (এসএএমওএ) পথ-নকশা এবং ২০১৪-২০২৪ দশক ব্যাপী স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ সংশ্লিষ্ট ভিয়েনা কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নে আমাদের আন্তরিক সমর্থন থাকবে। আফ্রিকান ইউনিয়নের এজেন্ডা ২০৬৩ ও আফ্রিকার উন্নয়নে নব্য অংশীদারিত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিগুলিতে সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব আমরা গভীরভাবে অনুধাবন করছি। উল্লিখিত সকল কর্মপরিকল্পনাই নতুন এজেন্ডার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংঘর্ষপীড়িত ও সংঘর্ষোত্তর পরিস্থিতে নিপতিত দেশসমূহে স্থিতিশীল শান্তি ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনকেও কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমরা চিহ্নিত করেছি।
৬৫. মধ্যম আয়ের দেশসমূহ টেকসই উন্নয়ন অর্জনে এখনও প্রভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে। এখন পর্যন্ত অর্জিত সাফল্যসমূহ যাতে বজায় থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য অভিজ্ঞতা বিনিময়, অধিকতর সমন্বয়, জাতিসংঘের উন্নয়ন ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক সংস্থা ও অন্যান্য অংশীপ্রতিষ্ঠানের উনড়বততর ও লক্ষ্যনির্দিষ্ট সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
৬৬. টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনসহ টেকসই উন্নয়ন অন্বেষায় আমাদের সম্মিলিত অভিযাত্রার মূল দর্শন হবে সকল দেশের জন্য জাতীয় স্বত্বাধিকার নীতির ওপর ভিত্তিপ্রাপ্ত সরকারি নীতিমালা এবং দেশজ সম্পদের সমাহার ও কার্যকর ব্যবহার। স্বীকার্য যে, সকল পর্যায়ে সহায়ক পরিবেশের সমর্থনপুষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমেই মূলত দেশজ সম্পদের সৃষ্টি হয়।
৬৭. উৎপাদনশীলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মূল চালিকাশক্তি হলো বেসরকারি খাতের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সমবায়ী প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত বেসরকারি খাতের বৈচিত্র্যের বিষয়ে আমরা সচেতন। তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনার সার্থক প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন চ্যালেঞ্জসমূহের সমাধানে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা একটি প্রগতিশীল, সক্রিয় ও কার্যকরী ব্যবসায়িক খাতের বিকাশ ঘটাতে চাই। পাশাপাশি আমরা সুরক্ষিত রাখতে চাই শ্রম-অধিকার এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রমিত মান। এক্ষেত্রে পথনির্দেশক হবে প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক মানদ- ও চুক্তিসমূহ এবং এ খাতের অন্যান্য চলমান উদ্যোগসমূহ, যথা: ব্যবসা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতি নির্দেশক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মানবাধিকার ও শ্রম সংশ্লিষ্ট মানদন্ড, শিশু-অধিকার বিষয়ক কনভেনশন এবং প্রধান বহুপাক্ষিক পরিবেশ চুক্তিসমূহ (চুক্তিভুক্ত দেশসমূহের জন্য)।
৬৮. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম চালিকাশক্তি, টেকসই উন্নয়নের প্রসারেও রয়েছে এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় আমরা একটি, সর্বজনীন, বিধি-কেন্দ্রিক, উদার, স্বচ্ছ, ভবিষ্যৎবাচ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রসারন অব্যাহত রাখব; পাশাপাশি চলমান থাকবে অর্থবহ বাণিজ্য উদারীকরণ প্রব্রিয়া। দোহা উন্নয়ন এজেন্ডাভুক্ত চুক্তিসমূহের আশু বাস্তবায়নে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশসমূহকে তাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ, স্বল্পোনড়বত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও মধ্যম আয়ের দেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের বাণিজ্য বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর আমরা প্রভূত গুরুত্ব আরোপ করছি। এই প্রচেষ্টার আরেকটি অনুষঙ্গ হলো আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমন্বয় ও আন্তঃসংযোগ।
