ধরিত্রীর রূপান্তর: ২০৩০ সালের পথে টেকসই উন্নয়ন অভিযাত্রা

মুখবন্ধপ্রস্তাবনাঘোষণাটেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রাবাস্তবায়নের উপায় বৈশ্বিক অংশীদারিত্বফলো-আপ পর্যালোচনা

২০১৫ সালে জাতিসংঘে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বা ২০৩০ এজেন্ডা গৃহীত হওয়ার পর পৃথিবীব্যাপী উন্নয়ন চিন্তায় ও কর্মকাণ্ডে এক নতুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশেও এই নতুন উন্নয়ন দর্শনের ঢেউ এসে লাগছে।

রূপান্তরমুখী, অংশীদারিত্বমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সার্বজনীন – এসডিজির বিশেষ এই বৈশিষ্ট্যকে সামনে রেখে ২০১৬ সালের জুন মাসে কয়েকজন উদ্যোগী ব্যক্তির চেষ্টায় এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়। বেসরকারি ও ব্যক্তিখাতের দেশব্যাপী বিভিন্ন পর্যায়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে এই প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে। প্ল্যাটফর্মের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এসডিজি বাস্তবায়নের জাতীয় উদ্যোগের সাথে যুক্ত হওয়াএবং একই সাথে আরেকটি বিশেষ উদ্দেশ্য হলো এসডিজির অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ সম্পর্কে সকল পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

এসডিজি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকেই বিভিন্ন সময়ে এই এজেন্ডা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক ২০৩০ এজেন্ডা শীর্ষক দলিলটি বারবার ব্যবহার করতে হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে এসডিজি’র বিষয়সমূহ বেশ জটিল বিধায় এর বিভিন্ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও বোঝার জন্য দলিলটির একটি বাংলা অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। সেই চাহিদা পূরণ করার জন্যই বর্তমান প্রকাশনাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

এই প্রকাশনাটি প্রস্তুতকরণে প্ল্যাটফর্মের সচিবালয় হিসেবে কার্যরত সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সহকারী প্রধান জনাব শেখ মঈনুল ইসলাম মঈনকে, যিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দলিলটির বাংলা অনুবাদে সাহায্য করেছেন। অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক পর্যায়ে এই দলিলটি সম্পাদনায় সহায়তা করেছেন। তাকেও ধন্যবাদ জানাই। এই প্রকাশনার একটি অংশ (অভীষ্ট, লক্ষ্যমাত্রা এবং এর ব্যাখ্যাসমূহ) বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন-এর সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক বাংলায় অনুদিত প্রকাশনার পরিমার্জিত রূপ।

বাংলায় অনুদিত এই প্রকাশনাটি এসডিজি কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। একই সাথে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে এসডিজি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

আশা করি এসডিজি’র মূল চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এমন একটি দেশে পরিণত হবে, যেখানে উন্নয়ন সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রে “কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না।”

ঢাকা
নভেম্বর২০১৭

. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
আহ্বায়ক
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মবাংলাদেশ

পৃথিবী ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এই এজেন্ডা। ব্যাপকতর স্বাধীনতায় বৈশ্বিক শান্তির বলিষ্ঠ ভিত রচনাও এর উদ্দেশ্য। আমরা স্বীকার করি যে, চরম দারিদ্র্যসহ সকল মাত্রায় ও সকল ধরনের দারিদ্র্য দূরীকরণ হলো আমাদের সময়কার বৃহত্তম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যা টেকসই উন্নয়নের একটি অনস্বীকার্য পূর্বশর্তও। সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পৃথিবীর সকল দেশ এবং সকল অংশীজন (ও অংশী প্রতিষ্ঠান) এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে অংশ নেবে। অভাব-অনটন ও দারিদ্র্যের নিপীড়ন থেকে মানবজাতির মুক্তিকল্পে এবং পৃথিবী নামক গ্রহের নিরাময় সাধনে, এবং সর্বোপরি এ গ্রহকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একটি টেকসই ও প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু পথের অভিমুখে বাঁক পরিবর্তন এখন পৃথিবীর জন্য অপরিহার্য। এ জন্য আমরা সাহসী ও রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ নিতে স্থিরসংকল্প। এই যৌথ অভিযাত্রার শুরুতেই আমরা প্রতিজ্ঞা করছি পেছনে পড়ে থাকবে না কেউ। যে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার ঘোষণা আজ আমরা করছি, তা এই নতুন বিশ্বজনীন এজেন্ডার ব্যাপ্তি ও উচ্চাকাক্সক্ষারই বহিঃপ্রকাশ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টের যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু এই নতুন অভীষ্ট-লক্ষ্যের যাত্রা, পূর্বসুরি লক্ষ্যসমূহের অসমাপ্ত অংশের সফল সমাপনই এর অভিপ্রায়। সকলের জন্য মানবাধিকার বাস্তবায়ন, নারী-পুরুষের সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও অল্পবয়সী মেয়ের ক্ষমতায়ন এর অন্বিষ্ট। এই অভীষ্টগুলো অবিচ্ছেদ্য, পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং টেকসই উন্নয়নের তিনটি মূল স্তম্ভ – অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশ-এর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করবে। এই অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পরবর্তী পনেরো বছর ধরে পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কর্মোদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে।

জনগণ

সকল রূপে ও সকল মাত্রায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিলুপ্তি সাধনে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে সকল মানুষ যেন একটি স্বাস্থ্যকর, সুষ্ঠু পরিবেশে, মর্যাদায় ও সমতায় তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে।

ধরিত্রী

টেকসই ভোগ ও উৎপাদন, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে পৃথিবী নামক গ্রহের অবক্ষয় রোধে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফলে শুধু বর্তমানের নয়, অনাগত প্রজন্মের চাহিদাও মেটাতে পারবে এই গ্রহ।

সমৃদ্ধি

সকল মানুষ যেন প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্রগতির ধারায় সমৃদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ জীবনের আস্বাদ উপভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

শান্তি

ভয়-ভীতি ও সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ, ন্যায়পরায়ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার বিকাশে আমরা প্রতিজ্ঞবদ্ধ। শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া যেমন টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি শান্তির পূর্বশর্তও হলো টেকসই উন্নয়ন।

অংশীদারিত্ব

টেকসই উন্নয়নের জন্য পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই এজেন্ডার সফল বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সকল উপায় খুঁজে পেতে সংকল্পবদ্ধ আমরা। এই কর্মযজ্ঞের ভিত্তি হবে বলিষ্ঠ বৈশ্বিক সংহতি এবং এর মূলে থাকবে সবচেয়ে অরক্ষিত-ঝুঁকিগ্রস্ত ও দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর চাহিদা। পৃথিবীর সকল দেশ, সকল মানুষ ও অংশীদজনদের সহযোগে সম্পূর্ণ হবে এই সুবিশাল কর্মপ্রচেষ্টা। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের আন্তঃসংযোগ ও সমন্বিত বৈশিষ্ট্য নতুন এই এজেন্ডার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। পূর্ণ পরিসরে এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের যে অভিলাষ আমরা পোষণ করি তা যদি সফল হয়সবার জীবনে আসবে সারগর্ভ ইতিবাচক পরিবর্তন। ফলে একটি উন্নততর অবস্থায় রূপান্তরিত হবে আমাদের এই ধরিত্রী।

ভূমিকা

১. আমরা, জাতিসংঘভুক্ত দেশসমূহের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ এবং উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিগণ, ২০১৫ সালের ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে মিলিত হয়েছি প্রতিষ্ঠানটির সপ্ততিতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের শুভলগ্নে। নতুন বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের বিষয়ে আমরা আজ স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।

২. আমাদের স্ব স্ব জাতির পক্ষ হয়ে পূর্ণাঙ্গ, সুদূরপ্রসারী ও জনমানুষকেন্দ্রিক, সর্বজনীন ও রূপান্তরমূলক একগুচ্ছ অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে আজ এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি আমরা। ২০৩০ সালের মধ্যে এই এজেন্ডার পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিরলস কর্মপ্রয়াসে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা স্বীকার করি যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে চরম দারিদ্র্যসহ সকল মাত্রার ও সকল ধরনের দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো আমাদের সময়কার দুরূহতম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সমন্বিত প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত এই ত্রিমাত্রিক টেকসই উন্নয়ন অর্জনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টের অর্জনসমূহের ওপর ভিত্তি করে এর অসমাপ্ত অংশের সফল সমাপ্তিই আমাদের উদ্দেশ্য।

৩. আজ ও ২০৩০ সনের মধ্যবর্তী সময়কালের জন্য আমাদের পণ: সর্বত্র ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অবসান; অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় অসমতার বিরুদ্ধে লড়াই, শান্তিপূর্ণ, ন্যায়পরায়ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার বিকাশ, মানবাধিকার রক্ষা ও নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন এবং নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষমতায়ন এবং পৃথিবী ও এর প্রাকৃতিক সম্পদের দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ। আমাদের প্রতিশ্রুতির পরিসরে আরও রয়েছে টেকসই, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, অংশীদারিত্বমূলক সমৃদ্ধি ও সবার জন্য শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টি। তবে এ কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনায় বিবেচিত হবে প্রতিটি দেশের জাতীয় বাস্তবতা – দেশটির সক্ষমতা এবং উন্নয়ন সোপানে তার অবস্থান।

৪. এই সম্মিলিত মহৎ অভিযাত্রার সূচনালগ্নে আমরা অঙ্গীকার করছি: পেছনে পড়ে থাকবে না কেউ। ব্যক্তি-মানুষের আত্মমর্যাদার স্বীকৃতিসহ আমরা চাই সবার জন্য টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার সফল রূপায়ন – সকল দেশ, সকল জাতি, সকল মানুষের জন্য, সমাজের প্রতিটি অংশের জন্য। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকবে সর্বপ্রথম তার কাছেই পৌঁছানো, যে রয়েছে সবার পেছনে।

৫. অভূতপূর্ব ব্যাপ্তি ও গুরুত্ববহ এই এজেন্ডা। পৃথিবীর সকল দেশ কর্তৃক সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এই কর্মসমষ্টি প্রযোজ্য সবার জন্য। প্রতিটি দেশের জাতীয় নীতিমালা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখেই এর সৃষ্টি – বিবেচনায় রাখা হয়েছে জাতীয় বাস্তবতা, সক্ষমতা ও উন্নয়নের বিভিন্ন স্তর। বৈশ্বিক পরিসরের এই অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমষ্টি সমগ্র পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করেছে। পর-পর সমন্বিত ও অবিচ্ছেদ্য এই অভীষ্টমালা টেকসই উন্নয়নের তিনটি মাত্রাকেই সমান গুরুত্ব দিয়েছে – সৃষ্টি করেছে এক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান।

৬. এই অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ দুই বছর ধরে পৃথিবী ব্যাপী সাধারণ মানুষ এবং সুশীল সমাজ ও অন্যান্য অংশীজনের নিবিড় সম্পৃক্ততা ছিল। তাদের গভীর আলোচনা ও পরামর্শের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন ঘটেছে প্রতিটি অভীষ্টে ও লক্ষ্যমাত্রায়। আর বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে সমাজের দরিদ্রতম ও সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মতামত। এই পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সাধারণ পরিষদের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ক উন্মুক্ত কর্মীদল (General Assembly Open Working Group on Sustainable Development Goals) কর্তৃক সম্পাদিত কার‌্যাবলী। এছাড়া ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রদত্ত সমন্বিত প্রতিবেদনটিও এক্ষেত্রে মূল্যবান ভূমিকা রেখেছে।

আমাদের রূপকল্প

৭. এসব অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা ধারণ করেছি উচ্চাভিলাষী ও রূপান্তরমূলক সুদূরপ্রসারী এক সামগ্রিক রূপকল্প। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন এক পৃথিবীর যেখানে থাকবে না ক্ষুধা-দারিদ্র্য  ,  রোগ-শোক  ,  অভাব-অনটন – যেখানে সম্ভব হবে প্রতিটি প্রাণের পূর্ণ বিকাশ। আমরা স্বপ্ন দেখি ভয়-ভীতি  ,  শঙ্কা ও সহিংসতা মুক্ত এক শান্তিময় পৃথিবীর  ,  সর্বজনীন সাক্ষরতায় আলোকিত এক পৃথিবীর। আমরা স্বপ্ন দেখি সেই পৃথিবীর যেখানে সকল স্তরে মানসম্মত শিক্ষায়  ,  স্বাস্থ্যসেবায় ও সামাজিক নিরাপত্তায় রয়েছে সর্বজনীন ও সমতাভিত্তিক প্রবেশাধিকার  ;  যেখানে নিশ্চয়তা রয়েছে শারীরিক  ,  মানসিক ও সামাজিক কল্যাণ লাভের। আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি আমাদের আন্তরিক প্রতিশ্রুতির: নতুন এই পৃথিবীতে মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে নিরাপদ সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধিসম্মত উন্নত জীবনরীতির নিশ্চয়তা থাকবে  ,  থাকবে নিরাপদ  ,  সহজলভ্য ও পুষ্টিদায়ক পর্যাপ্ত খাদ্য। নতুন পৃথিবীর মানুষের বসতিগুলো হবে নিরাপদ অভয়াশ্রম  ;  প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু ও টেকসই  ;  এখানে থাকবে সাশ্রয়ী  ,  নির্ভরযোগ্য ও টেকসই জ্বালানিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার।

৮. আমাদের স্বপ্নমূলে রয়েছে এমন এক পৃথিবী যেখানে মানবাধিকার ও মানব-মর্যাদার প্রতি থাকবে সর্বজনীন শ্রদ্ধাবোধ  ,  থাকবে আইনের শাসন  ,  ন্যায়বিচার  ,  সমতা ও পক্ষপাতহীনতা  ,  জাতিসত্তা ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়গত পার্থক্যের প্রতি এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি থাকবে আন্তরিক মর্যাদাবোধ। যে পৃথিবীতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকায় সাধিত হবে মানব-সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ এবং অর্জিত হবে অংশীমূলক সমৃদ্ধি। যে পৃথিবী শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করে  ,  যেখানে শিশুরা বেড়ে ওঠে সহিংসতা ও শোষণমুক্ত পরিবেশে। যে পৃথিবীতে প্রতিটি নারী ও অল্পবয়সী মেয়ে জেন্ডার সমতার সুফল ভোগ করে এবং তাদের ক্ষমতায়নের পথে সকল আইনগত  ,  অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার অপসারণ ঘটেছে। আমাদের কাক্সিক্ষত পৃথিবী হবে ন্যায্য  ,  সমতাপূর্ণ  ,  সহনশীল  ,  উন্মুক্ত এবং সামাজিক-অন্তর্ভুক্তিমূলক  ,  যেখানে সর্বাগ্রে মেটানো হয় সবচেয়ে অরক্ষিত ও ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষের চাহিদা।

৯. আমাদের আকাক্সক্ষা এমন এক পৃথিবীর সৃষ্টি যেখানে প্রতিটি দেশে টেকসই  ,  স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ঘটবে – সবার জন্য থাকবে শোভন কাজের সুযোগ। যে পৃথিবীতে ভোগ ও বণ্টনের ধরন হবে টেকসই। বায়ুমণ্ডল থেকে ভূমি  ,  ভূগর্ভস্থ জলাধার  ,  নদী  ,  হ্রদ থেকে শুরু করে সাগর-মহাসাগর পর্যন্ত সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার হবে সুনিশ্চিত। যেখানে স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ টেকসই উন্নয়ন  ,  সমাজ উন্নয়ন  ,  পরিবেশের সুরক্ষা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন অপরিহার্য পূর্বশর্ত হিসেবে রয়েছে গণতন্ত্র  ,  সুশাসন এবং আইনের শাসন  ;  যেখানে পাশাপাশি রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহায়ক পরিবেশ। যেখানে উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার হবে জলবায়ু-বৈরিতা-সহিষ্ণু  ,  জীববৈচিত্র্যবান্ধব ও সহনশীল। যেখানে থাকবে প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গতিময় সহাবস্থান  ;  যেখানে সুরক্ষিত থাকবে বণ্যপ্রাণী ও অন্যান্য প্রাণ-প্রজাতি।

আমাদের যৌথ নীতি ও প্রতিশ্রুতি

১০. নতুন এই এজেন্ডা তার পথ নির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিসমূহকে  ;  সেই সাথে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বজায় রেখেছে পূর্ণ শ্রদ্ধা। এর ভিত্তিমূলে রয়েছে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা  ,  আন্তর্জাতিক মানিবাধিকার চুক্তিসমূহ  ,  সহস্রাব্দ ঘোষণা ও ২০০৫ সনের ধরিত্রী সম্মেলনের সুপারিশমালা। উন্নয়ন (বিকাশ লাভের) অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণার মতো অন্যান্য দলিলও ভূমিকা রেখেছে এই এজেন্ডা প্রণয়নে।

১১. জাতিসংঘের সকল সম্মেলন ও শীর্ষসম্মেলনের ফলাফলকে (outcome) আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি যা টেকসই উন্নয়নের দৃঢ় ভিত্তি রচনা করেছে এবং সহায়তা করেছে নতুন এই এজেন্ডার রূপায়নে। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক রিও ঘোষণা  ;  টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক বৈশ্বিক শীর্ষসম্মেলন  ;  সমাজিক উন্নয়ন বিষয়ক বৈশ্বিক শীর্ষসম্মেলন  ;  জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কর্মপরিকল্পনা  ;  বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন  ;  এবং টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলন। স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়ক জাতিসংঘের চতুর্থ সম্মেলন  ,  উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন  ,  স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়ক জাতিসংঘের দ্বিতীয় সম্মেলন  ,  দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস সংক্রান্ত জাতিসংঘের তৃতীয় বৈশ্বিক সম্মেলন প্রভৃতির ফলাফলসহ উল্লিখিত সম্মেলনসমূহের ধারাবাহী উদ্যোগসমূহ বিবেচনায় নিতে আমরা পুনঃনিশ্চয়তা জ্ঞাপন করছি।

