নোয়াখালীর প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা চাটখিল। ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট উপজেলাটির যাত্রা শুরু হয়। ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে উপজেলাটি গঠিত। গত ২৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের ফলাফলে এই উপজেলায় মোট ১ হাজার ৫ শত ৭১ জন শিক্ষার্থী পাশ করলেও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সবমিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২ শত ৬০ জন। ভর্তিকৃত এই শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি (৫১.৮১ ভাগ) বিভিন্ন ধাপে ধাপে ঝরে গেছে।
ভর্তি
ব্যানবেইস এর ২০২২ সালের বার্ষিক শিক্ষা জরিপে প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এই উপজেলায় এইচএসসিতে সাধারণ ৫টি কলেজে মোট শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল ২ হাজার ৫ শত ৭৮ জন, আলিম শ্রেণিতে ৮টি মাদ্রাসায় ভর্তির এই সংখ্যা ৪ শত ৫২ জন এবং এইচএসসি (বিএমটি) শাখায় ২টি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল ২ শত ৩০ জন শিক্ষার্থী। সবমিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২ শত ৬০ জন।
ফর্ম পূরণ
২০২৩ সালের জুলাই মাসের শেষদিকে ফর্ম পূরণের সময় শেষ হয়। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ে কলেজগুলোতে এইচএসসির ফর্ম পূরণ করেছেন মোট ১ হাজার ৭ শত ৭ জন, মাদ্রাাসাগুলোতে আলিম শ্রেণির ফর্ম পূরণ করেছে ২ শত ৮৪ জন এবং কারিগরির দ্বাদশ শ্রেণির বিএমটিতে ফর্ম পূরণ করেছে ১ শত ৩৬ জন শিক্ষার্থী। তিনটি বোর্ড মিলিয়ে এই সংখ্যা মোট ২ হাজার ১ শত ২৭ জন। একাদশ শ্রেণিতে এইচএসসি, আলিম, ও বিএমটিতে ভর্তি হওয়া বাকি মোট ১ হাজার ১ শত ৩৩ জন শিক্ষার্থীদের প্রায় সকলেই ঝরে গেছেন। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ক্লাস শুরু হওয়া এই শিক্ষার্থীদের ফর্ম পূরণ পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ছিল ১ বছর ৫ মাসেরও কম। এই সময়ের ব্যবধানে ৩৪.৭৫ ভাগের ঝরে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন স্থানীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
পরীক্ষা
এই শিক্ষার্থীরা ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট শুরু হওয়া এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। ফর্ম পূরণ করা ২ হাজার ১ শত ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী (১.১৮ ভাগ) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই ঝরে যায়।
ফলাফল
গত ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি; এই তিনটি বোর্ড মিলিয়ে এই উপজেলায় মোট ২ হাজার ১ শত ২ জন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মোট পাশ করেছে ১ হাজার ৫ শত ৭১ জন শিক্ষার্থী। এই ধাপে ফেল করার মাধ্যমে ঝরেছে ৫৩১ জন শিক্ষার্থী (২৫.২৬ ভাগ)। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ফেল করা শিক্ষার্থীর কারো কারো আগামী বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা থাকলেও অন্যান্য ধাপে ঝরে পড়া বাকি ১ হাজার ১ শত ৫৮ জনের (৩৫.৫২ ভাগ) পড়াশোনায় ফেরার তেমন কোনো সম্ভাবনাই নেই।
স্থানীয় চাটখিল মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার এই হার অন্য সময়ের চেয়ে বেশি, যা করোনার কারণে বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তবে এই সময়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করে তাদেরকে শ্রেণি কার্যক্রমে ধরে রাখতে আমাদের শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের প্রতি আগের চেয়ে বেশি যত্নশীল আচরণ করেছেন।”
করোনা, মোবাইল আসক্তি, এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অসচেতনতাকে ঝরে পড়ার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন চাটখিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আহসান উল্যা চৌধুরী। পরিবারের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকবৃন্দ যে ভূমিকা রাখার কথা, করোনার কারণে সেখানে কিছুটা হলেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঠিক কী কারণে এত বেশি পরিমাণ শিক্ষার্থী ঝরে গিয়েছে, এই বিষয় নিয়ে আমরা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সাথেও কথা বলেছি। অতিমারি করোনা, প্রবাসে গমন, নারী শিক্ষার্থীদের বিয়ে, আর্থিক সংকট, আগের চেয়েও কম শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি প্রাপ্তি, এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট আসক্তিকে ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ মনে করছেন তারা।
চাটখিলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, “করোনার কারণে ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। এছাড়াও এই উপজেলার অনেক শিক্ষার্থী একাডেমিক একটি স্তরের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও সেটি শেষ না করে কিংবা কোনো বিশেষ কোনো দক্ষতা অর্জন না করে বিদেশে গিয়ে সস্তা পারিশ্রমিকে কাজ করেন বলে আমরা জানি। এখানাকার ৬০ ভাগের বেশি নারী শিক্ষার্থী। বিয়ে হয়ে গেলে এই শিক্ষার্থীরাও নানা কারণে পড়াশোনা জারি রাখেন না। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা ঝরে পড়া রোধে আগামীতে কাজ করবো।”
___
‘যুবদের জন্য উন্নয়ন সাংবাদিকতা’ বিষয়ক একটি কর্মশালা গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে আয়োজন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। এই কর্মশালায় বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ থেকে ৩৭জন যুব সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার বিষয়বস্তু ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদেরকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের অর্জন ও প্রতিবন্ধকতা অথবা উন্নয়ন নিয়ে যুবদের চাহিদাও প্রত্যাশা সম্পর্কে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়।
এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন জনাব মোঃ আবুল কালাম (আজাদ), সাব-এডিটর, দৈনিক চাটখিল বার্তা ও উপজেলা প্রতিনিধি, দৈনিক কালবেলা।
Leave A Comment