৬৯. প্রয়োজনানুযায়ী ঋণ অর্থায়ন, ঋণ মওকুফ, ঋণ পুনর্গঠন ও সুষ্ঠু ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষণার লক্ষ্যে সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা প্রদানের প্রভূত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বল্পোনড়বত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং কতিপয় উনড়বত দেশসহ অনেক দেশই ঋণ সংকটে নিপতিত হওয়ার পথে রয়েছে এবং কিছু দেশ ইতিমধ্যেই এ সংকটে নিমজ্জিত। ঋণের পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় রাখা ঋণ গ্রহণকারী দেশের কর্তব্য। অবশ্য আমরা এও মনে করি যে ঋণ প্রদানকারী দেশেরও উচিত এমনভাবে ঋণ সহায়তা প্রদান করা যাতে করে একটি দেশের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সহনীয় (পরিশোধযোগ্য) মাত্রা অতিক্রম না করে। যেসব দেশ ঋণ মওকুফ সুবিধা লাভ করেছে এবং সহনীয় পরিমাণের ঋণগ্রহণ মাত্রা অর্জন করেছে তাদের ঋণপরিশোধ সক্ষমতা বজায় রাখতে আমরা সহায়তা দান করব।
৭০. আমরা এতদ্বারা একটি প্রযুক্তি পৃষ্ঠপোষণ পদ্ধতির প্রবর্তন করছি, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সমর্থনকল্পে আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডার মাধ্যমে যার পত্তন ঘটেছিল। এ প্রযুক্তি পৃষ্ঠপোষণ পদ্ধতি কার্যকর হবে সদস্য রাষ্ট্র, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত, বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী, জাতিসংঘভুক্ত সংস্থাসমূহ ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্যদের মধ্যকার বহুঅংশীভিত্তিক পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এবং এ পদ্ধতির সংগঠন ও বাস্তবায়নে থাকবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক জাতিসংঘের একটি আন্তঃসংস্থা কার্যদল, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনাবিষয়ক পার¯পরিক সহযোগিতামূলক একটি বহুঅংশীভিত্তিক ফোরাম এবং একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
- টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃসংস্থা কার্যদলের ভূমিকা হবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরে সমন্বয় ও সঙ্গতি সাধন এবং পার¯পরিক সহযোগিতার প্রবর্ধন। এর ফলে বৃদ্ধি পাবে দক্ষতা ও সম্মিলিত-শক্তি এবং বিশেষ করে অর্জিত হবে সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ বাড়ানোর লক্ষ্য। সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর দশজন প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে এ কার্যদল তার কর্মকা- পরিচালনা করবে। এর কার্যপরিধির অন্তর্ভুক্ত থাকবে: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক পার¯পরিক সহযোগিতামূলক বহুঅংশীভিত্তিক ফোরামের সভা আয়োজন, এ ফোরাম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ধরন-প্রকরণ বিষয়ে প্রস্তাব প্রস্তুতকরণসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের নির্মাণ ও তা চালুকরণ। এই দশজন প্রতিনিধি জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক দুই বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। জাতিসংঘের সকল সংস্থা, তহবিল ও কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কার্যকর কমিশনগুলো এই কার্যদলে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। প্রাথমিকভাবে এর সংগঠনে থাকবে সেই সব সংস্থা যারা বর্তমানে প্রযুক্তি পৃষ্ঠপোষণা বিষয়ক অনানুষ্ঠানিক কার্যদলের সমন্বয় সাধন করে। এসব সংস্থার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: জাতিসংঘ সচিবালয়ভুক্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিদপ্তর, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি, জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন, বিশ্ব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বিষয়ক সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংক।
- জাতিসংঘের অভ্যন্তরে ও বাইরে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি বিদ্যমান বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক উদ্যোগ, প্রণালি ও কর্মসূচির তথ্য সমাহারের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রায়ন বহন করে; যা এই তথ্যভান্ডারে প্রবেশের দ্বারপথ হিসেবে কাজ করবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক তথ্য, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রাপ্তির পথ সুগম করবে এই প্ল্যাটফর্ম। পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা সহায়ক উদ্যোগ ও নীতিমালা এবং এ সংশ্লিষ্ট উত্তম চর্চা, দৃষ্টান্ত ও শিক্ষণীয় সম্পর্কে জানা যাবে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে। বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত সবার জন্য উন্মুক্ত প্রাসঙ্গিক বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার প্রচারেও সহায়তা দেবে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি তৈরি হবে একটি স্বতন্ত্র কারিগরি মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বিবেচিত হবে জাতিসংঘের অভ্যন্তরে ও বাইরের অন্যান্য উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট উত্তম চর্চা, দৃষ্টান্ত ও শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ। ফলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যাবে এবং পাওয়া যাবে এসব প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার। নতুন প্ল্যাটফর্মটি দ্বৈততা পরিহার ও সম্মিলিত-বর্ধিত-ফলাফল অর্জনসহ বর্তমান প্ল্যাটফর্মের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারবে।
- প্রতি বছর দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক বহুঅংশীজনভিত্তিক ফোরামের সভা। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই সমাবেশে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ বাস্তবায়নের জন্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা-পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অংশীজনদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া তৈরি, সমমনা ও একই ধরনের লক্ষ্যবিশিষ্ট্য অংশীজনদের মাঝে যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত স্থান হিসেবে কাজ করবে এই ফোরাম। যৌথ বৈজ্ঞানিক প্রয়াসে, উদ্ভাবনা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে এবং প্রযুক্তির চাহিদা ও ঘাটতি নিরূপণে ও নিরীক্ষণে বহুঅংশীজনভিত্তিক পার¯পরিক সহযোগিতার বাতাবরণ নির্মাণে সহায়তা করবে এই ফোরাম। এই অংশীজনভিত্তিক প্রয়াসের আরও একটি উদ্দেশ্য হবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির সৃজন, হস্তান্তর ও প্রচার। উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের সভার পূর্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় ফোরামের সভা আহ্বান করবেন। বিকল্পভাবে, অন্যান্য ফোরাম ও সম্মেলনের সাথে যৌথভাবেও এই ফোরামের সভা হতে পারে; এক্ষেত্রে বিবেচনায় থাকবে ফোরামের বিষয়বস্তু অথবা অন্যান্য ফোরাম ও সম্মেলনের সঙ্গে আলোচ্য ফোরামের সংশ্লিষ্টতা ও সঙ্গতি। এই সভা অনুষ্ঠিত হবে দুই সদস্যরাষ্ট্রের যৌথ সভাপতিত্বে। সভার আলোচনাসমূহের একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হবে। ২০১৫-উত্তর উন্নয়ন এজেন্ডার বাস্তবায়নোত্তর পদেক্ষেপ ও পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের ইনপুট হিসেবে সভাপতিদ্বয় কর্তৃক সভার সারসংক্ষেপের বিশদরূপ উপস্থাপন করা হবে।
- বহুঅংশীজনভিত্তিক ফোরামের সারসংক্ষেপ উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের সভায় অবগত করা হবে। কার্যদলের বিশেষজ্ঞ মতামত বিবেচনায় নিয়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক বহুঅংশীজনভিত্তিক ফোরামের পরবর্তী সভার বিষয়বস্তু নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের সভায়।
৭১. আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি যে, এই এজেন্ডা এবং বাস্তবায়নের উপায়সহ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ সর্বজনীন, অবিচ্ছেদ্য ও একই সূত্রে বাঁধা।
[1] উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা ২৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় (সিদ্ধান্ত ৬৯/৩১৩)।
৭২. পরবর্তী পনেরো বছর ব্যাপী এই এজেন্ডার বাস্তবায়ন কাজের পদ্ধতিগত ফলো-আপ ও পর্যালোচনায় নিয়োজিত থাকার বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি বলিষ্ঠ, স্বতঃপ্রণোদিত, কার্যকর, অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও সমন্বিত ফলো-আপ ও পর্যালোচনা কাঠামো এজেন্ডা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কাউকে পেছনে রেখে অগ্রসর না হওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করে, এই এজেন্ডার বাস্তবায়ন অগ্রগতি অনুসরণে ও সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন হার অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই পরিকাঠামো।