১২. আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি যে পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক রিও ঘোষণার সকল নীতির সাথে আমরা সঙ্গতি বজায় রাখব  ,  অন্যান্য নীতির পাশাপাশি সপ্তম নীতিতে বিবৃত   ‘ অভিন্ন কিন্তু পৃথক দায়িত্ব  ’  হবে আমাদের অন্যতম মূলনীতি।

১৩. উপরোক্ত সম্মেলন ও শীর্ষসম্মেলনে প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন চ্যালেঞ্জসমূহ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত সমাধান  ;  প্রয়োজন এক নতুন পন্থার অবলম্বন। সকল ধরনের ও মাত্রায় দারিদ্র্যের অবসান  ,  অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় অসমতার মোকাবেলা  ,  ধরিত্রীর সংরক্ষণ  ,  স্থিতিশীল  ,  অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন – টেকসই উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট এসব বিষয়সমূহ আন্তঃসম্পর্কযুক্ত ও পরস্পর নির্ভরশীল।

আমাদের আজকের পৃথিবী

১৪. পৃথিবীর এমন এক ক্রান্তিকালে আমরা সমবেত হয়েছি যখন টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে এসে দাঁড়িয়েছে অপরিমেয় সব চ্যালেঞ্জ। অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যের ভার বহন করছে এবং অতিবাহিত করছে মর্যাদাহীন মানবেতর এক জীবন। দেশের সঙ্গে দেশের এবং দেশের অভ্যন্তরে  ,  মানুষের সঙ্গে মানুষের অসমতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। জেন্ডার অসমতাও বিদ্যমান একটি মূল চ্যালেঞ্জ। চরম এক উদ্বেগের বিষয় হলো বেকারত্ব  ,  বিশেষ করে যুবসমাজের কর্মহীনতা। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য-সংকট  ,  ঘনঘন ও তীব্রতর প্রাকৃতিক দুর্যোগ  ,  ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব-সংঘাত  ,  সহিংস চরমপন্থা  ,  সন্ত্রাসবাদ ও সংশ্লিষ্ট মানবিক সংকট এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি  ,  সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাকে উল্টোস্রোতে প্রবাহিত করছে। ইতিমধ্যেই মানবজাতি চ্যালেঞ্জের যে দীর্ঘ তালিকার মুখোমুখি হয়েছে ক্রমশ তা দীর্ঘতর হচ্ছে  ,  ক্রমান্বয়ে ঘটছে অবস্থার অবনতি। নতুন চ্যালেঞ্জসমূহের মধ্যে রয়েছে: প্রাকৃতিক সম্পদের ক্রমহ্রাস  ,  মরুকরণ  ,  খরা  ,  ভূমির অবক্ষয়  ,  সুপেয় পানির সংকট  ,  জীববৈচিত্র্য হ্রাসসহ পরিবেশগত অবক্ষয়ের বিরূপ প্রভাব। আমাদের সময়কার কঠিনতম চ্যালেঞ্জসমূহের একটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন – এর প্রতিকূল প্রভাবে দেশসমূহের টেকসই উন্নয়ন অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসহ নিম্নাঞ্চলীয় উপকূলীয় দেশ ও উপকূলীয় অঞ্চলে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি  ,  সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি  ,  সামুদ্রিক অম্লায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য প্রভাব। বিলুপ্তি-ঝুঁকির মুখে রয়েছে অনেক জনগোষ্ঠী  ,  এবং এই গ্রহের জীবতাত্ত্বিক-সহায়ক ব্যবস্থাও ঝুঁকির সম্মুখীন।

১৫. অন্যদিকে অপরিসীম সুযোগের কালও এখন সমাগত। অনেক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকবিলায় সাধিত হয়েছে প্রভূত অগ্রগতি। গত প্রজন্মের সময়কালে চরম দারিদ্র্যের করাল গ্রাস হতে মুক্ত হয়েছে লক্ষ-কোটি মানুষ। ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থী উভয়ের ক্ষেত্রে বহুলাংশে সম্প্রসারিত হয়েছে শিক্ষালাভের সুযোগ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসারণ ও বৈশ্বিক আন্তঃসংযুক্তি অগাধ সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে মানব জাতির অগ্রযাত্রায়  ,  ডিজিটাল বিভাজন হ্রাসে ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায়। ওষুধ ও জ্বালানির মত ভিন্নতর সব খাতে অনুরূপ সাফল্য-চিত্র অঙ্কন করেছে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন।

১৬. প্রায় দেড় দশক পূর্বে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছিল সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ। এ অভীষ্টমালা রচনা করেছিল এক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন-পরিকাঠামো  ,  বহু ক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছিল তাৎপর্যময় অগ্রগতি। কিন্তু এই অগ্রগতি ছিল অসম  ,  সকল দেশে ও সকল ক্ষেত্রে অর্জিত হয়নি সমমাত্রার সাফল্য। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ  ,  স্বল্পোন্নত দেশ  ,  স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ পিছিয়ে ছিল। কিছু সংখ্যক অভীষ্ট-লক্ষ্যের ক্ষেত্রে  ;  বিশেষ করে মাতৃস্বাস্থ্য  ,  নবজাতক ও শিশুর স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অভীষ্টসমূহের অর্জন তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। অনর্জিত অভীষ্টসহ সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টভুক্ত সকল লক্ষ্যমাত্রার পূর্ণ বাস্তবায়নে আমরা পুনরায় অঙ্গীকার করছি। এক্ষেত্রে বিশেষ কৌশল হবে স্বল্পোন্নত দেশ ও বিশেষ পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে সেসব দেশসমূহের জন্য প্রয়োজনমাফিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বর্ধিত ও নিবিড় সহায়তা প্রদান। নতুন এই এজেন্ডা সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের ওপর ভিত্তিপ্রাপ্ত এবং এর মূল উদ্দেশ্য হলো পূর্বের অনর্জিত লক্ষ্যের সফল পরিসমাপ্তি  ,  বিশেষ করে ঝুঁকিগ্রস্ত-অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে।

১৭. অবশ্য যে পরিকাঠামোর ঘোষণা আজ আমরা করছি  ,  সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টের তুলনায় তার পরিধি ও পরিসর বহুগুণে ব্যাপক ও বিশাল। দারিদ্র্য বিমোচন  ,  স্বাস্থ্য  ,  শিক্ষা  ,  খাদ্য-নিরাপত্তা ও পুষ্টির মত উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহের বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন এই এজেন্ডা অর্থনৈতিক  ,  সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয়ে একগুচ্ছ নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অধিকতর শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছে নতুন এই এজেন্ডা। গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বাস্তবায়নের উপায়সমূহ (বাস্তবায়ন পদ্ধতি) সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে এটি। যে সমন্বিত পদ্ধতির বিষয়ে আমরা সম্মত হয়েছি তার প্রতিফলন ঘটেছে নতুন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের নিবিড় আন্তঃসম্পর্ককে ও বহুধাবিষয় (cross-cutting) সংশ্লিষ্ট উপাদানের উপস্থিতিতে।

নতুন এজেন্ডা

১৮. আমরা আজ ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও ১৬৯টি সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করছি  ;  এসব অভীষ্ট-লক্ষ্যমাত্রা সমন্বিত ও অবিচ্ছেদ্য। ইতিপূর্বে কখনোই বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এত ব্যাপক পরিসরের ও সর্বজনীন নীতি প্রক্রিয়ার সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টায় অঙ্গীকারবদ্ধ হননি। পৃথিবীর সকল অঞ্চল ও দেশের জন্য অর্থবহ উন্নয়ন ও পার  ¯ পারিকভাবে লাভজনক সহযোগিতার বাতাবরণ সৃষ্টিতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদেরকে নিবেদিত করলাম  ,  সূচিত হলো টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে আমাদের সম্মিলিত অভিযাত্রা। আমরা আবারও নিশ্চিত করছি যে সকল ধন-সম্পদে  ,  প্রাকৃতিক সম্পদে ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিটি রাষ্ট্রের পূর্ণ ও স্থায়ী সার্বভৌমত্ব বজায় থাকবে ও রাষ্ট্রসমূহ স্বাধীনভাবে তাদের সার্বভৌমত্বের প্রয়োগ ঘটাবে। সকল মানুষের পূর্ণাঙ্গ হিতসাধনে আমরা এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবো – বর্তমান প্রজন্মের জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা ও পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখার নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমরা  ;  এই এজেন্ডার বাস্তবায়ন কাজ এমনভাবে সম্পদিত হবে যাতে আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা স্বীকৃত রাষ্ট্রসমূহের অধিকার ও বাধ্যবাধকতার সাথে তা সঙ্গতিপূর্ণ হয়।

১৯. সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত অন্যান্য আন্তর্জাতিক দলিলসমূহ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অমেয় গুরুত্ব আমরা দৃঢ়তার সাথে পুনর্ব্যক্ত করছি। জাতিসংঘ সনদের সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে এবং জাতিসত্তা  ,  বর্ণ  ,  জেন্ডার  ,  ভাষা  ,  ধর্ম  ,  রাজনৈতিক বা অন্যান্য মতাদর্শ  ,  জাতীয় বা সামাজিক পরিচয়সূত্র  ,  সম্পত্তি  ,  প্রতিবন্ধিতা  ,  জন্ম এবং অন্যান্য অবস্থা ও অবস্থানগত বিভেদ পরিহার করে সকলের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে এবং এর সুরক্ষা প্রদানে ও সংবর্ধনে সকল রাষ্ট্রের স্ব স্ব দায়িত্ব ও কর্তব্যের ওপর আমরা জোর গুরুত্ব আরোপ করছি।

২০. জেন্ডার সমতা আনয়ন এবং নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষমতায়ন আমাদের সকল অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। যদি মানবজাতির এক অর্ধাংশ পূর্ণ মানবাধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে  ,  তবে মানব-সম্ভাবনার পরিপূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে না  ,  সম্ভব হবে না টেকসই উন্নয়ন অর্জনও। মানসম্মত শিক্ষায়  ,  অর্থনৈতিক সম্পদে ও রাজনৈতিক মঞ্চে নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে  ,  পাশাপাশি পুরুষ ও অল্পবয়সী ছেলেদের মতো সমান সুযোগ দিতে হবে সকল পর্যায়ের কর্মসংস্থানে  ,  নেতৃত্বে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায়। নারী-পুরুষের ব্যবধান হ্রাসকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করতে এবং বৈশ্বিক  ,  আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে সহযোগিতা জোরদার করতে আমরা একযোগে কাজ করব। পুরুষ ও অল্পবয়সী ছেলেদের অংশগ্রহণসহ অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতার পূর্ণ অবসান ঘটানো হবে। এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের মূলধারায় জেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

২১. নতুন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ ১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখ থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী পনেরো বছর ধরে আমাদের সকল সিদ্ধান্তের নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এই অভীষ্ট-লক্ষ্যসমষ্টি। ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় বাস্তবতা  ,  সক্ষমতা ও উন্নয়নের পর্যায় বিবেচনায় রেখে এবং জাতীয় নীতিমালা ও অগ্রাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমাদের স্ব স্ব দেশে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করব। প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক বিধিমালা ও প্রতিশ্রুতির সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে  ,  স্থিতিশীল  ,  অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রচেষ্টায় জাতীয় নীতি স্বাধীনতার প্রতি বিশেষ করে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের ক্ষেত্রে  ,  আমরা শ্রদ্ধাশীল থাকব। আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক মাত্রা  ,  আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি ও সমন্বয় এবং পার  ¯ পরিক আন্তঃসংযোগ টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বলে আমরা স্বীকার করি। কারণ আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক পরিকাঠামোসমূহ জাতীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন নীতিমালাকে কার্যকরভাবে সুনির্দিষ্ট কাজে রূপান্তরিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

২২. টেকসই উন্নয়ন অর্জন প্রচেষ্টায় প্রতিটি দেশ পৃথক পৃথক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। সংঘর্ষপীড়িত ও সংঘর্ষ-উত্তর দেশসমূহসহ সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত দেশসমূহ  ,  বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ  ,  স্বল্পোন্নত দেশ  ,  স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ বিশেষ গুরুত্ব ও মনযোগের দাবি রাখে। একই ধরনের মনযোগের দাবিদার অনেক মধ্যম আয়ের দেশও যারা ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

২৩. ঝুঁকিগ্রস্ত ও অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান এজেন্ডায় যেসব জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রতিফলিত হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে: সকল শিশু  ,  যুবক  ,  প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী (যাদের ৮০ শতাংশের বেশি দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে)  ,  এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত জনগোষ্ঠী  ,  বয়স্ক ব্যক্তিগণ  ,  আদিবাসী জনগোষ্ঠী  ,  আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থী  ,  অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ও অভিবাসী জনগোষ্ঠী। জটিল মানবিক সংকটে আক্রান্ত ও সন্ত্রাস কবলিত অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর বিশেষ চাহিদা পূরণে এবং সংশ্লিষ্ট বাধাবিঘ্ন ও সীমাবদ্ধতার দূরীকরণকল্পে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে আরও কার্যকর পদক্ষেপ ও কর্মব্যবস্থা গ্রহণে আমরা সংকল্পবদ্ধ হচ্ছি।

২৪. ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যসহ সকল ধরনের ও সকল মাত্রার দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সকল মানুষ জীবনযাত্রার ন্যূনতম মৌলিক প্রমিত মান অনুযায়ী জীবনযাপন করবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হিসেবে ক্ষুধার অবসান ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং সকল প্রকার অপুষ্টির বিলুপ্তি সাধনে আমরা বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকৃতির বিষয়টি আমরা দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছি এবং সাধুবাদ জানাচ্ছি পুষ্টি বিষয়ক রোম ঘোষণা ও সংশ্লিষ্ট কর্মব্যবস্থার কাঠামোকে। উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ক্ষুদ্র কৃষিজীবী  ,  বিশেষত নারী কৃষক  ,  পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের সহায়তার মাধ্যমে গ্রামোন্নয়নে এবং টেকসই কৃষি ও মৎস্যচাষের প্রসারে আমরা প্রয়োজনীয় সম্পদ বিনিয়োগ করব।

২৫. সকল পর্যায়ে যথা  ,  প্রাক-শৈশব  ,  প্রাথমিক  ,  মাধ্যমিক  ,  উচ্চশিক্ষা  ,  কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে  ,  অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে আমরা কৃতসংকল্প। বয়স  ,  জেন্ডার  ,  জাতিসত্তা বা নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে সকল মানুষ এবং প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী  ,  অভিবাসী  ,  আদিবাসী জনগোষ্ঠী  ,  শিশু ও যুবা  ,  বিশেষ করে যারা অরক্ষিত পরিস্থিতিতে বসবাস করছে  ,  তাদের জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করা যাতে করে তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সমাজে সর্বোতভাবে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করতে পারে। নিরাপদ বিদ্যালয়  ,  সঙ্গতিপূর্ণ সমাজ ও পরিবারসহ অপারপর মাধ্যমে শিশু ও যুবাদের একটি বিকাশসহায়ক প্রযত্নশীল পরিবেশ দানে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকবে যাতে করে নিজেদের অধিকার ও সক্ষমতা সম্পর্কে তাদের পূর্ণ উপলব্ধি ঘটে। এর ফলে প্রতিটি দেশ তার জনমিতিক সুবিধার সুফল ভোগ করতে পারবে।

২৬. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য এবং প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি সকলের জন্য নিশ্চিত করতে হবে  ,  অর্জন করতে হবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্য। এই প্রাপ্য থেকে কেউ বঞ্চিত হতে পারবে না। নবজাতক  ,  শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হ্রাসের বর্তমান অগ্রগতি প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর এবং আমরা ২০৩০ সালের পূর্বে সকল প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অবসান ঘটাতে চাই। পরিবার পরিকল্পনা  ,  তথ্য ও শিক্ষাসহ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যপরিচর্যা সেবায় সর্বজনীন অধিকার নিশ্চিতকরণেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অপরাপর ব্যবস্থাগ্রহণসহ রোগজীবাণুর ক্রমবর্ধমান ওষুধ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে উপেক্ষিত গ্রীষ্মম-লীয় রোগ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে একই ধারায় আমরা ত্বরান্বিত করব ম্যালেরিয়া  ,  এইচআইভি/এইডস  ,  যক্ষ্মা  ,  হেপাটাইটিস  ,  ইবোলা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ ও মহামারী মোকাবেলার প্রচেষ্টা। টেকসই উন্নয়নের অন্যতম বৃহৎ চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্বীকৃত আচরণগত  ,  বিকাশসংক্রান্ত ও স্নায়বিক বৈকল্যসহ অসংক্রামক রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিষয়েও আমরা কৃতসংকল্প।

২৭. সকল দেশের জন্য বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা সচেষ্ট হব। স্থিতিশীল  ,  অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি দেশের সমৃদ্ধি অর্জনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এ অর্জন তখনই সম্ভব হবে যখন সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে এবং আয় বৈষম্য নিরসনে ব্যবস্থা গৃহীত হবে। বিশেষ করে যুব কর্মসংস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে এবং সকলের জন্য শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে আমরা গতিময়  ,  টেকসই  ,  উদ্ভাবনী ও জনমানুষকেন্দ্রিক অর্থনীতি গড়ে তুলব। আমরা বাধ্যতামূলক শ্রম ও মানব পাচার বন্ধ করব এবং অবসান ঘটাব সকল ধরনের শিশুশ্রমের। উৎপাদনশীল ও ফলপ্রসূ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিশিষ্ট সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুশিক্ষাপ্রাপ্ত শ্রমশক্তি গড়ে তুলে এবং পূর্ণ সামাজিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে যে কোনো দেশই লাভবান হতে পারে। কাঠামোগত রূপান্তরসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা স্বল্পোন্নত দেশসমূহের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করব। আমরা এমন সব নীতিমালা গ্রহণ করব যেগুলো নিশ্চিত করবে উৎপাদন সক্ষমতা  ,  উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের সংবর্ধন  ;  আর্থিক অন্তর্ভুক্তি  ;  টেকসই কৃষি  ;  পশুপালন ও মৎস্যচাষের উন্নয়ন  ;  টেকসই শিল্প উন্নয়ন  ;  সাশ্রয়ী  ,  নির্ভরযোগ্য  ,  টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সেবা  ;  টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা  ;  এবং প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু অবকাঠামো।

