দেশের সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য নিরসন এবং তাদের অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সরকারকে “বৈষম্য বিরোধী আইন” প্রণয়ন করতে হবে। দেশের সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা নিরুপণ ও বিষয়ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালায় তাদের উন্নয়ন চাহিদাসমূহ অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। এছাড়া দেশের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর যুবসম্প্রদায়ের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহন করা প্রয়োজন।

২৭ আগস্ট ২০১৯ মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নঃ সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার” শীর্ষক এক সংলাপে এসকল বক্তব্য উঠে আসে। সংলাপটি হেকস/ইপার, ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও), নেটওয়ার্ক ফর নন-মেইনস্ট্রীমড মারজিনালাইজড কমিউনিটিস (এনএনএমসি) এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ, যৌথভাবে আয়োজন করে। সংলাপের শুরুতে হেকস/ইপার থেকে জনাব সিফাত ইমরানুর রউফ, আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ প্রতিবেদনে তিনি এসডিজি’র বিভিন্ন অভীষ্ট এবং সরকারি বিভিন্ন নীতি-পরিকল্পনার প্রেক্ষাপটে দেশের সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমানের বিভিন্ন সমস্যা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

জনাব ফজলে হোসেন বাদশা, এমপি, আহ্বায়ক, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক বিষয়ক সংসদীয় ককাস, এ সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, দেশের সমতলের আদিবাসী ও দলিতদের অধিকার নিশ্চিতকরণের সরকারের পাশাপাশি নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন প্রয়োজন। জাতীয় সংসদে একটি “আদিবাসী অধিকার আইনের খসড়া” প্রদান করা হয়েছে। এই আইনটি প্রণয়ন হলে দেশের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতে শুধু তাদের সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী নয় বরং সকল নাগরিকের ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে। এসকল বৈষম্য বিলোপ হলেই দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও আহ্বায়ক, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ, এ সংলাপে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন সরকারি জরিপে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর যথাযথ সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব পাওয়া যায় না। এর ফলে বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালায় তাদের উন্নয়ন চাহিদা অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের আদিবাসী, দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী জন্য একটি বিশেষ জরিপ পরিচালনা করা জরুরি এবং দেশের কৃষি শুমারিতে আদিবাসীদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সেই সাথে, একটি কার্যকর বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব মোঃ নূর কুতুবুল আলম বলেন, সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সচেষ্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন কার্যকরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও ইতিবাচক মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

এর আগে অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে হেকস/ইপার বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব আবুল হাসনাত দলিত ও সমতলের আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় তার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এই আলোচনার সাফল্য কামনা করেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের সমতলের আদিবাসী প্রতিনিধি আরতি মার্ডি এবং দলিত প্রতিনিধি চাঁদনী রাণী বাশফোঁড় এ সংলাপে বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। সম্মানিত আলোচক হিসেবে সংলাপে সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন উজ্জ্বল আজিম, ভূমি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, নির্মল চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, এবং জনাব নুরুল আলম শুভ, কো-অর্ডিনেটর, এনএনএমসি। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমতলের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পীরগঞ্জ, এবং আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন জনাব মুহম্মদ শহীদ উজ জামান, নির্বাহী পরিচালক, ইএসডিও।

এ সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি উন্নয়নকর্মী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ ঠাকুরগাঁওসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সমতলের আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।