৭৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সক্রিয় এই পরিকাঠামো নাগরিকদের প্রতি আমাদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করবে, এজেন্ডার উদ্দেশ্য অর্জনে কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত করবে এবং পারস্পরিক শিক্ষণ, উত্তম অনুশীলন ও দৃষ্টান্ত বিনিময়ের উপযোগী আবহ সৃষ্টি করবে। যৌথ চ্যালেঞ্জসমূহ অতিক্রমে এবং নতুন ও উদীয়মান বিষয় চিহ্নিতকরণে পর্যাপ্ত সমর্থনের ব্যবস্থাও এটি করবে। এটি একটি সর্বজনীন ও বৈশ্বিক এজেন্ডা বিধায় দেশসমূহের মধ্যকার পার¯পরিক বিশ্বাস ও ঐকমত্য এক্ষেত্রে প্রভূত গুরুত্ব বহন করে।
৭৪. সকল পর্যায়ে ফলো-আপ ও পর্যালোচনা নিম্নোক্ত নীতিসমূহের দ্বারা পরিচালিত হবে:
(ক) ফলো-আপ ও পর্যালোচনা হবে স্বপ্রণোদিত ও স্ব স্ব দেশের নেতৃত্বাধীন, দেশজ বাস্তবতাসক্ষমতা ও উন্নয়নের পর্যায় অনুগামী এবং নীতি স্বাধীনতা ও অগ্রাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জাতীয় স্বত্বাধিকার টেকসই উন্নয়ন অর্জনের মূল চাবিকাঠি হওয়ায় বৈশ্বিক পর্যালোচনার প্রাথমিক ভিত্তি জাতীয় সরকারি তথ্য-উপাত্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পর্যায়ের প্রক্রিয়াসমূহ হবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যালোচনার মূলভিত্তি।
(খ) বাস্তবায়নের উপায়সহ বৈশ্বিক অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের বাস্তবায়নপরিবী ক্ষণ সকল দেশে এমন প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হবে যাতে করে এসব অভীষ্টের সর্বজনীন, সমন্বিত ও আন্তঃসম্পর্কযুক্ত রূপের প্রতিফলন ঘটে; পাশাপাশি বিবেচিত হয় টেকসই উন্নয়নের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত তিনটি মাত্রা।
(গ) ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় একটি দীর্ঘমেয়াদি ধারা বজায় রাখা হবে, চিহ্নিত করা হবে অর্জন, চ্যালেঞ্জ, ঘাটতি ও সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকসমূহ; এ প্রক্রিয়া দেশসমূহের সমৃদ্ধ নীতি নির্বাচনে সহায়ক হবে, সহায়ক ভূমিকা রাখবে প্রয়োজনীয় বাস্তবায়নে পদ্ধতি ও অংশীদারিত্বের সমাবেশ ঘটাতে এবং ফলপ্রসূ সমাধান ও উত্তম চর্চাসমূহ চিহ্নিতকরণে। সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা রাখবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যবস্থার সমন্বয় ও কার্যকারিতায়।
(ঘ) এ প্রক্রিয়া সকলের জন্য উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ হবে এবং সকল প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের প্রতিবেদন প্রণয়নে সহায়তা প্রদান করবে।
(ঙ) প্রক্রিয়াসমূহ হবে জন-মানুষকেন্দ্রিক, জেন্ডার সংবেদনশীল, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সমাজের দরিদ্রতম, অরক্ষিত-ঝুঁকিগ্রস্ত ও সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ অগ্রাধিকারযুক্ত।
(চ) প্রাপ্যতা সাপেক্ষে এগুলো হবে বিদ্যমান প্ল্যাটফর্ম ও প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তিপ্রাপ্ত, দ্বৈততা পরিহারী এবং জাতীয় পরিস্থিতি, সক্ষমতা, চাহিদা ও অগ্রাধিকারের প্রতি সংবেদনশীল। নতুন বিষয় ও নতুন রীতি-পদ্ধতির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো বিবর্তিত ও অভিযোজিত হবে এবং জাতীয় প্রশাসনের প্রতিবেদনভার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখবে।
(ছ) ভৌগোলিক অবস্থান এবং জাতীয় পরিস্থিতির প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সাপেক্ষে ফলো-আপ ও পর্যালোচনা হবে যথাযথ ও সুক্ষ্ম বিশ্লেষণনির্ভর, মানসম্মত, সহজলভ্য, সময়ানুগ ও নির্ভরযোগ্য এবং আয়, জেন্ডার, বয়স, জাতিসত্তা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, অভিবাসনগত অবস্থান, অভিযোজন, প্রতিবন্ধিতা, বিভাজিত তথ্য-উপাত্ত নির্ভর রাষ্ট্রকৃত মূল্যায়নে সমৃদ্ধ।
(জ) আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ, স্বল্পোনড়বত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রয়োজন হবে জাতীয় তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থা ও মূল্যায়ন কর্মসূচির জোরদারকরণ কর্মসূচিসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বর্ধিত সহায়তা।
(ঝ) জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থার কার্যকর সমর্থন থাকবে ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায়।