২৮. পণ্য ও সেবার ভোগ ও উৎপাদনের ধরনে মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছি। অন্যান্য ব্যবস্থাসহ সকল উৎস হতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং ভোগ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে অধিকতর টেকসই পন্থায় উত্তরণকল্পে উন্নয়নশীল দেশসমূহে তাদের বৈজ্ঞানিক  ,  প্রযুক্তিগত ও উদ্ভাবনী সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা দানের মাধ্যমে সরকার  ,  আন্তর্জাতিক সংস্থা  ,  ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অরাষ্ট্রীয় কুশীলব এবং ব্যক্তিগণকে টেকসই নয় এমন ভোগ্যপণ্য ও উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন সাধনে অবদান রাখতে হবে। টেকসই উৎপাদন ও ভোগের ধরন বিষয়ক কর্মসূচির ১০ বছর মেয়াদি কর্ম-কাঠামোর বাস্তবায়নকে আমরা উৎসাহিত করি। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশসমূহের উন্নয়ন ও সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সকল দেশ কর্মব্যবস্থা গ্রহণ করবে যেখানে অগ্রণী ভূমিকা নেবে উন্নত দেশগুলো।

২৯. অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নে অভিবাসীদের ইতিবাচক অবদান আমরা স্বীকার করি। আমরা আরও স্বীকার করি যে আন্তর্জাতিক অভিবাসন একটি বহুমাত্রিক বাস্তবতা যার সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে উৎসদেশ  ,  সংযোগকারী দেশ (transit) ও গন্তব্য দেশের উন্নয়নের  ;  ফলে এর জন্য প্রয়োজন সঙ্গতিপূর্ণ ও সমন্বিত প্রয়াস। শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত জনগণের অভিবাসন পর্যায় নির্বিশেষে নিরাপদ  ,  সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিতকরণে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পার  ¯ পরিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করব। এই ধরনের সহযোগিতা আশ্রয়দানকারী দেশের প্রতিকূলতা-সহিষ্ণুতাও বৃদ্ধি করবে  ,  বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহে। অভিবাসীগণের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকারের বিষয়ে আমরা বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করি এবং স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে প্রত্যাবর্তনকারী নাগরিকগণকে সসম্মানে গ্রহণ করা প্রতিটি রাষ্ট্রের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য।

৩০. সকল দেশের  ,  বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহের  ,  পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথে বিঘ্নসৃষ্টিকারী এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সাথে সাংঘর্ষিক যে কোনো একপাক্ষিক অর্থনৈতিক  ,  আর্থিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানাচ্ছি।

৩১. আমরা স্বীকার করছি যে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি) হলো আন্তঃরাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা বিষয়ক আলোচনার মূল ফোরাম। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ অবক্ষয়জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সুস্পষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা সংকল্পবদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রকৃতি ও ব্যাপ্তি এক্ষেত্রে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দাবি রাখে। এই সহযোগিতার উদ্দেশ্য হবে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার জন্য উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ। গভীর উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ করছি পক্ষসমূহ কর্তৃক ২০২০ সালের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে গ্রিনহাউস গ্যাসের বার্ষিক নিঃসরণ প্রশমন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির সামষ্টিক চিত্র এবং প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি বা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় নিঃসরণ চিত্রের মধ্যে রয়েছে বিশাল ব্যবধান।

৩২. পক্ষসমূহের প্যারিস সম্মেলনের ২১তম অধিবেশনের দিকে তাকিয়ে আমরা সকল রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি উচ্চাভিলাষী ও সর্বজনীন জলবায়ু চুক্তি প্রণয়নের কাজ শুরুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি। সম্ভাব্য চুক্তিপত্রটি হতে পারে কনভেনশনের আওতাধীন আরেকটি আইনি দলিল অথবা আইনগত ভিত্তিসম্পন্ন বা আইনি শক্তিসম্পন্ন সর্বসম্মত একটি ফলাফল দলিল যেখানে সকল পক্ষের ভারসাম্যপূর্ণ অংশগ্রহণসহ অন্যান্য বিষয়ের মাঝে অন্তর্ভুক্ত থাকবে প্রশমন  ,  অভিযোজন  ,  অর্থায়ন  ,  প্রযুক্তির সৃজন  ,  হস্তান্তর  ,  সক্ষমতা বৃদ্ধি  ,  এবং কর্মব্যবস্থা ও সমর্থন-সহায়তার স্বচ্ছতা।

৩৩. আমরা অনুধাবন করি যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ননির্ভর করে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার ওপর। সে কারণে সাগর-মহাসাগর  ,  সুপেয় পানিসম্পদ  ,  বনভূমি  ,  পার্বত্যভূমি ও শুষ্কভূমির সংরক্ষণে এবং জীববৈচিত্র্য  ,  প্রতিবেশ ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। টেকসই পর্যটনের প্রসারে  ,  পানি সংকট ও পানি দূষণ মোকাবেলায়  ,  মরুকরণ  ,  ধূলিঝড়  ,  ভূমির অবক্ষয় ও খরা প্রতিরোধ লক্ষ্যে সহযোগিতা জোরদারে এবং প্রতিকূলতা-সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসেও আমরা স্থিরসংকল্প। এ প্রসঙ্গে পক্ষসমূহের ত্রয়োদশতম মেক্সিকো সম্মেলনের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক কনভেনশনের দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবন্ধ করছি।

৩৪. আমরা মনে করি উন্নত জীবনমানের জন্য টেকসই নগর উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। সুদৃঢ় সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি  ,  ব্যক্তিগত সুরক্ষা প্রদান এবং উদ্দীপনামূলক উদ্ভাবনা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকল্পে নগর ও জনবসতির পুনর্গঠন ও পরিকল্পনা কার্যক্রমে আমরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সাথে কাজ করব। রাসায়নিক পদার্থের পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপদ ব্যবহার  ,  বর্জ্যের উৎপাদন হ্রাস ও পুনশ্চক্রায়ন (recycling) এবং পানি ও জ্বালানির দক্ষতর ব্যবহারসহ অপরাপর উদ্যোগের মাধ্যমে নগরসমূহের এবং মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের বিরূপ প্রভাব আমরা হ্রাস করব। বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থার ওপর নগরসমূহের প্রভাব আমরা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনব। আমাদের গ্রামীণ ও নগর উন্নয়নের কৌশল ও নীতিমালাসমূহ প্রণয়নে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা ও প্রক্ষেপণ আমরা বিবেচনায় নেব। কিটোতে অনুষ্ঠিতব্য আবাসন ও টেকসই নগর উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের আসন্ন সম্মেলনের জন্য আমরা অপেক্ষমান।

৩৫. শান্তি ও নিরাপত্তা ছাড়া টেকসই উন্নয়নের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয় এবং টেকসই উন্নয়নের অনুপস্থিতিতে হুমকির সম্মুখীন হবে শান্তি ও নিরাপত্তা। নতুন এই এজেন্ডা শান্তিপূর্ণ  ,  ন্যায়পরায়ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অনস্বীকার্য বলে মনে করে। এ সমাজব্যবস্থার ভিত্তি হবে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা (বিকাশ লাভের অধিকারসহ)  ,  সকল পর্যায়ে কার্যকর আইনের শাসন ও সুশাসন এবং স্বচ্ছ  ,  কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান। যেসব বিষয় সহিংসতা  ,  নিরাপত্তাহীনতা ও অবিচারের জন্ম দেয়  ,  যেমন অসাম্য  ,  দুর্নীতি  ,  দুর্বল শাসন-পরিচালন ব্যবস্থা  ,  অবৈধ অর্থ ও অস্ত্র প্রবাহ – সেগুলো দূরীকরণে গৃহীতব্য পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে আলোচ্য এজেন্ডায়। সংঘর্ষ বা যুদ্ধাবস্থার অবসান বা প্রতিরোধকল্পে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও দেশগঠনে নারীদের ভূমিকা নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে সংঘোর্ষত্তর বা যুদ্ধোত্তর দেশসমূহের অনুকূলে সমর্থন ও সহায়তা প্রদানে আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে। ঔপনিবেশিক বা বৈদেশিক শক্তির দখলে থাকা জাতিসমূহের পূর্ণ স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক আইনসঙ্গত উপায়ে কার্যকর পদক্ষেপ ও কর্মব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। উল্লেখ্য  ,  পরাধীনতার শৃঙ্খল এসব দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

৩৬. আন্তঃসাংস্কৃতিক সমঝোতা  ,  সহনশীলতা  ,  পার  ¯ পরিক শ্রদ্ধাবোধ  ,  বৈশ্বিক নাগরিকত্ব ও অংশীদারি দায়িত্বশীলতা সম্পর্কিত নীতি-চেতনার বিকাশে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছি। ধরণীর প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমরা স্বীকার করি এবং অনুধাবন করি যে সকল সংস্কৃতি ও সভ্যতা টেকসই উন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

৩৭. ক্রীড়া টেকসই উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধের চেতনা প্রসারের মাধ্যমে  ,  নারী  ,  যুবা  ,  ব্যক্তি ও সমাজের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এবং স্বাস্থ্য  ,  শিক্ষা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উপলব্ধি সৃজনে ক্রীড়া কর্মকাণ্ডের ক্রমবর্ধমান অবদানের স্বীকৃতি জ্ঞাপন করছি আমরা।

৩৮. জাতিসংঘ সনদ অনুসারে আমরা রাষ্ট্রসমূহের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা দৃঢ়তার সাথে পুনর্ব্যক্ত করছি।

বাস্তবায়নের উপায়

৩৯. নতুন এজেন্ডার সুবিশাল ব্যাপ্তি ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে  ,  এর বাস্তবায়নে প্রয়োজন পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব। এ বিষয়ে আমাদেরও রয়েছে আন্তরিক সহমত ও প্রতিশ্রুতি। এই অংশীদারিত্বে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে একটি বৈশ্বিক সংহতির চেতনা  ;  বিশেষ করে দরিদ্রতম ও অরক্ষিত জনগণের সঙ্গে সংহতি। সরকার  ,  বেসরকারি খাত  ,  সুশীল সমাজ  ,  জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও অন্যান্য কুশীলবকে সঙ্গে নিয়ে এবং প্রাপ্ত সম্পদের সদ্ব্যবহার করে সকল অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন সহায়তায় নিবিড় বৈশ্বিক অংশগ্রহণে উৎসাহিত করবে এই একাত্মতা।

৪০. আমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মূলে রয়েছে অভীষ্ট ১৭ এবং প্রতিটি অভীষ্টে সংযুক্ত বাস্তবায়নের উপায়সমূহ যা অন্যান্য অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার মতো একই রকম গুরুত্ববাহী। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসহ এই এজেন্ডার সার্থক বাস্তবায়ন সম্ভব টেকসই উন্নয়ন অন্বেষী একটি পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে। এর সমর্থন-সহায়তায় থাকবে ২০১৫ সালের ১৩ থেকে ১৬ জুলাই আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফলাফল-দলিলে বর্ণিত সংহত নীতিমালা ও কর্মব্যবস্থাসমূহ। টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক ২০৩০ এজেন্ডার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গৃহীত আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডার সাধারণ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদনকে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা। আমরা অনুধাবন করি যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের সফল রূপায়নের জন্য আদ্দিস আবাবার অ্যাকশন এজেন্ডার পূর্ণ বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪১. আমরা মনে করি প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রাথমিক দায়িত্বভার তাদের নিজেদের ওপরই বর্তিত। তদুপরি  ,  অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ সংস্থানের বিষয়ে নতুন এজেন্ডায় আলোকপাত করা হয়েছে। সংস্থানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এমন বিষয়াদির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো: আর্থিক সম্পদের সংস্থান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পার  ¯ পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে উদারনৈতিক ও প্রাধিকারমূলক শর্তসহ সহজ শর্তে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি হস্তান্তর। দেশজ ও আন্তর্জাতিক সরকারি অর্থায়ন এবং অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত সম্পদ অত্যাবশ্যকীয় সেবা ও সর্বজনিক পণ্য (public goods) সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন এজেন্ডার বাস্তবায়নে বৈচিত্র্যপূর্ণ বেসরকারি খাতের অবদানসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সমবায়ী প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান  ,  সুশীল সমাজের সংগঠন ও জনহিতকর সংস্থাগুলোর ভূমিকাও আমরা স্বীকার করি।

৪২. ইস্তাম্বুল ঘোষণা ও প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন  ,  উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের বর্ধিত কর্মব্যবস্থা প্রণালীর (এসএএমওএ) পথ-নকশা  ,  ২০১৪-২০২৪ দশকব্যাপী স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ সংশ্লিষ্ট ভিয়েনা প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনসহ প্রাসঙ্গিক কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা সমর্থন যোগাব। আফ্রিকান ইউনিয়নের এজেন্ডা ২০৬৩ ও আফ্রিকার উন্নয়নে নব্য অংশীদারিত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিগুলোতে সহায়তাপ্রদানের গুরুত্বও আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করছি। উপরোক্ত সকল কর্মযজ্ঞই নতুন এজেন্ডার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সংঘর্ষপীড়িত ও সংঘর্ষোত্তর পরিস্থিতিতে নিপতিত দেশসমূহে স্থিতিশীল শান্তি ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমরা চিহ্নিত করেছি।

৪৩. দেশীয় পর্যায়ে সরকারি অর্থায়ন প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে  ,  বিশেষ করে সীমিত দেশীয় সম্পদের অধিকারী দরিদ্রতম ও সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত দেশগুলোতে  ,  আন্তর্জাতিক সরকারি অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। সরকারি উন্নয়ন সহায়তাসহ আন্তর্জাতিক সরকারি অর্থায়নের আরেকটি গুরুত্ববহ ভূমিকা হলো সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য উৎস থেকে অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহ করতে পারা। অনেক উন্নত দেশ কর্তৃক প্রতিশ্রুত উন্নয়নশীল দেশের জন্য মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) ০.৭ শতাংশ এবং স্বল্পোন্নত দেশের জন্য জিএনআই এর ০.১৫ থেকে ০.২০ শতাংশ সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) প্রদানের লক্ষ্য অর্জনসহ উন্নত দেশগুলো কর্তৃক সরকারি উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সহায়তা দানকারী দেশগুলো পুনরায় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে।

৪৪. প্রতিটি দেশের বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহের নীতি স্বাধীনতার (policy space) বিষয়ে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (নিজ নিজ কর্ম পরিধি অনুযায়ী) সমর্থনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ  ,  বৈশ্বিক আদর্শ মান নির্ণয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিচালন ব্যবস্থায় আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশসমূহ  ,  স্বল্পোন্নত দেশ  ,  স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ  ,  উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও মধ্যম আয়ের দেশসহ উন্নয়নশীল দেশের মত প্রকাশের সুযোগ এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও তা জোরদার করতে আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।

৪৫. আইন প্রণয়ন ও বাজেট অনুমোদনের মাধ্যমে এবং আমাদের প্রতিশ্রুতিসমূহের কার্যকর বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশগুলোর জাতীয় সংসদসমূহের অপরিহার্য ভূমিকার কথা আমরা স্মরণ করি। এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ একজোট হয়ে আঞ্চলিক ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ  ,  উপ-আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান  ,  আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান  ,  বিদ্বৎজন  ,  জনহিতকর সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী দল ও অন্যান্যের সঙ্গে কাজ করবে।

৪৬. আমরা মনে করি যে  ,  পর্যাপ্ত সম্পদসহ জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক  ,  সুসঙ্গত  ,  দক্ষ ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন অর্জন প্রচেষ্টায় সহায়তাকল্পে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এবং রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বর্ধিত জাতীয় স্বত্বাধিকারের গুরুত্বের ওপর জোর প্রদান করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে চলমান সংলাপে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের অনুকূলেও আমাদের সমর্থন রয়েছে।

ফলো-আপ ও পর্যালোচনা

৪৭. আগামী পনেরো বছরব্যাপী জাতীয়  ,  আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতির ফলো-আপ ও পর্যালোচনার প্রাথমিক দায়িত্ব আমাদের দেশের সরকারসমূহের ওপর অর্পিত থাকবে। নাগরিকদের প্রতি জবাবদিহিতার সমর্থনে আলোচ্য এজেন্ডায় ও আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডায় নির্ধারিত বিবিধ পর্যায়ে পদ্ধতিগত ফলো-আপ ও পর্যালোচনা সম্পাদনের ব্যবস্থা আমরা করব। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের পৃষ্ঠপোষকতায় বৈশ্বিক পর্যায়ের ফলো-আপ ও পর্যালোচনার তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম।

৪৮. এই কর্মপ্রয়াসের সহায়তায় প্রস্তুত করা হচ্ছে নানা নির্দেশক। পেছনে পড়ে থাকবে না কেউ – এ বিষয়টি নিশ্চিতকরণে অগ্রগতি পরিমাপের সহায়তায় প্রয়োজন হবে মানসম্মত  ,  সহজলভ্য  ,  সময়ানুগ ও নির্ভরযোগ্য উপাত্ত। এসব উপাত্ত হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল সহায়ক। সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতিতে প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশসমূহ বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ  ,  স্বল্পোন্নত দেশ  ,  স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ  ,  উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর পরিসংখ্যানগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা আমাদের তৎপরতা বাড়াতে সম্মত আছি। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি  ’ র) ছাড়াও উন্নয়ন অগ্রগতি পরিমাপের আরও বিশদ পদ্ধতি উদ্ভাবনে আমরা দায়বদ্ধ।