৭৫. অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের ফলো-আপ ও পর্যালোচনার জন্য প্রণীত হবে একগুচ্ছ বৈশ্বিক নির্দেশক। এসব নির্দেশকের স¤পূরক হিসেবে কাজ করবে সদস্য দেশগুলো কর্তৃক প্রস্তুতকৃত আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের নির্দেশকসমূহ। যে সকল লক্ষ্যমাত্রার জন্য জাতীয় বা বৈশ্বিক পর্যায়ের ভিত্তিতথ্য এখনও প্রস্তুত নেই তাদের বিপরীতে ভিত্তিতথ্য প্রস্তুতের জন্য গৃহীত কর্মকান্ডের ফলাফলের অতিরিক্ত পদক্ষেপ হিসেবে এ সম্পূরক নির্দেশকসমূহ প্রস্তুত করা হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের নির্দেশক সংক্রান্ত আন্তঃসংস্থা বিশেষজ্ঞ দল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বৈশ্বিক নির্দেশক কাঠামো ২০১৬ সালের মার্চ মাস নাগাদ পরিসংখ্যান পরিষদ কর্তৃক স্বীকৃত হবে এবং পরবর্তীতে স্ব স্ব কার্যপরিধি অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হবে। এ নির্দেশক কাঠামো হবে সহজ কিন্তু বলিষ্ঠ এবং বাস্তবায়নের উপায়সহ সকল অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার সাথে এর সংশ্লিষ্টতা থাকবে এবং সংরক্ষিত হবে অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক ভারসাম্য, সমন্বয় ও আকাক্সক্ষা।
৭৬. আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ, স্বল্পোনড়বত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর ও তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য আমরা সহায়তা প্রদান করব। ফলস্বরূপ উচ্চমানসম্পন্ন, সময়ানুগ, নির্ভরযোগ্য ও বিভাজিত উপাত্ত সহজলভ্য হবে। ভূ-পর্যবেক্ষণ ও ভূ-স্থানিক তথ্যসহ বিস্তৃত পরিসরের বিবিধ তথ্য-উপাত্তের কার্যকর ব্যবহারের জন্য আমরা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক উপায়ে যথোপযুক্ত সরকারি-বেসরকারি পারস্পপরিক সহযোগিতার সংবর্ধন ঘটাব; পাশাপাশি অগ্রগতি সাধন ও পরিমাপণে আমরা জাতীয় স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করব।
৭৭. স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়মিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি পর্যালোচনা করার বিষয়ে আমরা কৃতসঙ্কল্প। ফলো-আপ ও পর্যালোচনা সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিসমূহের সহায়তা যথাসম্ভব গ্রহণ করা হবে। জাতীয় প্রতিবেদনসমূহে অগ্রগতি পর্যালোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং সেখানে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত থাকবে। আঞ্চলিক সংলাপ ও বৈশ্বিক পর্যালোচনার পাশাপাশি বিভিনড়ব পর্যায়ের ফলো-আপ কার্যক্রমে এরা সুপারিশ প্রদান করবে।
জাতীয় পর্যায়
৭৮. এই এজেন্ডার সার্বিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাস্তবানুগ দ্রুততম সময়ে উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা সকল সদস্য রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করি। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ব্যবস্থায় উত্তরণে এই উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে এবং এর ভিত্তি হবে বিদ্যমান পরিকল্পনা কৌশলসমূহ, যেমন স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলসমূহ।
৭৯. স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়মিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি পর্যালোচনা করার বিষয়ে আমরা সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে উদ্বুদ্ধ করছি। এই প্রক্রিয়া হবে (দেশসমূহের) স্ব-নেতৃত্বাধীন ও রাষ্ট্র-চালিত। এসব পর্যালোচনা হবে আদিবাসী জনগোষ্ঠী, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত ও অন্যান্য অংশীজনদের মতামতপুষ্ট এবং জাতীয় পরিস্থিতি, নীতিমালা ও অগ্রাধিকারসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।
আঞ্চলিক পর্যায়
৮০. স্বপ্রণোদিত পর্যবেক্ষণ, উত্তম চর্চা ও যৌথ লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ের ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সহশিক্ষণের উত্তম সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কমিশন ও সংস্থাসমূহের সহযোগিতা আমরা সাদরে গ্রহণ করব। অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক প্রক্রিয়া জাতীয় পর্যালোচনা দ্বারা ঋদ্ধ হবে এবং পর্যায়ক্রমে সমৃদ্ধ করবে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের ও অন্যান্য বৈশ্বিক পর্যায়ের ফলো-আপ ও পর্যালোচনার প্রয়াসসমূহকে।