ধরিত্রীর পরিবর্তনে কর্মব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান

৪৯. সত্তর বছর পূর্বে  ,  বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এক পূর্বতন প্রজন্ম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্মিলিত হয়েছিলেন। যুদ্ধ ও বিভক্তির ছাইভস্ম থেকে তারা গড়ে তুলেছেন এই সংস্থা এবং শান্তির মূল্যবোধ  ,  সংলাপ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বাতাবরণ যা এ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিমূলে বিদ্যমান। জাতিসংঘ সনদ এই সব মূল্যবোধের সর্বশ্রেষ্ঠ স্মারক।

৫০. আজও আমরা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি যার রয়েছে মহান  ,  ঐতিহাসিক তাৎপর্য। আজ আমরা স্থিরপ্রতিজ্ঞ হচ্ছি  ,  সকল মানুষের জন্য একটি উন্নততর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার এবং সেই সব কোটি কোটি মানুষের জন্য একটি শোভন  ,  মর্যাদাপূর্ণ ও ফলপ্রসূ জীবন যাপন এবং মানবসম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা হতে পারি দারিদ্র্যের অবসানকারী প্রথম প্রজন্ম এবং হতে পারি পৃথিবী নামের গ্রহটিকে রক্ষা করার সুযোগ প্রাপ্ত সর্বশেষ প্রজন্ম। আমরা যদি সার্থকভাবে আমাদের উদ্দেশ্যাবলী অর্জন করতে পারি  ,  ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী হবে এক উন্নততর স্থান।

৫১. আমরা আজ আগামী পনেরো বছরব্যাপী বৈশ্বিক কর্মধারা সংবলিত এক এজেন্ডার ঘোষণা দিচ্ছি  ;  একবিংশ শতাব্দীতে যা হবে ধরিত্রী ও জনগণের জন্য এক সমৃদ্ধির সনদ। শিশু ও যুবতীগণ ও পুরুষেরা হবে এই পরিবর্তনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এক উন্নততর বিশ্ব গড়ে তুলতে তাদের অসীম কর্মশক্তির প্রকাশ ঘটবে এই নতুন অভিজ্ঞতাসমূহ অর্জনের প্রয়াসের মধ্য দিয়ে।

৫২. জাতিসংঘ সনদের সুপ্রসিদ্ধ প্রারম্ভিক শব্দমালা হলো   “ আমরা জাতিসমূহ  ” । সেই জাতিপুঞ্জই আজ ২০৩০ সাল অভিমুখে এক মহান যাত্রা শুরু করলো। আমাদের এই অভিযাত্রায় অংশ নেবে সকল সরকার ও সংসদ  ,  জতিসংঘ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান  ,  স্থানীয় কর্তৃপক্ষ  ,  বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী  ,  সুশীল সমাজ  ,  ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাত  ,  বৈজ্ঞানিক ও বিদ্বৎসমাজ এবং সর্বোপরি সকল মানুষ। লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে এবং একে ধারণ করছে ও করবে। এই এজেন্ডা জনগণের  ,  জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য  ;  আমরা বিশ্বাস করি জনসম্পৃক্তর মাঝেই নিহিত রয়েছে এর সাফল্য।

৫৩. মানবজাতি ও আমাদের বাসগ্রহের ভবিষ্যৎ আমরাই নির্ধারণ করব। আজকের নতুন প্রজন্মের ওপরই অর্পিত হয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পথযাত্রার আলোকমশাল পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব। টেকসই উন্নয়নের পথ-নকশা আমরা অঙ্কন করেছি  ;  আমাদের সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে যে এই যাত্রা যেন সফল হয় এবং এর অর্জন হয় স্থায়ী ও অপ্রত্যাবর্তিত।

৫৪. একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তঃরাষ্ট্রীয় মতবিনিময় প্রক্রিয়ার অনুসরণে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ক উন্মুক্ত কর্মীদলের (Open Working Group) প্রস্তাবের<a href=”#_ftn1″ name=”_ftnref1″>   [1]   </a> ভিত্তিতে এবং আমাদের সকলের সম্মতিসহ (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের প্রাসঙ্গিকতার বর্ণনাসংবলিত একটি উপক্রমণিকা সংযুক্ত রয়েছে এ প্রস্তাবে) নিম্নোক্ত অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে।

৫৫. বিভিন্ন দেশের জাতীয় বাস্তবতা   ,    সক্ষমতা ও উন্নয়ন সোপানে এদের অবস্থান বিবেচনায় রেখে এবং জাতীয় নীতিমালা ও অগ্রাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রণীত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পর   ¯   পর সমন্বিত ও অবিচ্ছেদ্য   ,    বৈশ্বিক প্রকৃতির ও সর্বজনীনভাবে প্রয়োগযোগ্য। বৈশ্বিক পর্যায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এবং জাতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি দেশ একটি নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থির করেছে চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বৈশ্বিক মাত্রার এসব লক্ষ্যমাত্রাসমূহকে কীভাবে জাতীয় পরিকল্পনা প্রক্রিয়া   ,    নীতিমালা ও কৌশলের অঙ্গীভূত করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভারও অর্পণ করা হয়েছে প্রতিটি দেশের সরকারের ওপর।

৫৬. এই অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ নির্ধারণে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে উদ্ভূত প্রতিটি দেশের সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহ আমাদের বিবেচনায় ছিল। সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত দেশসমূহ ছিল আমাদের নিকট শীর্ষ গুরুত্ববাহী   ;    বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ   ,    স্বল্পোন্নত দেশ   ,    স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ   ,    উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো এতে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। সংঘর্ষপীড়িত দেশগুলোও আকর্ষণ করেছে বিশেষ মনোযোগ। টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক   ,    সামাজিক ও পরিবেশগত অন্যান্য সংশ্লিষ্ট চলমান প্রক্রিয়ার সাথে যে যোগসূত্র রয়েছে তা অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫৭. আমরা দেখেছি যে অনেক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ভিত্তি-তথ্য নেই। আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে   ,    সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জাতীয় ও বৈশ্বিক ভিত্তি-তথ্য গড়ে তুলতে বর্ধিত সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের ঘাটতি নিরূপণে আমরা প্রতিশ্রুত হচ্ছি   ;    বিশেষ করে সেই সব লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে যাদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যাগত পরিমাপক নেই।

৫৮. আমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উদ্দেশ্যে চলমান প্রচেষ্টায় অন্যান্য ফোরামে রাষ্ট্রসমূহের অংশগ্রহণকে আমরা উৎসাহিত করি। এসব প্রক্রিয়ার স্বাধীন অনুশাসনের (mandate) প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। এসব প্রক্রিয়া ও গৃহীত সিদ্ধান্তে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে এবং এই এজেন্ডা ও এর বাস্তবায়ন প্রয়াসে কোনো রূপ বিরূপ ভাব পোষণ করা হবে না।

৫৯. আমরা উপলব্ধি করি,    টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে জাতীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিটি দেশেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কার্যপ্রণালী,    রূপকল্প,    মডেল ও পদ্ধতি (   tools   )। আমরা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করছি যে পৃথিবী নামের গ্রহ ও এর প্রতিবেশ আমাদের সবার ঠিকানা এবং    “ জননী ধরিত্রী ”    বহু সংখ্যক দেশ ও অঞ্চলের প্রচলিত বচন।

<em><a href=”#_ftnref1″ name=”_ftn1″>   [1]   </a> সাধারণ পরিষদের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ক উন্মুক্ত কর্মীদলের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত (এ/৬৮/৯৭০ এবং শুদ্ধিপত্র ১   ;    আরও দ্রষ্টব্য এ/৬৮/৯৭০/সংযোজনী ১ ও ২)।</em>

<span style=”color: #e6243e;”>   টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ   </span>

<img class=”aligncenter size-full wp-image-13424″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/টেকসই-উন্নয়ন-অভীষ্টসমূহ.jpg” alt=”” width=”1040″ height=”605″ />

অভীষ্ট ১ : দারিদ্র্য বিলোপ

<img class=”wp-image-13428 size-200 aligncenter” src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-1-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ১   :    সর্বত্র সকল প্রকার দারিদ্র্যের অবসান   </span></h3>

‘অভীষ্ট ১’ বাস্তবায়নে ৫টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ১.১: ২০৩০ সালের মধ্যে, সর্বত্র সকল মানুষের জন্য, দৈনন্দিন মাথাপিছু আয় ১.২৫ ডলারের কম অনুযায়ী বর্তমানে পরিমাপকৃত চরম দারিদ্র্যের সম্পূর্ণ অবসান

লক্ষ্য ১.২: দারিদ্র্যের বহুমাত্রিকতা নির্বিশেষে জাতীয় সংজ্ঞানুযায়ী অন্তর্ভুক্ত সকল বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেকে নামিয়ে আনা

লক্ষ্য ১.৩: ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার নিশ্চয়তা বিধানসহ সকলের জন্য জাতীয়ভাবে উপযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপসমূহের বাস্তবায়ন, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে এর আওতায় নিয়ে আসা

লক্ষ্য ১.৪: ২০৩০ সালের মধ্যে সকল নারী ও পুরুষ, বিশেষ করে দরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অনুকূলে অর্থনৈতিক সম্পদের ওপর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মৌলিক সেবা-সুবিধা, জমি ও অন্যান্য সম্পত্তির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, উত্তরাধিকার, প্রাকৃতিক সম্পদ, ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা, উপযুক্ত নতুন প্রযুক্তি ও আর্থিক সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ১.৫: ২০৩০ সালের মধ্যে দরিদ্র ও নাজুক জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা সৃষ্টি এবং জলবায়ু সম্পর্কিত চরম ঘটনাবলী ও অন্যান্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত অভিঘাত ও দুর্যোগে তাদের আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ২টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

১.ক – মাত্রিকতা নির্বিশেষে সকল প্রকার দারিদ্র্য নির্মূলের জন্য গৃহীত কর্মসূচি ও নীতিমালা বাস্তবায়নে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে পর্যাপ্ত ও পূর্বানিমিত সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে বর্ধিত উন্নয়ন সহায়তাসহ বিভিন্ন উৎস হতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ আহরণ নিশ্চিত করা

১.খ – দারিদ্র্য নিরসন কার্যাবলীতে বর্ধিত বিনিয়োগ সহায়তা প্রদানকল্পে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দরিদ্রবান্ধব ও জেন্ডার সংবেদনশীল উন্নয়ন কৌশলভিত্তিক শক্তিশালী নীতিকাঠামো প্রণয়ন

অভীষ্ট ২ : ক্ষুধা মুক্তি

<img class=”aligncenter wp-image-13429 size-200″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-2-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ২   :    ক্ষুধার অবসান   ,    খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার   </span></h3>

‘অভীষ্ট ২’ বাস্তবায়নে ৫টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ২.১: ২০৩০ সালের মধ্যে সকল মানুষের জন্য ক্ষুধার নিরসন এবং বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, দরিদ্র জনগণ ও শিশুদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে বছরব্যাপী নিরাপদ, পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ২.২: ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ধরণের অপুষ্টির অবসান এবং একই সাথে ২০২৫ সালের মধ্যে অনুর্ধ্ব ৫-বছর বয়সী খর্বকায় ও রুদ্ধবিকাশ শিশু বিষয়ক আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সকল অভীষ্ট অর্জন এবং কিশোরী, গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারী ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ

লক্ষ্য ২.৩: ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুদ্রায়তনিক খাদ্য উৎপাদনকারী, বিশেষ করে নারী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, কৃষি পরিবার, পশুপাখি পালনকারী ও মৎস্যচাষীদের আয় ও কৃষিজ উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করা এবং এই লক্ষ্যে ভূমি, অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদ ও উপকরণ, জ্ঞান, আর্থিক সেবা, বিপণন, মূল্য সংযোজনের সুযোগ ও কৃষি-বহির্ভূত কর্মসংস্থানে তাদের সুরক্ষা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণ

লক্ষ্য ২.৪: ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু এমন একটি চাষ-পদ্ধতির প্রচলন যা উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি করে, বাস্তুব্যবস্থা সংরক্ষণে সহায়ক, জলবায়ু পরিবর্তন, চরম আবহাওয়া, খরা, বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং যা ভূমি ও মৃত্তিকার গুণগত মানের উত্তরোত্তর উৎকর্ষতা সাধন করে

লক্ষ্য ২.৫: ২০২০ সালের মধ্যে বীজ, আবাদযোগ্য শস্য প্রজাতি এবং খামারে ও গৃহে পালনযোগ্য গবাদিপশু ও এদের সমগোত্রীয় বন্যপ্রজাতির বংশগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা, যার অন্যতম উপায় হবে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত বিচিত্রধর্মী বীজ ও উদ্ভিদ ব্যাংকের ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক বিধান অনুসারে, ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে কৌলিক (genetic) সম্পদ ও সনাতন জ্ঞানপ্রসূত সংশ্লিষ্ট লাভের প্রাপ্যতার পথ সুগম করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

২.ক – উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশসমূহে কৃষি উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো, কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্পদের জিনভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতাসহ অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি

২.খ – দোহা উন্নয়ন রাউন্ডের ঘোষণা অনুযায়ী কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সকল ধরনের ভর্তুকির অবসান এবং রপ্তানি-সংশ্লিষ্ট অনুরূপ সকল ব্যবস্থা রহিতকরণসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বৈশ্বিক কৃষিবাজারের বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বিধিনিষেধ ও অসামঞ্জস্যের সংশোধন ও নিরসন

২.গ – খাদ্যপণ্য মূল্যের চরম অস্থিরতাকে নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে খাদ্য মজুদ বিষয়ক তথ্যসহ সঠিক সময়ে বাজার সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ এবং খাদ্যপণ্যের বাজার ও সংশ্লিষ্ট ব্যুৎপন্নসমূহের (derivatives) সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ

ভীষ্ট ৩: সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13430″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-3-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ৩: সকল বয়সের সকল মানুষের জন্য সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা ও জীবনমান উন্নয়ন   </span></h3>

‘অভীষ্ট ৩’ বাস্তবায়নে ৯টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ৩.১: ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মাতৃমৃত্যুর অনুপাত প্রতি ১০০,০০০ জীবিত জন্মে ৭০-এর নিচে নামিয়ে আনা

লক্ষ্য ৩.২: ২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতক ও অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সী শিশুদেও প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অবসান ঘটানোর পাশাপাশি সকল দেশের লক্ষ্য হবে প্রতি ১,০০০ জীবিতজন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার কমপক্ষে ১২-তে এবং প্রতি ১,০০০ জীবিতজন্মে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমপক্ষে ২৫-এ নামিয়ে আনা

লক্ষ্য ৩.৩: ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ও উপেক্ষিত গ্রীষ্মম-লীয় রোগের মহামারীর সমাপ্তি এবং হেপাটাইটিস, পানিবাহিত রোগ ও অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির মোকাবেলা করা

লক্ষ্য ৩.৪: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদান

লক্ষ্য ৩.৫: চেতনানাশক ওষুধ ও অ্যালকোহলসহ সকল প্রকার মাদকদ্রব্যেও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং এ সংক্রান্ত চিকিৎসাব্যবস্থা শক্তিশালী করা

লক্ষ্য ৩.৬: বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনা

লক্ষ্য ৩.৭: ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা, তথ্য ও শিক্ষাসহ যৌন ও প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পরিচর্যা সেবায় সর্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে জাতীয় কৌশল ও কর্মসূচির অঙ্গীভূত করা

লক্ষ্য ৩.৮: সকলের জন্য অসুস্থতাজনিত আর্থিক ঝুঁকিতে নিরাপত্তা, মানসম্মত অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা এবং সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ, কার্যকর, মানসম্মত আবশ্যক ওষুধ ও টিকাসুবিধা প্রাপ্তির পথ সুগম করাসহ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্য অর্জন

লক্ষ্য ৩.৯: ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি এবং বায়ু, পানি ও ভূমি দূষণ ও সংক্রমণজনিত ব্যাধি ও মৃত্যুর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৪টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

৩.ক – প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, সকল দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের বাস্তবায়ন জোরদার করা

৩.খ – উন্নয়নশীল দেশসমূহে সাধারণত যে ধরনের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগব্যাধির প্রকোপ বেশি, সে ধরনের রোগের টিকা ও ওষুধ উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন সহায়তা দান এবং ট্রিপস সমঝোতা (TRIPS Agreement) ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দোহা ঘোষণা অনুযায়ী আবশ্যকীয় সকল ওষুধপত্র ও টিকা সাশ্রয়ীমূল্যে সকলের জন্য সহজলভ্য করা; উল্লেখ্য, এই ঘোষণার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সকলের জন্য ওষুধ প্রাপ্তি সহজলভ্য করাসহ অন্যান্য সুবিধাদির পরিপূর্ণ ব্যবহারে উন্নয়নশীল দেশসমূহের অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে

৩.গ – উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহে স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা, এই খাতে নিয়োজিত জনবলের স্থায়ীত্ব এবং তাদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করা

৩.ঘ – জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি প্রশমন এবং এ সংশ্লিষ্ট পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কতা বিষয়ে সকল দেশের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা

অভীষ্ট ৪ : মানসম্মত শিক্ষা

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13431″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-4-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ৪   :    সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি   </span></h3>

‘অভীষ্ট ৪’ বাস্তবায়নে ৭টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ৪.১: ২০৩০ সালের মধ্যে সকল অল্পবয়সী ছেলে ও মেয়ে যাতে অবৈতনিক, সমতাভিত্তিক ও মানসম্মত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে যা হবে প্রাসঙ্গিক ও ফলপ্রসূ, তা নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৪.২: ২০৩০ সালের মধ্যে সকল অল্পবয়সী ছেলে ও মেয়ে যাতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাসহ শৈশবের একেবারে গোড়া থেকে মানসম্মত বিকাশ ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে তার নিশ্চয়তা বিধান করা