৮১. আঞ্চলিক পর্যায়ে বিদ্যমান পর্যালোচনা প্রণালীর গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং পর্যাপ্ত নীতি স্বাধীনতার সুযোগ রেখে সকল সদস্য রাষ্ট্রকে উপযুক্ত আঞ্চলিক ফোরাম চিহ্নিতকরণ ও যোগদানে উৎসাহিত করছি আমরা। জাতিসংঘের আঞ্চলিক কমিশনগুলোকে সদস্য রাষ্ট্রের জন্য এই বিষয়ে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বৈশ্বিক পর্যায়
৮২. ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার বৈশ্বিক পর্যায়ের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম। বিদ্যমান কার্যভার অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ও ফোরামের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে এই ফোরাম। সাফল্য, চ্যালেঞ্জ ও শিক্ষণীয়সহ বিবিধ অভিজ্ঞতা বিনিময় প্রক্রিয়ার পৃষ্ঠপোষণ করবে এই ফোরাম এবং ফলো-আপ এর ক্ষেত্রে প্রদান করবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নির্দেশনা ও সুপারিশমালা। ফলে সমগ্র প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাব্যাপী সুসঙ্গতি ও সমন্বয় সাধিত হবে এবং এজেন্ডার প্রাসঙ্গিকতা ও উচ্চাভিলাষী রূপ বজায় থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি, অর্জন ও উনড়বত ও উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জের পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন ও আগত বিষয়সমূহের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হবে। সকল স্বল্পোনড়বত দেশ, ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশে এবং জাতিসংঘের সকল প্রাসঙ্গিক সম্মেলন ও প্রক্রিয়ার ফলো-আপ ও পর্যালোচনা ব্যবস্থার মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপিত হবে।
৮৩. বৈশ্বিক নির্দেশক কাঠামো অনুসরণ করে, জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থার মাধ্যমে সৃষ্ট উপাত্ত ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে জাতিসংঘের সাংগঠনিক ব্যবস্থার সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক প্রস্তুতকৃত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ক বার্ষিক অগ্রগতি প্রতিবেদন দ্বারা সমৃদ্ধ হবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের ফলো-আপ ও পর্যালোচনা। এই ফোরামের আরেকটি সহায়ক তথ্য-উৎস হবে বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও নীতির কার্যকর সংযোগ সাধন করবে এবং দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নে আগ্রহী নীতিনির্ধারকদেরকে একটি শক্তিশালী তথ্যভিত্তিক প্রামাণ্য উৎস হিসেবে কাজ করবে। এই বৈশ্বিক প্রতিবেদনের আওতা ও পরিধি, পদ্ধতিগত বিষয় ও প্রকাশনার সংখ্যা ও অগ্রগতি প্রতিবেদনের সঙ্গে এর সম্পর্ক বিষয়ে একটি পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়া পরিচালনের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি মহোদয়কে আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি; ২০১৬ সালের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের অধিবেশনে মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণায় এর প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা যাবে।
৮৪. ২০১৩ সালের ৯ জুলাই গৃহীত সাধারণ পরিষদের ৬৭/২৯০ সংখ্যক সিদ্ধান্ত অনুসরণপূর্বক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম নিয়মিত পর্যালোচনা কার্য সম্পাদন করবে। পর্যালোচনা হবে স্বপ্রণোদিত বা ঐচ্ছিক এবং প্রতিবেদন প্রণয়নে উৎসাহদানকারী; এই প্রক্রিয়ায় উনড়বত ও উন্নয়নশীল দেশ ছাড়াও অন্তর্ভুক্ত হবে সুশীল সমাজ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতসহ জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে এই পর্যালোচনা পরিচালিত হবে।
৮৫. পরস্পর সম্পর্কযুক্ত (cross-cutting) বিষয়সহ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনাও সম্পাদিত হবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে। এ পর্যালোচনার সহায়ক হিসেবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কর্মভিত্তিক কমিশনসমূহ এবং অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা ও ফোরামের পর্যালোচনা থাকবে; এসব পর্যালোচনার সময় অভীষ্টসমূহের সমন্বিত প্রকৃতি ও আন্তঃসংযোগের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এসব পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং সম্ভব ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন প্রক্রিয়ার সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৮৬. আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডায় বর্ণিত উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন সংক্রান্ত ফলাফলের ফলো-আপ ও পর্যালোচনা এবং কাঠামোর অঙ্গীভূত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে নির্ধারিত ফলো-আপ ও পর্যালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন বিষয়ক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের বার্ষিক ফোরামের উপসংহার ও নির্দেশনা উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক কাঠামোর সার্বিক ফলো-আপ ও পর্যালোচনার ইনপুট হিসেবে কাজ করবে।