লক্ষ্য ৪.৩: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সুযোগসহ সাশ্রয়ী ও মানসম্মত কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষায় সকল নারী ও পুরুষের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৪.৪: চাকরি ও শোভন কাজের সুযোগ লাভ এবং উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতাসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দক্ষতাসম্পন্ন যুবক ও প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠির সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা

লক্ষ্য ৪.৫: প্রতিবন্ধী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারী শিশুসহ সকল ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সকল পর্যায়ে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং শিক্ষায় নারী-পুরুষ বৈষম্যের অবসান ঘটানো

লক্ষ্য ৪.৬: নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে যুবসমাজের সবাই এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতা ও গণন-দক্ষতা অর্জন করতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করা

লক্ষ্য ৪.৭: টেকসই উন্নয়ন ও টেকসই জীবনধারার জন্য শিক্ষা, মানবাধিকার, জেন্ডার সমতা, শান্তি ও অহিংসামূলক সংস্কৃতির বিকাশ, বৈশ্বিক নাগরিকত্ব এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়নে সংস্কৃতির অবদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থী যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

৪.ক – শিশু, প্রতিবন্ধিতা ও জেন্ডার বিষয়ে সংবেদনশীল শিক্ষা সহায়ক সুবিধা গড়ে তোলা ও উন্নতকরণ এবং সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা

৪.খ – উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কারিগরি, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচিসহ উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির জন্য উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জন্য প্রদেয় শিক্ষা বৃত্তির সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো

৪.গ – শিক্ষক প্রশিক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা

অভীষ্ট ৫: জেন্ডার সমতা

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13432″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-5-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ৫: জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষমতায়ন   </span></h3>

‘অভীষ্ট ৫’ বাস্তবায়নে ৬টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ৫.১: সকল ক্ষেত্রে সকল নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটানো

লক্ষ্য ৫.২: পাচার, যৌন হয়রানি ও অন্য সব ধরনের শোষণ-বঞ্চনাসহ ঘরে-বাইরে সকল নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহিংসতার অবসান

লক্ষ্য ৫.৩: শিশুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিবাহ এবং নারী যৌনাঙ্গচ্ছেদের মতো সকল ধরনের ক্ষতিকর প্রথার অবসান

লক্ষ্য ৫.৪: সরকারি সেবা, অবকাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষা নীতিমালার মাধ্যমে অবৈতনিক পরিচর্যাকার্য ও গৃহস্থালি কাজের মর্যাদা ও স্বীকৃতিদান এবং খানা ও পারিবারিক পরিমণ্ডলে দেশীয় নিরীখে যুক্তিসঙ্গত অংশীদারিত্বমূলক দায়িত্বপালনকে উৎসাহিত করা

লক্ষ্য ৫.৫: রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সকল পর্যায়ে নেতৃত্ব দানের জন্য নারীদের পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর অংশগ্রহণ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৫.৬: জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন ও বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন এবং এসবের পর্যালোচনাধর্মী বিভিন্ন সম্মেলনের সিদ্ধান্তের আলোকে স্বীকৃত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকারের ক্ষেত্রে নারীদের সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

৫.ক – বিদ্যমান জাতীয় আইনকানুনের আলোকে, অর্থনৈতিক সম্পদ এবং ভূমিসহ সকল প্রকার সম্পত্তির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক সেবা, উত্তরাধিকার এবং প্রাকৃতিক সম্পদে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিয়তার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পাদন

৫.খ – নারীদের ক্ষমতায়নে সহায়ক প্রযুক্তি, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির, ব্যবহার সম্প্রসারণ

৫.গ – সকল পর্যায়ে নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষমতায়ন এবং জেন্ডার সমতা আনয়নে যথাযথ নীতিমালা ও প্রয়োগযোগ্য আইনি বিধান প্রণয়ন এবং এগুলোকে শক্তিশালী করা

অভীষ্ট ৬: নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   <img class=”aligncenter size-200 wp-image-13433″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-6-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />   </span></h3>

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ৬: সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা   </span></h3>

‘অভীষ্ট ৬’ বাস্তবায়নে ৬টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ৬.১: ২০৩০ সালের মধ্যে, সকলের সর্বজনীন ও সমতাভিত্তিক নিরাপদ ও স্বল্পমূল্যের খাবার পানির প্রাপ্যতা অর্জন

লক্ষ্য ৬.২: নারী ও অল্পবয়সী মেয়েসহ অরক্ষিত পরিস্থিতিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর চাহিদার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পর্যাপ্ত ও সমতাভিত্তিক স্যানিটেশন (পয়ঃনিষ্কাশন) ও স্বাস্থ্যবিধিসম্মত জীবনধারণের অভিগম্যতা নিশ্চিত করা এবং উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অবসান ঘটানো

লক্ষ্য ৬.৩: দূষণ হ্রাস করে, পানিতে আবর্জনা নিক্ষেপ বন্ধ করে এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও উপকরণের নির্গমন ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে এসে, অপরিশোধিত বর্জ্যপানির অনুপাত অর্ধেকে নামিয়ে এনে এবং পুনশ্চক্রায়ন (recycling) ও নিরাপদ পুনর্ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে পানির গুণগত মান বৃদ্ধি করা

লক্ষ্য ৬.৪: ২০৩০ সালের মধ্যে সকল খাতে পানি ব্যবহার দক্ষতার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন এবং পানি-সংকট সমস্যার সমাধানকল্পে সুপেয় পানির টেকসই সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং পানি সংকটের কারণে ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা

লক্ষ্য ৬.৫: প্রযোজ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত উপায়ে আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার ব্যবহারসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল পর্যায়ে সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার বাস্তবায়ন

লক্ষ্য ৬.৬: ২০২০ সালের মধ্যে পর্বত, অরণ্য, জলাভূমি, নদী, ভূগর্ভস্থ জলাধার (পানিস্তর) ও হ্রদসহ পানি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ২টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

৬.ক – ২০৩০ সালের মধ্যে পানি আহরণ, নির্লবণীকরণ, পানির দক্ষ ব্যবহার, বর্জ্যপানি পরিশোধন, পুনশ্চক্রায়ন (recycling) ও পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তিসহ পানি ও স্যানিটেশন সংশ্লিষ্ট কর্মকা- ও কর্মসূচিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো

৬.খ – পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে সমর্থন ও সহযোগিতা জোরদার করা

অভীষ্ট ৭: সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13434″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-7-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ৭: সকলের জন্য সাশ্রয়ী      ,       নির্ভরযোগ্য ,  টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করা   </span></h3>

‘অভীষ্ট ৭’ বাস্তবায়নে ৩টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ৭.১: ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য মূল্যসাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও আধুনিক জ্বালানি সেবায় সর্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৭.২: ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জ্বালানি মিশ্রণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা

লক্ষ্য ৭.৩: জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নের বৈশ্বিক হার ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ২টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

৭.ক – ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা এবং উন্নততর ও নির্মলতর জীবাশ্ম-জ্বালানি প্রযুক্তিসহ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গবেষণা ও প্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং জ্বালানি অবকাঠামো ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করা

৭.খ – ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশসমূহে বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশসমূহের স্ব স্ব সহায়ক কর্মসূচি অনুযায়ী সকলের জন্য আধুনিক ও টেকসই জ্বালানি সেবা সরবরাহকল্পে জ্বালানি অবকাঠামোর সম্প্রসারণসহ প্রযুক্তির উন্নতি সাধন

অভীষ্ট ৮: শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13435″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-8-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ৮: স্থিতিশীল      ,       অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সকলের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা   </span></h3>

‘অভীষ্ট ৮’ বাস্তবায়নে ১০টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ৮.১: জাতীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী মাথাপিছু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখা এবং বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশসমূহে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ন্যূনতম ৭ শতাংশ অর্জন

লক্ষ্য ৮.২: উচ্চ-মূল্যসংযোজনী ও শ্রমঘন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানসহ বৈচিত্র্যকরণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উদ্ভাবনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার উচ্চতর মান অর্জন

লক্ষ্য ৮.৩: আর্থিক সেবা সহজলভ্য করার মাধ্যমে এবং উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ড, শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টি, ব্যবসায়িক উদ্যোগ, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনাসহায়ক উন্নয়নমুখী নীতিমালার প্রণোদনা এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রাতিষ্ঠানিকরণকে উৎসাহিত করা

লক্ষ্য ৮.৪: উন্নত দেশগুলোর নেতৃত্বে টেকসই উৎপাদন ও ভোগ বিষয়ক কর্মসূচির ১০ বছর মেয়াদি কাঠামো অনুযায়ী ২০৩০ সাল অবধি ভোগ ও উৎপাদনে বৈশ্বিক সম্পদ-দক্ষতার ক্রমাগত উন্নতি সাধন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেন পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণ না হয় তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকা

লক্ষ্য ৮.৫: ২০৩০ সালের মধ্যে যুবসমাজ ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীসহ সকল নারী ও পুরুষের জন্য পূর্ণকালীন উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান ও শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্য অর্জন এবং সমান কাজের জন্য সমান মজুরি প্রদান নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ৮.৬: কর্মে, শিক্ষায় বা প্রশিক্ষণে নিয়োজিত নয় এমন যুবকদের অনুপাত ২০২০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা

লক্ষ্য ৮.৭: বলপূর্বক শ্রমের উচ্ছেদসাধন, মানবপাচার ও আধুনিক দাসত্বের অবসান এবং শিশু সৈনিক নিয়োগ ও ব্যবহারসহ সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকারের শিশুশ্রম নিষিদ্ধ ও নির্মূলের জন্য আশু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সকল প্রকার শিশুশ্রমের অবসান ঘটানো

লক্ষ্য ৮.৮: প্রবাসী শ্রমিক, বিশেষ করে প্রবাসী মহিলা ও নিশ্চয়তাহীন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও শ্রম অধিকার সংরক্ষণ

লক্ষ্য ৮.৯: স্থানীয় সংস্কৃতি ও পণ্যসম্ভারের সম্প্রসারণে সহায়ক ও কর্মসৃজনমূলক টেকসই পর্যটনশিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

লক্ষ্য ৮.১০: সকলের জন্য ব্যাংকিং, বিমা ও আর্থিক সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ২টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

৮.ক – অপরাপর ব্যবস্থাসহ ‘স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট কারিগরি সহায়তা বিষয়ক সমন্বিত বর্ধিত কাঠামোর’ আওতায় উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের বাণিজ্য প্রসারে প্রয়োজনীয় সহায়তা বৃদ্ধি করা

৮.খ – ২০২০ সালের মধ্যে যুব-কর্মসংস্থানের জন্য একটি বৈশ্বিক কৌশল প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন, এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বৈশ্বিক কর্মচুক্তির বাস্তবায়ন

অভীষ্ট ৯: শিল্প , উদ্ভাবন ও অবকাঠামো

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13436″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-9-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ৯: প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণ ,  অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নে প্রণোদনা এবং উদ্ভাবনে সহায়তা প্রদান   </span></h3>

‘অভীষ্ট ৯’ বাস্তবায়নে ৫টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ৯.১: সকলের জন্য মূল্যসাশ্রয়ী ও ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকারের ওপর বিশেষ গুরুত্বদানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণে সহায়তার জন্য আঞ্চলিক ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ মানসম্মত, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণ

লক্ষ্য ৯.২: অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নে প্রণোদনা প্রদান এবং জাতীয় পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে কর্মসংস্থান ও জিডিপি-তে শিল্পখাতের অংশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি এবং স্বল্পোন্নত দেশসমূহে এই খাতের অবদান দ্বিগুণ করা

লক্ষ্য ৯.৩: বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহে ক্ষুদ্র শিল্প ও অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগের অনুকূলে আর্থিক সেবা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং স্বল্পসুদে ঋণদানসহ সমন্বিত ভ্যাল্যু চেইন ও বাজার ব্যবস্থায় তাদের সমন্বিত করা

লক্ষ্য ৯.৪: ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশের স্ব স্ব সামর্থ্য অনুযায়ী অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে টেকসই শিল্পকারখানা গড়ে তোলা যাতে সম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও শিল্পপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার অধিকতর ব্যবহারের সুবাদে টেকসই শিল্পায়নের বিকাশ সম্ভব হয়

লক্ষ্য ৯.৫: ২০৩০ সালের মধ্যে উদ্ভাবনাকে উৎসাহিত করা এবং প্রতি মিলিয়ন জনপ্রতি গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধিসহ সকল দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগের সম্প্রসারণ এবং শিল্পখাতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার উন্নতি সাধন

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

৯.ক – আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশসমূহ, স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহে আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তাদানের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশসমূহে টেকসই ও প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা প্রদান

৯.খ – শিল্পপণ্যের বৈচিত্র্য ও পণ্যমূল্য সংযোজনের জন্য সহায়ক নীতিপরিবেশ নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য উদ্যেগের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশসমূহে স্থানীয় প্রযুক্তির বিকাশ, গবেষণা ও উদ্ভাবনে সহায়তা প্রদান

৯.গ – তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা এবং ২০২০ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশসমূহে ইন্টারনেটে সর্বজনীন ও মূল্যসাশ্রয়ী অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণে সচেষ্ট হওয়া

অভীষ্ট ১০: অসমতা হ্রাস

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13437″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-10-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ১০: অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় অসমতা কমিয়ে আনা   </span></h3>

‘অভীষ্ট ১০’ বাস্তবায়নে ৭টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ১০.১: ২০৩০ সালের মধ্যে আয়ের দিক থেকে সর্বনি¤œ পর্যায়ে অবস্থানকারী ৪০ শতাংশ জনসংখ্যার আয়ের প্রবৃদ্ধি হার পর্যায়ক্রমে জাতীয় গড় আয়ের চেয়ে বেশি অর্জন করা এবং এ ধারা অব্যাহত রাখা

লক্ষ্য ১০.২: বয়স, জেন্ডার, প্রতিবন্ধিতা, জাতিসত্তা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, জন্মস্থান, ধর্ম অথবা অর্থনৈতিক বা অন্যান্য পরিচয় নির্বিশেষে ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রসারণ করা

লক্ষ্য ১০.৩: বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা ও প্রথার অবসান ঘটিয়ে এবং যথোপযুক্ত আইন, নীতিমালা ও কর্মব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল ভোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ১০.৪: নীতিমালা, বিশেষ করে রাজস্ব, মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক নীতিমালা গ্রহণ ও ক্রমান্বয়ে অধিকতর সমতা অর্জন করা

লক্ষ্য ১০.৫: বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজার ও প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রণ (প্রবিধান) ও পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং অনুরূপ প্রবিধানমালার বাস্তবায়ন শক্তিশালী করা

লক্ষ্য ১০.৬: অধিকতর কার্যকর, বিশ্বাসযোগ্য, জবাবদিহিমূলক ও বৈধ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বার্থে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নয়নশীল দেশসমূহের অধিকতর প্রতিনিধিত্ব ও মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ১০.৭: পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু অভিবাসন নীতিমালা বাস্তবায়নসহ অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ, নিয়মিত ও দায়িত্বশীল উপায়ে জনগণের অভিবাসন ও গমনাগমন সহজতর করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

১০.ক – বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য প্রদেয় ‘বিশেষ ও প্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা’ সম্পর্কিত নীতিমালার বাস্তবায়ন

১০.খ – প্রয়োজনের নিরীখে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ, আফ্রিকার দেশসমূহ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রণীত জাতীয় পরিকল্পনা ও কর্মসূচি অনুযায়ী বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগসহ সরকারি উন্নয়ন সহায়তা ও আর্থিক প্রবাহে উৎসাহ প্রদান করা

১০.গ – ২০৩০ সালের মধ্যে অভিবাসীদের অর্জিত অর্থ (রেমিট্যান্স) প্রেরণের খরচ ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা এবং ৫ শতাংশের বেশি ব্যয় হয় এমন রেমিট্যান্স করিডরের বিলুপ্তি সাধন

অভীষ্ট ১১: টেকসই নগর ও জনবসতি

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13438″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-11-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ১১: অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ ,  প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা   </span></h3>

‘অভীষ্ট ১১’ বাস্তবায়নে ৭টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ১১.১: ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও মূল্যসাশ্রয়ী আবাসন এবং মৌলিক পরিসেবার প্রাপ্তি নিশ্চিত করাসহ বস্তির উন্নয়ন সাধন

লক্ষ্য ১১.২: অরক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়োবৃদ্ধ মানুষের চাহিদার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রেখে প্রধানত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের সম্প্রসারণের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন এবং এর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ, সাশ্রয়ী, সুলভ ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থায় সকলের অভিগম্যতা নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ১১.৩: ২০৩০ সালের মধ্যে সকল দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই নগরায়ন ব্যবস্থার প্রসার এবং অংশগ্রহণমূলক, সমন্বিত ও টেকসই জনবসতি পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি

লক্ষ্য ১১.৪: বিশ্বজনীন সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রচেষ্টা জোরদার করা

লক্ষ্য ১১.৫: দরিদ্র ও অরক্ষিত পরিস্থিতিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা প্রদানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে ২০৩০ সালের মধ্যে পানি সম্পৃক্ত দুর্যোগসহ অন্যান্য দুর্যোগে বৈশ্বিক জিডিপি’র অংশ হিসেবে সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা, এবং সেই সাথে এসব দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করা

লক্ষ্য ১১.৬: বায়ুর বিশুদ্ধতার মান এবং পৌর ও অন্যান্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদানসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবেশের ওপর নগরসমূহের মাথাপিছু বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনা

লক্ষ্য ১১.৭: ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিশেষ করে নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সবুজ ও উন্মুক্ত স্থানে নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অভিগম্যতাবান্ধব সর্বজনীন প্রবেশাধিকার প্রদান করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

১১.ক – জাতীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা জোরদার করে শহর, উপশহর ও গ্রামীণ এলাকাসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ইতিবাচক সংযোগ স্থাপনে সমর্থন দান

১১.খ – ২০২০ সালের মধ্যে এমন নগর ও মানববসতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা যারা অন্তর্ভুক্তি, সম্পদ-দক্ষতা, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন ও প্রশমন, দুর্যোগে প্রতিকূলতা-সহিষ্ণুতা সংবলিত সমন্বিত নীতিমালা ও পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে, এবং সকল স্তরে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের জন্য সেনদাই ফ্রেমওয়ার্ক ২০১৫-২০৩০ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সার্বিক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন

১১.গ – স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে টেকসই ও প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু ভবনাদি নির্মাণে স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তাসহ অন্যান্য প্রকারে সমর্থন যোগানো

অভীষ্ট ১২: পরিমিত ভোগ ও উৎপাদন

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13439″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-12-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ১২: পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরন নিশ্চিত করা   </span></h3>

‘অভীষ্ট ১২’ বাস্তবায়নে ৮টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ১২.১: উন্নয়নশীল দেশসমূহের উন্নয়ন ও সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে টেকসই উৎপাদন ও ভোগের ধরন বিষয়ক কর্মসূচির ১০ বছর মেয়াদি কাঠামো বাস্তবায়নে সকল দেশ কর্তৃক যথাযথ কর্মব্যবস্থা গ্রহণ যাতে অগ্রণী ভূমিকা নিবে উন্নত দেশসমূহ

লক্ষ্য ১২.২: ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের দক্ষ ব্যবহার ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ১২.৩: খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে মাথাপিছু বৈশ্বিক খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং ফসল আহরণ-উত্তর ক্ষয়ক্ষতিসহ উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনের বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্যপণ্য বিনষ্ট হওয়ার পরিমাণ কমানো

লক্ষ্য ১২.৪: ২০২০ সালের মধ্যে ঐকমত্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরিকাঠামো অনুযায়ী রাসায়নিক পদার্থ ও সব ধরনের বর্জ্যরে জীবনচক্রব্যাপী পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর এদের বিরূপ প্রভাব কমাতে বায়ু, পানি ও মাটিতে সংশ্লিষ্ট নিঃসরণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমানো

লক্ষ্য ১২.৫: প্রতিরোধ, হ্রাসকরণ, পুনশ্চক্রায়ন (recycling) ও পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা

লক্ষ্য ১২.৬: সকল কোম্পানিকে, বিশেষ করে বৃহৎ ও বহুজাতিক কোম্পানিসমূহকে টেকসই কর্মপদ্ধতি গ্রহণে এবং তাদের প্রতিবেদন প্রণয়ন চক্রে টেকসই সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট তথ্য সংযোজনে উৎসাহিত করা

লক্ষ্য ১২.৭: জাতীয় নীতিমালা ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় টেকসই পদ্ধতির প্রচলনে উৎসাহ প্রদান

লক্ষ্য ১২.৮: সর্বত্র সকল মানুষের যেন টেকসই উন্নয়ন ও প্রকৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ জীবনরীতি বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও সচেতনতা থাকে ২০৩০ সালের মধ্যে তা নিশ্চিত করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

১২.ক – ভোগ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে অধিকতর টেকসই পন্থায় উত্তরণকল্পে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান

১২.খ – স্থানীয় সংস্কৃতি ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রচার ও প্রসারসহ নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টিকারী টেকসই পর্যটনশিল্পে টেকসই উন্নয়নের প্রভাব পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন

১২.গ দেশীয় পরিস্থিতির বাজার ব্যবস্থার বিভিন্ন বিচ্যুতির অপসারণের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানিতে প্রদত্ত অপচয় বৃদ্ধিকারী অদক্ষ ভর্তুকিসমূহের যুক্তিযুক্ত পুনর্নির্ধারণ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর নির্দিষ্ট চাহিদা ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বিবেচনায় নিয়ে এবং দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সম্ভাব্য সকল বিরূপ প্রভাব সর্বনি¤œ পর্যায়ে রেখে ও পরিবেশগত অভিঘাতকে বিবেচনায় নিয়ে করকাঠামোর পুনর্গঠন এবং যেসব ক্ষেত্রে ক্ষতিকর ভর্তুকি আছে সেগুলোর ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তিসহ অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণ

অভীষ্ট ১৩: জলবায়ু কার্যক্রম

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13447″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-13-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ১৩: জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা গ্রহণ<a style=”color: #e6243e;” href=”#_ftn1″ name=”_ftnref1″>[1]</a>   </span></h3>

‘অভীষ্ট ১৩’ বাস্তবায়নে ৩টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ১৩.১: সকল দেশে জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রতিকূলতা-সহিষ্ণুতা ও অভিযোজন-সক্ষমতা বৃদ্ধি করা

লক্ষ্য ১৩.২: জাতীয় নীতিমালা, কৌশল ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কর্মব্যবস্থার সমন্বয়

লক্ষ্য ১৩.৩: জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, অভিযোজন, প্রভাব নিরসন ও আগাম সতর্কতা বিষয়ে শিক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানব ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার উন্নতি সাধন

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ২টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

১৩.ক – অর্থবহ প্রশমন তৎপরতা ও বাস্তবায়ন-স্বচ্ছতার প্রেক্ষাপটে উন্নয়নশীল দেশসমূহের চাহিদা মেটাতে ‘জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি)’-এর অধীনে উন্নত দেশসমূহ কর্তৃক প্রতিশ্রুত ২০২০ সাল নাগাদ যৌথভাবে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে মূলধনী অর্থায়নের (capitalization) মাধ্যমে ‘সবুজ জলবায়ু তহবিল (Green Climate Fund)’ সক্রিয় করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ

১৩.খ – নারী, যুবসমাজ, স্থানীয় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধিকার প্রদান সাপেক্ষে স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কার্যকর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে কর্মপদ্ধতির প্রসার

<em><a href=”#_ftnref1″ name=”_ftn1″>[1]</a> জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনকে (ইউএনএফসিসিসি) আন্তঃরাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা বিষয়ক আলোচনার মূল ফোরাম হিসেবে স্বীকার করে।</em>

অভীষ্ট ১৪: জলজ জীবন

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13440″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-14-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ১৪: টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর,  মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার   </span></h3>

‘অভীষ্ট ১৪’ বাস্তবায়নে ৭টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ১৪.১: ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ধরনের সামুদ্রিক দূষণ, বিশেষ করে স্থলভিত্তিক কর্মকাণ্ড, সামুদ্রিক (নৌ) আবর্জনা ও পুষ্টি-দূষণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস ও তার প্রতিরোধ

লক্ষ্য ১৪.২: সাগর-মহাসাগরে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও উৎপাদনশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে প্রয়োজনীয় কর্মব্যবস্থা গ্রহণ ও এসবের প্রতিকূলতা-সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণসহ ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব পরিহারের লক্ষ্যে সামুদ্রিক ও উপকূলীয় প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ

লক্ষ্য ১৪.৩: সকল পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে সামুদ্রিক অম্লায়নের (acidification) ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা এবং এর মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা

লক্ষ্য ১৪.৪: ২০২০ সালের মধ্যে মৎস্য আহরণের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ এবং মাছের অতিআহরণ, অবৈধ, গোপন, অনিয়ন্ত্রিত ও সকল ধরনের ক্ষতিকর আহরণ-পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে এবং বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে যথাসম্ভব স্বল্পতম সময়ে মাছের মজুদ পুনরুদ্ধার করে ন্যূনতম সেই পর্যায়ে নিয়ে আসা, যেখানে এদের জীবতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ মাত্রায় টেকসই উৎপাদন সম্ভব

লক্ষ্য ১৪.৫: প্রাপ্ত সর্বোত্তম বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২০২০ সালের মধ্যে অন্ততপক্ষে ১০ শতাংশ উপকূলীয় ও সামুদ্রিক এলাকার সংরক্ষণ

লক্ষ্য ১৪.৬: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মৎস্য ভর্তুকি সংক্রান্ত আলোচনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য যথোপযুক্ত ও কার্যকর, বিশেষ ও প্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা – এ কথাটিকে মেনে নেওয়া সাপেক্ষে ২০২০ সালের মধ্যে (মাছ ধরার জাহাজের) অতিসক্ষমতা বা ধারণক্ষমতা অর্জনে ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণে সহায়ক এমন সকল প্রকার মৎস্য ভর্তুকি নিষিদ্ধ করা, অবৈধ, গোপন ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণে সহায়ক সকল ভর্তুকির অবসান এবং অনুরূপ নতুন ভর্তুকি চালু করা থেকে বিরত  থাকা <a href=”#_ftn1″ name=”_ftnref1″>[*]</a>

লক্ষ্য ১৪.৭: মৎস্য আহরণ, মৎস্যচাষ ও পর্যটনশিল্পের টেকসই ব্যবস্থাপনাসহ সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করে ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়ানো

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

১৪.ক – সমুদ্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহের উন্নয়নে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমুদ্র বিষয়ক প্রযুক্তি বিনিময় সংক্রান্ত আন্তঃদেশীয় সমুদ্রবিজ্ঞান কমিশনের মানদ- ও নির্দেশমালা বিবেচনায় রেখে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বৃদ্ধি, গবেষণা সক্ষমতার বিকাশ ও সমুদ্র বিষয়ক প্রযুক্তি হস্তান্তর

১৪.খ – প্রচলিত পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র পরিসরে মৎস্য আহরণকারী জেলেদের সামুদ্রিক সম্পদ ও বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান

১৪.গ – ‘যে ভবিষ্যৎ আমদের কাম্য (The future we want)’-এর ১৫৮তম অনুচ্ছেদে বিবৃত সাগর-মহাসাগর ও সংশ্লিষ্ট সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের আইনি কাঠামো হিসেবে স্বীকৃত সামুদ্রিক আইন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশনে গৃহীত আন্তর্জাতিক আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাগর-মহাসাগর ও সংশ্লিষ্ট সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা

<em><a href=”#_ftnref1″ name=”_ftn1″>[*]</a> চলমান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি, দোহা উন্নয়ন এজেন্ডা এবং হংকং মিনিস্টেরিয়াল ম্যান্ডেট বিবেচনায় রেখে।</em>

অভীষ্ট ১৫: স্থলজ জীবন

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13441″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-15-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ১৫: স্থলজ প্রতিবেশের পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা প্রদান এবং টেকসই ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান , টেকসই বন ব্যবস্থাপনা , মরুকরণ প্রক্রিয়ার মোকাবেলা এবং ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস প্রতিরোধ   </span></h3>

‘অভীষ্ট ১৫’ বাস্তবায়নে ৯টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ১৫.১: ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতার সাথে সঙ্গতি রেখে, বিশেষ করে বন, জলাভূমি, পাহাড় ও শুষ্ক ভূমিতে স্থলজ ও অভ্যন্তরীণ স্বাদু পানির প্রতিবেশ এবং তা থেকে আহরিত সুবিধাবলীর সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ১৫.২: ২০২০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পর্যায়ে সকল প্রকার বনভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনার বাস্তবায়ন, বনভূমি উজাররোধ, ক্ষতিগ্রস্ত বনভূমি পুনরুদ্ধার, বনায়ন ও পুনঃবনায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধন

লক্ষ্য ১৫.৩: ২০৩০ সালের মধ্যে মরুকরণ প্রক্রিয়ার মোকাবেলা, মরুকরণ, খরা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিসহ ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমি ও মৃত্তিকার পুনরুজ্জীবন এবং একটি ভূমি-অবক্ষয়মুক্ত বিশ্ব নির্মাণে সচেষ্ট হওয়া

লক্ষ্য ১৫.৪: ২০৩০ সালের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিবেশ ও সংশ্লিষ্ট জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, যাতে করে টেকসই উন্নয়নের জন্য আবশ্যকীয় সুবিধাবলী প্রদানে এদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

লক্ষ্য ১৫.৫: প্রাকৃতিক আবাসস্থলসমূহের অবক্ষয় হ্রাস করার জন্য জরুরিভিত্তিতে অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়রোধ এবং ২০২০ সালের মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিসমূহের বিলোপ প্রতিরোধ ও এদের সুরক্ষাদান

লক্ষ্য ১৫.৬: আন্তর্জাতিক সমঝোতা অনুযায়ী জিনগত (genetic) সম্পদ ব্যবহার থেকে আহরিত সুবিধাবলীর স্বচ্ছ ও ন্যায্য বণ্টন এবং এ ধরনের সম্পদের যথোপযুক্ত প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ১৫.৭: সংরক্ষিত উদ্ভিদ ও প্রাণি প্রজাতির অবৈধ শিকার ও পাচারের অবসানকল্পে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বন্যপ্রাণিজাত অবৈধ পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ

লক্ষ্য ১৫.৮: ২০২০ সালের মধ্যে স্থলজ ও জলজ প্রতিবেশ বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী প্রজাতির বিরূপ প্রভাব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা ও এসবের বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অধিক ক্ষতিকর প্রজাতিগুলোর নিয়ন্ত্রণ বা উচ্ছেদ সাধন

লক্ষ্য ১৫.৯: ২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন প্রক্রিয়া, দারিদ্র্য নিরসন কৌশল ও হিসাব ব্যবস্থায় প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মূল্যমান অঙ্গীভূত করা

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ৩টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

১৫.ক – জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারকল্পে সকল উৎস থেকে আর্থিক সম্পদ সংগ্রহ ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এর বৃদ্ধি সাধন

১৫.খ – টেকসই বন ব্যবস্থাপনায় অর্থায়নের জন্য সকল স্তর ও সকল উৎস হতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সম্পদ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ ও পুনঃবনায়নসহ অনুরূপ ব্যবস্থাপনার অধিকতর উন্নয়নকল্পে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পর্যাপ্ত প্রণোদনা সুবিধা প্রদান

১৫.গ – টেকসই জীবিকার সুযোগ গ্রহণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সামর্থ্য বাড়ানোসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সংরক্ষিত প্রজাতির অবৈধ শিকার ও পাচার রোধের উদ্যোগ-প্রচেষ্টায় বৈশ্বিক সমর্থন-সহায়তা বৃদ্ধি

অভীষ্ট ১ ৬ : শান্তি , ন্যায়বিচার এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13442″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-16-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>   অভীষ্ট ১৬: টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার প্রসার, সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করা এবং সকল স্তরে কার্যকর , জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান তৈরি</span></h3>

‘অভীষ্ট ১৬’ বাস্তবায়নে ১০টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

লক্ষ্য ১৬.১: সর্বত্র সকল ধরনের সহিংসতা ও সহিংসতাজনিত মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা

লক্ষ্য ১৬.২: শিশুদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার সহিংসতা ও নির্যাতনসহ শোষণ এবং শিশুপাচারের মতো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটানো

লক্ষ্য ১৬.৩: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনের শাসনের প্রসার এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে সকলের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা

লক্ষ্য ১৬.৪: ২০৩০ সালের মধ্যে অবৈধ অর্থ ও অস্ত্র প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো, অপহৃত সম্পদের পুনরুদ্ধার ও প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা এবং সকল প্রকার সংঘবদ্ধ অপরাধ মোকাবেলা করা

লক্ষ্য ১৬.৫: সকল প্রকার দুর্নীতি ও উৎকোচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করা

লক্ষ্য ১৬.৬: সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানের বিকাশ

লক্ষ্য ১৬.৭: সকল স্তরে দায়বদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করা

লক্ষ্য ১৬.৮: বৈশ্বিক শাসন-পরিচালন পদ্ধতি (governance) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নয়নশীল দেশসমূহের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও তাদের ভূমিকা জোরদার করা

লক্ষ্য ১৬.৯: ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন জন্ম নিবন্ধনসহ সকলের জন্য বৈধ পরিচয়পত্র প্রদান

লক্ষ্য ১৬.১০: জাতীয় আইন ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী জনসাধারণের তথ্য-অধিকার নিশ্চিত করা ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা প্রদান

এই লক্ষ্যগুলো পূরণে ২টি বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে-

১৬.ক – আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ও অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণপূর্বক সকল পর্যায়ে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহিংসতা প্রতিরোধসহ সন্ত্রাস ও অপরাধ মোকাবেলার সক্ষমতা নির্মাণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা

১৬.খ – টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈষম্যহীন আইন ও নীতিমালার প্রসার ও প্রয়োগ

অভীষ্ট ১৭: অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব

<img class=”aligncenter size-200 wp-image-13443″ src=”https://bdplatform4sdgs.net/wp-content/uploads/2019/05/Goal-17-200×200.jpg” alt=”” width=”200″ height=”200″ />

<h3 style=”text-align: center;”><span style=”color: #e6243e;”>অভীষ্ট ১৭: টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব উজ্জীবিতকরণ ও বাস্তবায়নের উপায়সমূহ শক্তিশালী করা</span></h3>

‘অভীষ্ট ১৭’ বাস্তবায়নে ১৯টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এগুলো হলো-

<em>অর্থায়ন</em>

লক্ষ্য ১৭.১: উন্নয়নশীল দেশসমূহে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদানসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে কর ও অন্যান্য রাজস্ব সংগ্রহের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদার করা

লক্ষ্য ১৭.২: অনেক উন্নত দেশ কর্তৃক প্রতিশ্রুত উন্নয়নশীল দেশের জন্য মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) ০.৭ শতাংশ এবং স্বল্পোন্নত দেশের জন্য জিএনআই এর ০.১৫ থেকে ০.২০ শতাংশ সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) প্রদানের লক্ষ্য অর্জনসহ উন্নত দেশসমূহ কর্তৃক সরকারি উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন; স্বল্পোন্নত দেশসমূহে জিএনআই-এর কমপক্ষে ০.২০ শতাংশ সরকারি উন্নয়ন সহায়তা দানের লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য দাতা দেশসমূহকে উৎসাহিত করা

লক্ষ্য ১৭.৩: বহুবিধ উৎস হতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সম্পদ আহরণ