৮৭. উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম সাধারণ পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত সভায় আলোচ্য এজেন্ডা ও এর বাস্তবায়ন বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নির্দেশনা প্রদান করবে, যাচাই করবে অগ্রগতি, চিহ্নিত করবে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জসমূহ এবং বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় কর্মব্যবস্থার আয়োজন করবে। সাধারণ পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরবর্তী উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের সভা অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালে; অর্থাৎ সভার সময় ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস সাধিত হলো যাতে করে চতুর্বার্ষিক সার্বিক নীতি-পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার সাথে এর সর্বোচ্চ সমন্বয় সম্ভব হয়।
৮৮. জাতিসংঘের উন্নয়ন কাঠামো কর্তৃক প্রণীত নতুন এজেন্ডার সার্থক বাস্তবায়নের জন্য সুসঙ্গত ও সমন্বিত সহায়তা কার্যক্রম প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমরা পদ্ধতিভিত্তিক কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করছি। বাস্তবায়ন সহায়তার পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ কর্মব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং অগ্রগতি ও বাধাবিঘড়ব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের বিষয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের চলমান সংলাপকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে আমরা কর্মব্যবস্থা গ্রহণ করব।
৮৯. সিদ্ধান্ত ৬৭/২৯০ অনুসারে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম প্রধান দলসমূহকে ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অংশীজনদের ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে সহায়তা প্রদান করবে। এ সকল কুশীলবকে আমরা এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের অবদান বিষয়ে আমাদের অবগত করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
৯০. মহাসচিব মহোদয়কে আমরা, সদস্যরাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে পরামর্শক্রমে, ২০১৬ সালের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের প্রস্তুতি হিসেবে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ পরিষদের সপ্ততিতম অধিবেশনে বিবেচনার জন্য একটি প্রতিবেদন প্রণয়নের অনুরোধ জানাচ্ছি। এই প্রতিবেদনে বৈশ্বিক পর্যায়ের সুসঙ্গত, দক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ফলো-আপ ও পর্যালোচনার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলো চিহ্নিত হবে। এই প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতাধন্য উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের জন্য ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রস্তুতের সাংগঠনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রস্তাব এবং স্বপ্রণোদিত সাধারণ প্রতিবেদন প্রস্তুতের নির্দেশনা সংক্রান্ত সুপারিশ থাকবে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব সম্পর্কে সু¯পষ্ট নির্দেশনা থাকবে এবং নির্দেশনা থাকবে ধারাবাহিক বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনার অংশ হিসেবে বার্ষিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে, এবং উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের পর্যায়নুবৃত্তিক পর্যালোচনার বিকল্প সম্পর্কে।
৯১. টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার সার্থক বাস্তবায়ন ও পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে একটি উনড়বততর ধরিত্রী রচনায় আমাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।