লক্ষ্য ১৭.৪: ঋণ-অর্থায়ন, ঋণ মওকুফ ও ঋণ পুনর্গঠনকল্পে যথোপযুক্ত সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ-ধারণ সক্ষমতা অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা দান এবং চরম ঋণগ্রস্ত দরিদ্র দেশসমূহের বৈদেশিক ঋণের বোঝা প্রশমনের উদ্যোগ গ্রহণ

লক্ষ্য ১৭.৫: স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন

<em>প্রযুক্তি</em>

লক্ষ্য ১৭.৬: বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ে এবং এ সংশ্লিষ্ট অভিগম্যতার ক্ষেত্রে উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিপাক্ষিক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বিশেষত জাতিসংঘ পর্যায়ে বিদ্যমান প্রক্রিয়াসমূহের মধ্যে অধিকতর সমন্বয় সাধন এবং একটি বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত সমর্থন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পারস্পরিকভাবে সম্মত শর্তে জ্ঞানের আদান-প্রদান বাড়ানো

লক্ষ্য ১৭.৭: পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সুবিধাজনক, সহজ ও অনুকূল শর্তে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়ন, হস্তান্তর, প্রচার ও প্রসার ঘটানো

লক্ষ্য ১৭.৮: ২০১৭ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য স্থাপিত প্রযুক্তি ব্যাংক পূর্ণগতিতে চালুসহ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন সক্ষমতা নির্মাণ প্রক্রিয়া কার্যকর করা এবং সহায়ক প্রযুক্তি, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো

<em>সক্ষমতা বৃদ্ধি</em>

লক্ষ্য ১৭.৯: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে গৃহীত জাতীয় পরিকল্পনার সমর্থনে দক্ষ ও সুনির্দিষ্ট সক্ষমতা-বৃদ্ধির কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতাসহ আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানো

<em>বাণিজ্য</em>

লক্ষ্য ১৭.১০: দোহা উন্নয়ন এজেন্ডার সফল পরিসমাপ্তিসহ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় একটি সর্বজনীন, নিয়মতান্ত্রিক, উন্মুক্ত, বৈষম্যহীন ও ন্যায়সঙ্গত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রসার

লক্ষ্য ১৭.১১: বৈশ্বিক রপ্তানিতে ২০২০ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের অংশ দ্বিগুণ করাসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো

লক্ষ্য ১৭.১২: স্বল্পোন্নত দেশসমূহ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য প্রাধিকারভিত্তিক উৎস সংশ্লিষ্ট বিধিমালা স্বচ্ছ ও সহজ করা এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বল্পোন্নত সকল দেশের জন্য স্থায়ী ভিত্তিতে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজারসুবিধার যথাসময়ে বাস্তবায়ন

<h3><span style=”color: #e6243e;”>   পদ্ধতিগত বিষয়াদি   </span></h3>

<em>সুসঙ্গত নীতি ও প্রতিষ্ঠান</em>

লক্ষ্য ১৭.১৩: নীতি-সমন্বয় ও তার সঙ্গতি বিধানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি

লক্ষ্য ১৭.১৪: টেকসই উন্নয়নের জন্য নীতিসমূহের মধ্যে অধিকতর সঙ্গতি সাধন

লক্ষ্য ১৭.১৫: দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সকল দেশের নীতি-স্বাধীনতা ও নেতৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন

<em>বহুঅংশীজনভিত্তিক অংশীদারিত্ব</em>

লক্ষ্য ১৭.১৬: সকল দেশ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বহুঅংশীজনভিত্তিক অংশীদারিত্বের ওপর নির্ভর করে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি ও আর্থিক সম্পদের আহরণ ও ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করা

লক্ষ্য ১৭.১৭: অংশীদারিত্বের অভিজ্ঞতা ও সম্পদ সংস্থানের কৌশলের ওপর ভিত্তি করে কার্যকর সরকারি, সরকারি-বেসরকারি ও সুশীল সমাজের অংশীদারিত্বকে উৎসাহ প্রদান

<em>উপাত্ত</em><em>, </em><em>পরিবীক্ষণ ও জবাবদিহিতা</em>

লক্ষ্য ১৭.১৮: আয়, জেন্ডার, বয়স, জাতিসত্তা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, অভিবাসন, প্রতিবন্ধিতা ও ভৌগোলিক অবস্থান এবং জাতীয় প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিপুঞ্জীভূত, উন্নতমানের, সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের প্রাপ্যতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশসমূহে বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহে সক্ষমতা নির্মাণ সহায়তা বৃদ্ধি করা

লক্ষ্য ১৭.১৯: ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশসমূহে জিডিপি’র সম্পূরক হিসেবে টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি পরিমাপে বিদ্যমান উদ্যোগের উৎকর্ষতা সাধন এবং পরিসংখ্যানগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান

৬০. নতুন এই এজেন্ডার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার পুনর্নিশ্চয়তা ব্যক্ত করছি আমরা। আমরা স্বীকার করি যে পুনরুজ্জীবিত ও দৃঢ়তর বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব ও তুলনামূলকভাবে উচ্চঙ্ক্ষাখী বাস্তবায়নের উপায় ছাড়া এই উচ্চাভিলাষী অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জন সম্ভব নয়। পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত, জাতিসংঘ ও অন্যান্য কুশীলবদের একত্র করে এবং বিদ্যমান সম্পদসমূহের সমাবেশ ঘটিয়ে অভীষ্ট ও লক্ষ্য সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়ন পদ্ধতির সমর্থনে নিবিড় বৈশ্বিক অংশগ্রহণ সম্ভব হবে।

৬১. এজেন্ডাভুক্ত অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহই আমাদের সমন্বিত উচ্চাকাক্সক্ষার সফল রূপায়নের পন্থা নিরূপণ করে। এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের মূলে থাকবে পূর্বে উল্লেখিত প্রতিটি টেকসই উন্নয়ন এবং অভীষ্ট ১৭ বাস্তবায়নের উপায় সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহ। অন্যান্য অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার মতোই সমান গুরুত্ব বহন করে বাস্তবায়ন পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট এই অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ। বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা এবং অগ্রগতি পরিমাপের জন্য প্রস্তুত বৈশ্বিক নির্দেশক কাঠামোর সমমাত্রার অগ্রাধিকার পাবে এই বিশেষ লক্ষ্যমাত্রাসমূহ।

৬২. আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা[1] গৃহীত সংহত নীতিমালা ও কর্মকান্ডের পৃষ্ঠপোষণায় টেকসই উন্নয়ন অভিলাষী একটি পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক অংশীদারিত কাঠামোর আওতায় বাস্তবায়ন সম্ভব এই এজেন্ডার ও সংশ্লিষ্ট অভীষ্টসমূহের। উল্লেখ্য যে, টেকসই উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট ২০৩০ এজেন্ডার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা। ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নের উপায় সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহের সমর্থন ও পরিপূরণই কেবল নয়, এদের প্রাসঙ্গিকতা প্রতিষ্ঠায়ও সহায়তা প্রদান করে এই অ্যাকশন এজেন্ডা। অভ্যন্তরীণ সরকারি সম্পদ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও অর্থায়নব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা, উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ঋণ ও ঋণ প্রদান সক্ষমতা, পদ্ধতিগত বিষয়সমূহ এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উপাত্ত, পরিবীক্ষণ ও ফলো-আপ প্রভৃতির নিবিড় সংশ্লিষ্টতায় এই এজেন্ডা ঋদ্ধ।

৬৩. আমাদের প্রচেষ্টার মূলকেন্দ্রে থাকবে একটি সমন্বিত জাতীয় অর্থায়ন কাঠামোর সমর্থনপুষ্ট জাতীয়ভাবে গৃহীত পস্পরপর-সহযোগী একগুচ্ছ টেকসই উন্নয়ন কৌশল। আমরা পুনরায় ব্যক্ত করছি যে, প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রাথমিক দায়িত্বভার তাদের নিজেদের ওপরই বর্তায়, ফলে জাতীয় নীতিমালা ও উন্নয়ন কৌশলসমূহের ভূমিকার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে সর্বতোভাবে বাহুল্য। প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক বিধিমালা ও প্রতিশ্রুতিসমূহের সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রাখার পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা সকল দেশের নীতি স্বাধীনতা ও নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একই সময়ে, সুসঙ্গত ও পস্পপর-সহযোগী বৈশ্বিক বাণিজ্য, অর্থ ও অর্থায়ন ব্যবস্থা, বর্ধিত ও জোরদার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাসহ সহায়ক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকতে হবে জাতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টায়। উপযুক্ত জ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ এবং বৈশ্বিকভাবে এদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াও প্রভূত গুরুত্ববাহী। সকল কুশীলবের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়ক পরিবেশ ও নীতি অনুসরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অন্বেষায় বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের পুনরুজ্জীবনও আমদের প্রতিজ্ঞাভুক্ত।

৬৪. সকল প্রাসঙ্গিক কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা, যথা: ইস্তাম্বুল ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের বর্ধিত কর্মব্যবস্থা প্রণালীর (এসএএমওএ) পথ-নকশা এবং ২০১৪-২০২৪ দশক ব্যাপী স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ সংশ্লিষ্ট ভিয়েনা কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নে আমাদের আন্তরিক সমর্থন থাকবে। আফ্রিকান ইউনিয়নের এজেন্ডা ২০৬৩ ও আফ্রিকার উন্নয়নে নব্য অংশীদারিত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিগুলিতে সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব আমরা গভীরভাবে অনুধাবন করছি। উল্লিখিত সকল কর্মপরিকল্পনাই নতুন এজেন্ডার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংঘর্ষপীড়িত ও সংঘর্ষোত্তর পরিস্থিতে নিপতিত দেশসমূহে স্থিতিশীল শান্তি ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনকেও কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমরা চিহ্নিত করেছি।

৬৫. মধ্যম আয়ের দেশসমূহ টেকসই উন্নয়ন অর্জনে এখনও প্রভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে। এখন পর্যন্ত অর্জিত সাফল্যসমূহ যাতে বজায় থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য অভিজ্ঞতা বিনিময়, অধিকতর সমন্বয়, জাতিসংঘের উন্নয়ন ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক সংস্থা ও অন্যান্য অংশীপ্রতিষ্ঠানের উনড়বততর ও লক্ষ্যনির্দিষ্ট সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।

৬৬. টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনসহ টেকসই উন্নয়ন অন্বেষায় আমাদের সম্মিলিত অভিযাত্রার মূল দর্শন হবে সকল দেশের জন্য জাতীয় স্বত্বাধিকার নীতির ওপর ভিত্তিপ্রাপ্ত সরকারি নীতিমালা এবং দেশজ সম্পদের সমাহার ও কার্যকর ব্যবহার। স্বীকার্য যে, সকল পর্যায়ে সহায়ক পরিবেশের সমর্থনপুষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমেই মূলত দেশজ সম্পদের সৃষ্টি হয়।

৬৭. উৎপাদনশীলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মূল চালিকাশক্তি হলো বেসরকারি খাতের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সমবায়ী প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত বেসরকারি খাতের বৈচিত্র্যের বিষয়ে আমরা সচেতন। তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনার সার্থক প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন চ্যালেঞ্জসমূহের সমাধানে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা একটি প্রগতিশীল, সক্রিয় ও কার্যকরী ব্যবসায়িক খাতের বিকাশ ঘটাতে চাই। পাশাপাশি আমরা সুরক্ষিত রাখতে চাই শ্রম-অধিকার এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রমিত মান। এক্ষেত্রে পথনির্দেশক হবে প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক মানদ- ও চুক্তিসমূহ এবং এ খাতের অন্যান্য চলমান উদ্যোগসমূহ, যথা: ব্যবসা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতি নির্দেশক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মানবাধিকার ও শ্রম সংশ্লিষ্ট মানদন্ড, শিশু-অধিকার বিষয়ক কনভেনশন এবং প্রধান বহুপাক্ষিক পরিবেশ চুক্তিসমূহ (চুক্তিভুক্ত দেশসমূহের জন্য)।

৬৮. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম চালিকাশক্তি, টেকসই উন্নয়নের প্রসারেও রয়েছে এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় আমরা একটি, সর্বজনীন, বিধি-কেন্দ্রিক, উদার, স্বচ্ছ, ভবিষ্যৎবাচ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রসারন অব্যাহত রাখব; পাশাপাশি চলমান থাকবে অর্থবহ বাণিজ্য উদারীকরণ প্রব্রিয়া। দোহা উন্নয়ন এজেন্ডাভুক্ত চুক্তিসমূহের আশু বাস্তবায়নে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশসমূহকে তাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ, স্বল্পোনড়বত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও মধ্যম আয়ের দেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের বাণিজ্য বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর আমরা প্রভূত গুরুত্ব আরোপ করছি। এই প্রচেষ্টার আরেকটি অনুষঙ্গ হলো আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমন্বয় ও আন্তঃসংযোগ।

৬৯. প্রয়োজনানুযায়ী ঋণ অর্থায়ন, ঋণ মওকুফ, ঋণ পুনর্গঠন ও সুষ্ঠু ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষণার লক্ষ্যে সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা প্রদানের প্রভূত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বল্পোনড়বত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং কতিপয় উনড়বত দেশসহ অনেক দেশই ঋণ সংকটে নিপতিত হওয়ার পথে রয়েছে এবং কিছু দেশ ইতিমধ্যেই এ সংকটে নিমজ্জিত। ঋণের পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় রাখা ঋণ গ্রহণকারী দেশের কর্তব্য। অবশ্য আমরা এও মনে করি যে ঋণ প্রদানকারী দেশেরও উচিত এমনভাবে ঋণ সহায়তা প্রদান করা যাতে করে একটি দেশের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সহনীয় (পরিশোধযোগ্য) মাত্রা অতিক্রম না করে। যেসব দেশ ঋণ মওকুফ সুবিধা লাভ করেছে এবং সহনীয় পরিমাণের ঋণগ্রহণ মাত্রা অর্জন করেছে তাদের ঋণপরিশোধ সক্ষমতা বজায় রাখতে আমরা সহায়তা দান করব।

৭০. আমরা এতদ্বারা একটি প্রযুক্তি পৃষ্ঠপোষণ পদ্ধতির প্রবর্তন করছি, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সমর্থনকল্পে আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডার মাধ্যমে যার পত্তন ঘটেছিল। এ প্রযুক্তি পৃষ্ঠপোষণ পদ্ধতি কার্যকর হবে সদস্য রাষ্ট্র, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত, বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী, জাতিসংঘভুক্ত সংস্থাসমূহ ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্যদের মধ্যকার বহুঅংশীভিত্তিক পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এবং এ পদ্ধতির সংগঠন ও বাস্তবায়নে থাকবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক জাতিসংঘের একটি আন্তঃসংস্থা কার্যদল, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনাবিষয়ক পার¯পরিক সহযোগিতামূলক একটি বহুঅংশীভিত্তিক ফোরাম এবং একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।

  • টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃসংস্থা কার্যদলের ভূমিকা হবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরে সমন্বয় ও সঙ্গতি সাধন এবং পার¯পরিক সহযোগিতার প্রবর্ধন। এর ফলে বৃদ্ধি পাবে দক্ষতা ও সম্মিলিত-শক্তি এবং বিশেষ করে অর্জিত হবে সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ বাড়ানোর লক্ষ্য। সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর দশজন প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে এ কার্যদল তার কর্মকা- পরিচালনা করবে। এর কার্যপরিধির অন্তর্ভুক্ত থাকবে: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক পার¯পরিক সহযোগিতামূলক বহুঅংশীভিত্তিক ফোরামের সভা আয়োজন, এ ফোরাম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ধরন-প্রকরণ বিষয়ে প্রস্তাব প্রস্তুতকরণসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের নির্মাণ ও তা চালুকরণ। এই দশজন প্রতিনিধি জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক দুই বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। জাতিসংঘের সকল সংস্থা, তহবিল ও কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কার্যকর কমিশনগুলো এই কার্যদলে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। প্রাথমিকভাবে এর সংগঠনে থাকবে সেই সব সংস্থা যারা বর্তমানে প্রযুক্তি পৃষ্ঠপোষণা বিষয়ক অনানুষ্ঠানিক কার্যদলের সমন্বয় সাধন করে। এসব সংস্থার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: জাতিসংঘ সচিবালয়ভুক্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিদপ্তর, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি, জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন, বিশ্ব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বিষয়ক সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংক।
  • জাতিসংঘের অভ্যন্তরে ও বাইরে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি বিদ্যমান বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক উদ্যোগ, প্রণালি ও কর্মসূচির তথ্য সমাহারের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রায়ন বহন করে; যা এই তথ্যভান্ডারে প্রবেশের দ্বারপথ হিসেবে কাজ করবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক তথ্য, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রাপ্তির পথ সুগম করবে এই প্ল্যাটফর্ম। পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা সহায়ক উদ্যোগ ও নীতিমালা এবং এ সংশ্লিষ্ট উত্তম চর্চা, দৃষ্টান্ত ও শিক্ষণীয় সম্পর্কে জানা যাবে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে। বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত সবার জন্য উন্মুক্ত প্রাসঙ্গিক বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার প্রচারেও সহায়তা দেবে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি তৈরি হবে একটি স্বতন্ত্র কারিগরি মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বিবেচিত হবে জাতিসংঘের অভ্যন্তরে ও বাইরের অন্যান্য উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট উত্তম চর্চা, দৃষ্টান্ত ও শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ। ফলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যাবে এবং পাওয়া যাবে এসব প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার। নতুন প্ল্যাটফর্মটি দ্বৈততা পরিহার ও সম্মিলিত-বর্ধিত-ফলাফল অর্জনসহ বর্তমান প্ল্যাটফর্মের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারবে।
  • প্রতি বছর দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক বহুঅংশীজনভিত্তিক ফোরামের সভা। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই সমাবেশে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ বাস্তবায়নের জন্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা-পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অংশীজনদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া তৈরি, সমমনা ও একই ধরনের লক্ষ্যবিশিষ্ট্য অংশীজনদের মাঝে যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত স্থান হিসেবে কাজ করবে এই ফোরাম। যৌথ বৈজ্ঞানিক প্রয়াসে, উদ্ভাবনা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে এবং প্রযুক্তির চাহিদা ও ঘাটতি নিরূপণে ও নিরীক্ষণে বহুঅংশীজনভিত্তিক পার¯পরিক সহযোগিতার বাতাবরণ নির্মাণে সহায়তা করবে এই ফোরাম। এই অংশীজনভিত্তিক প্রয়াসের আরও একটি উদ্দেশ্য হবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির সৃজন, হস্তান্তর ও প্রচার। উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের সভার পূর্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় ফোরামের সভা আহ্বান করবেন। বিকল্পভাবে, অন্যান্য ফোরাম ও সম্মেলনের সাথে যৌথভাবেও এই ফোরামের সভা হতে পারে; এক্ষেত্রে বিবেচনায় থাকবে ফোরামের বিষয়বস্তু অথবা অন্যান্য ফোরাম ও সম্মেলনের সঙ্গে আলোচ্য ফোরামের সংশ্লিষ্টতা ও সঙ্গতি। এই সভা অনুষ্ঠিত হবে দুই সদস্যরাষ্ট্রের যৌথ সভাপতিত্বে। সভার আলোচনাসমূহের একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হবে। ২০১৫-উত্তর উন্নয়ন এজেন্ডার বাস্তবায়নোত্তর পদেক্ষেপ ও পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের ইনপুট হিসেবে সভাপতিদ্বয় কর্তৃক সভার সারসংক্ষেপের বিশদরূপ উপস্থাপন করা হবে।
  • বহুঅংশীজনভিত্তিক ফোরামের সারসংক্ষেপ উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের সভায় অবগত করা হবে। কার্যদলের বিশেষজ্ঞ মতামত বিবেচনায় নিয়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা বিষয়ক বহুঅংশীজনভিত্তিক ফোরামের পরবর্তী সভার বিষয়বস্তু নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের সভায়।

৭১. আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি যে, এই এজেন্ডা এবং বাস্তবায়নের উপায়সহ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ সর্বজনীন, অবিচ্ছেদ্য ও একই সূত্রে বাঁধা।

[1] উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা ২৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় (সিদ্ধান্ত ৬৯/৩১৩)।

৭২. পরবর্তী পনেরো বছর ব্যাপী এই এজেন্ডার বাস্তবায়ন কাজের পদ্ধতিগত ফলো-আপ ও পর্যালোচনায় নিয়োজিত থাকার বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি বলিষ্ঠ, স্বতঃপ্রণোদিত, কার্যকর, অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও সমন্বিত ফলো-আপ ও পর্যালোচনা কাঠামো এজেন্ডা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কাউকে পেছনে রেখে অগ্রসর না হওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করে, এই এজেন্ডার বাস্তবায়ন অগ্রগতি অনুসরণে ও সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন হার অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই পরিকাঠামো।

৭৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সক্রিয় এই পরিকাঠামো নাগরিকদের প্রতি আমাদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করবে, এজেন্ডার উদ্দেশ্য অর্জনে কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত করবে এবং পারস্পরিক শিক্ষণ, উত্তম অনুশীলন ও দৃষ্টান্ত বিনিময়ের উপযোগী আবহ সৃষ্টি করবে। যৌথ চ্যালেঞ্জসমূহ অতিক্রমে এবং নতুন ও উদীয়মান বিষয় চিহ্নিতকরণে পর্যাপ্ত সমর্থনের ব্যবস্থাও এটি করবে। এটি একটি সর্বজনীন ও বৈশ্বিক এজেন্ডা বিধায় দেশসমূহের মধ্যকার পার¯পরিক বিশ্বাস ও ঐকমত্য এক্ষেত্রে প্রভূত গুরুত্ব বহন করে।

৭৪. সকল পর্যায়ে ফলো-আপ ও পর্যালোচনা নিম্নোক্ত নীতিসমূহের দ্বারা পরিচালিত হবে:

(ক)  ফলো-আপ ও পর্যালোচনা হবে স্বপ্রণোদিত ও স্ব স্ব দেশের নেতৃত্বাধীন, দেশজ বাস্তবতাসক্ষমতা ও উন্নয়নের পর্যায় অনুগামী এবং নীতি স্বাধীনতা ও অগ্রাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জাতীয় স্বত্বাধিকার টেকসই উন্নয়ন অর্জনের মূল চাবিকাঠি হওয়ায় বৈশ্বিক পর্যালোচনার প্রাথমিক ভিত্তি জাতীয় সরকারি তথ্য-উপাত্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পর্যায়ের প্রক্রিয়াসমূহ হবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যালোচনার মূলভিত্তি।

(খ)  বাস্তবায়নের উপায়সহ বৈশ্বিক অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের বাস্তবায়নপরিবী ক্ষণ সকল দেশে এমন প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হবে যাতে করে এসব অভীষ্টের সর্বজনীন, সমন্বিত ও আন্তঃসম্পর্কযুক্ত রূপের প্রতিফলন ঘটে; পাশাপাশি বিবেচিত হয় টেকসই উন্নয়নের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত তিনটি মাত্রা।

(গ)  ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় একটি দীর্ঘমেয়াদি ধারা বজায় রাখা হবে, চিহ্নিত করা হবে অর্জন, চ্যালেঞ্জ, ঘাটতি ও সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকসমূহ; এ প্রক্রিয়া দেশসমূহের সমৃদ্ধ নীতি নির্বাচনে সহায়ক হবে, সহায়ক ভূমিকা রাখবে প্রয়োজনীয় বাস্তবায়নে পদ্ধতি ও অংশীদারিত্বের সমাবেশ ঘটাতে এবং ফলপ্রসূ সমাধান ও উত্তম চর্চাসমূহ চিহ্নিতকরণে। সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা রাখবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যবস্থার সমন্বয় ও কার্যকারিতায়।

(ঘ)  এ প্রক্রিয়া সকলের জন্য উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ হবে এবং সকল প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের প্রতিবেদন প্রণয়নে সহায়তা প্রদান করবে।

(ঙ)  প্রক্রিয়াসমূহ হবে জন-মানুষকেন্দ্রিক, জেন্ডার সংবেদনশীল, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সমাজের দরিদ্রতম, অরক্ষিত-ঝুঁকিগ্রস্ত ও সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ অগ্রাধিকারযুক্ত।

(চ)   প্রাপ্যতা সাপেক্ষে এগুলো হবে বিদ্যমান প্ল্যাটফর্ম ও প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তিপ্রাপ্ত, দ্বৈততা পরিহারী এবং জাতীয় পরিস্থিতি, সক্ষমতা, চাহিদা ও অগ্রাধিকারের প্রতি সংবেদনশীল। নতুন বিষয় ও নতুন রীতি-পদ্ধতির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো বিবর্তিত ও অভিযোজিত হবে এবং জাতীয় প্রশাসনের প্রতিবেদনভার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখবে।

(ছ)  ভৌগোলিক অবস্থান এবং জাতীয় পরিস্থিতির প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সাপেক্ষে ফলো-আপ ও পর্যালোচনা হবে যথাযথ ও সুক্ষ্ম বিশ্লেষণনির্ভর, মানসম্মত, সহজলভ্য, সময়ানুগ ও নির্ভরযোগ্য এবং আয়, জেন্ডার, বয়স, জাতিসত্তা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, অভিবাসনগত অবস্থান, অভিযোজন, প্রতিবন্ধিতা, বিভাজিত তথ্য-উপাত্ত নির্ভর রাষ্ট্রকৃত মূল্যায়নে সমৃদ্ধ।

(জ)  আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ, স্বল্পোনড়বত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রয়োজন হবে জাতীয় তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থা ও মূল্যায়ন কর্মসূচির জোরদারকরণ কর্মসূচিসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বর্ধিত সহায়তা।

(ঝ)  জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থার কার্যকর সমর্থন থাকবে ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায়।

৭৫. অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের ফলো-আপ ও পর্যালোচনার জন্য প্রণীত হবে একগুচ্ছ বৈশ্বিক নির্দেশক। এসব নির্দেশকের স¤পূরক হিসেবে কাজ করবে সদস্য দেশগুলো কর্তৃক প্রস্তুতকৃত আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের নির্দেশকসমূহ। যে সকল লক্ষ্যমাত্রার জন্য জাতীয় বা বৈশ্বিক পর্যায়ের ভিত্তিতথ্য এখনও প্রস্তুত নেই তাদের বিপরীতে ভিত্তিতথ্য প্রস্তুতের জন্য গৃহীত কর্মকান্ডের ফলাফলের অতিরিক্ত পদক্ষেপ হিসেবে এ সম্পূরক নির্দেশকসমূহ প্রস্তুত করা হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের নির্দেশক সংক্রান্ত আন্তঃসংস্থা বিশেষজ্ঞ দল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বৈশ্বিক নির্দেশক কাঠামো ২০১৬ সালের মার্চ মাস নাগাদ পরিসংখ্যান পরিষদ কর্তৃক স্বীকৃত হবে এবং পরবর্তীতে স্ব স্ব কার্যপরিধি অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হবে। এ নির্দেশক কাঠামো হবে সহজ কিন্তু বলিষ্ঠ এবং বাস্তবায়নের উপায়সহ সকল অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রার সাথে এর সংশ্লিষ্টতা থাকবে এবং সংরক্ষিত হবে অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক ভারসাম্য, সমন্বয় ও আকাক্সক্ষা।

৭৬. আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশ, স্বল্পোনড়বত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর ও তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য আমরা সহায়তা প্রদান করব। ফলস্বরূপ উচ্চমানসম্পন্ন, সময়ানুগ, নির্ভরযোগ্য ও বিভাজিত উপাত্ত সহজলভ্য হবে। ভূ-পর্যবেক্ষণ ও ভূ-স্থানিক তথ্যসহ বিস্তৃত পরিসরের বিবিধ তথ্য-উপাত্তের কার্যকর ব্যবহারের জন্য আমরা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক উপায়ে যথোপযুক্ত সরকারি-বেসরকারি পারস্পপরিক সহযোগিতার সংবর্ধন ঘটাব; পাশাপাশি অগ্রগতি সাধন ও পরিমাপণে আমরা জাতীয় স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করব।

৭৭. স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়মিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি পর্যালোচনা করার বিষয়ে আমরা কৃতসঙ্কল্প। ফলো-আপ ও পর্যালোচনা সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিসমূহের সহায়তা যথাসম্ভব গ্রহণ করা হবে। জাতীয় প্রতিবেদনসমূহে অগ্রগতি পর্যালোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং সেখানে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত থাকবে। আঞ্চলিক সংলাপ ও বৈশ্বিক পর্যালোচনার পাশাপাশি বিভিনড়ব পর্যায়ের ফলো-আপ কার্যক্রমে এরা সুপারিশ প্রদান করবে।

জাতীয় পর্যায়

৭৮. এই এজেন্ডার সার্বিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাস্তবানুগ দ্রুততম সময়ে উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা সকল সদস্য রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করি। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ব্যবস্থায় উত্তরণে এই উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে এবং এর ভিত্তি হবে বিদ্যমান পরিকল্পনা কৌশলসমূহ, যেমন স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলসমূহ।

৭৯. স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়মিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি পর্যালোচনা করার বিষয়ে আমরা সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে উদ্বুদ্ধ করছি। এই প্রক্রিয়া হবে (দেশসমূহের) স্ব-নেতৃত্বাধীন ও রাষ্ট্র-চালিত। এসব পর্যালোচনা হবে আদিবাসী জনগোষ্ঠী, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত ও অন্যান্য অংশীজনদের মতামতপুষ্ট এবং জাতীয় পরিস্থিতি, নীতিমালা ও অগ্রাধিকারসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।

আঞ্চলিক পর্যায়

৮০. স্বপ্রণোদিত পর্যবেক্ষণ, উত্তম চর্চা ও যৌথ লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ের ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সহশিক্ষণের উত্তম সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কমিশন ও সংস্থাসমূহের সহযোগিতা আমরা সাদরে গ্রহণ করব। অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক প্রক্রিয়া জাতীয় পর্যালোচনা দ্বারা ঋদ্ধ হবে এবং পর্যায়ক্রমে সমৃদ্ধ করবে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের ও অন্যান্য বৈশ্বিক পর্যায়ের ফলো-আপ ও পর্যালোচনার প্রয়াসসমূহকে।

৮১. আঞ্চলিক পর্যায়ে বিদ্যমান পর্যালোচনা প্রণালীর গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং পর্যাপ্ত নীতি স্বাধীনতার সুযোগ রেখে সকল সদস্য রাষ্ট্রকে উপযুক্ত আঞ্চলিক ফোরাম চিহ্নিতকরণ ও যোগদানে উৎসাহিত করছি আমরা। জাতিসংঘের আঞ্চলিক কমিশনগুলোকে সদস্য রাষ্ট্রের জন্য এই বিষয়ে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বৈশ্বিক পর্যায়

৮২. ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার বৈশ্বিক পর্যায়ের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম। বিদ্যমান কার্যভার অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ও ফোরামের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে এই ফোরাম। সাফল্য, চ্যালেঞ্জ ও শিক্ষণীয়সহ বিবিধ অভিজ্ঞতা বিনিময় প্রক্রিয়ার পৃষ্ঠপোষণ করবে এই ফোরাম এবং ফলো-আপ এর ক্ষেত্রে প্রদান করবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নির্দেশনা ও সুপারিশমালা। ফলে সমগ্র প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাব্যাপী সুসঙ্গতি ও সমন্বয় সাধিত হবে এবং এজেন্ডার প্রাসঙ্গিকতা ও উচ্চাভিলাষী রূপ বজায় থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি, অর্জন ও উনড়বত ও উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জের পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন ও আগত বিষয়সমূহের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হবে। সকল স্বল্পোনড়বত দেশ, ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশে এবং জাতিসংঘের সকল প্রাসঙ্গিক সম্মেলন ও প্রক্রিয়ার ফলো-আপ ও পর্যালোচনা ব্যবস্থার মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপিত হবে।

৮৩. বৈশ্বিক নির্দেশক কাঠামো অনুসরণ করে, জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থার মাধ্যমে সৃষ্ট উপাত্ত ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে জাতিসংঘের সাংগঠনিক ব্যবস্থার সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক প্রস্তুতকৃত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ক বার্ষিক অগ্রগতি প্রতিবেদন দ্বারা সমৃদ্ধ হবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের ফলো-আপ ও পর্যালোচনা। এই ফোরামের আরেকটি সহায়ক তথ্য-উৎস হবে বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও নীতির কার্যকর সংযোগ সাধন করবে এবং দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নে আগ্রহী নীতিনির্ধারকদেরকে একটি শক্তিশালী তথ্যভিত্তিক প্রামাণ্য উৎস হিসেবে কাজ করবে। এই বৈশ্বিক প্রতিবেদনের আওতা ও পরিধি, পদ্ধতিগত বিষয় ও প্রকাশনার সংখ্যা ও অগ্রগতি প্রতিবেদনের সঙ্গে এর সম্পর্ক বিষয়ে একটি পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়া পরিচালনের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি মহোদয়কে আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি; ২০১৬ সালের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের অধিবেশনে মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণায় এর প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা যাবে।

৮৪. ২০১৩ সালের ৯ জুলাই গৃহীত সাধারণ পরিষদের ৬৭/২৯০ সংখ্যক সিদ্ধান্ত অনুসরণপূর্বক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম নিয়মিত পর্যালোচনা কার্য সম্পাদন করবে। পর্যালোচনা হবে স্বপ্রণোদিত বা ঐচ্ছিক এবং প্রতিবেদন প্রণয়নে উৎসাহদানকারী; এই প্রক্রিয়ায় উনড়বত ও উন্নয়নশীল দেশ ছাড়াও অন্তর্ভুক্ত হবে সুশীল সমাজ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতসহ জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে এই পর্যালোচনা পরিচালিত হবে।

৮৫. পরস্পর সম্পর্কযুক্ত (cross-cutting) বিষয়সহ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনাও সম্পাদিত হবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে। এ পর্যালোচনার সহায়ক হিসেবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কর্মভিত্তিক কমিশনসমূহ এবং অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা ও ফোরামের পর্যালোচনা থাকবে; এসব পর্যালোচনার সময় অভীষ্টসমূহের সমন্বিত প্রকৃতি ও আন্তঃসংযোগের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এসব পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং সম্ভব ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন প্রক্রিয়ার সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৮৬. আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডায় বর্ণিত উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন সংক্রান্ত ফলাফলের ফলো-আপ ও পর্যালোচনা এবং কাঠামোর অঙ্গীভূত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে নির্ধারিত ফলো-আপ ও পর্যালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন বিষয়ক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের বার্ষিক ফোরামের উপসংহার ও নির্দেশনা উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক কাঠামোর সার্বিক ফলো-আপ ও পর্যালোচনার ইনপুট হিসেবে কাজ করবে।

৮৭. উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম সাধারণ পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত সভায় আলোচ্য এজেন্ডা ও এর বাস্তবায়ন বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নির্দেশনা প্রদান করবে, যাচাই করবে অগ্রগতি, চিহ্নিত করবে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জসমূহ এবং বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় কর্মব্যবস্থার আয়োজন করবে। সাধারণ পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরবর্তী উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের সভা অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালে; অর্থাৎ সভার সময় ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস সাধিত হলো যাতে করে চতুর্বার্ষিক সার্বিক নীতি-পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার সাথে এর সর্বোচ্চ সমন্বয় সম্ভব হয়।

৮৮. জাতিসংঘের উন্নয়ন কাঠামো কর্তৃক প্রণীত নতুন এজেন্ডার সার্থক বাস্তবায়নের জন্য সুসঙ্গত ও সমন্বিত সহায়তা কার্যক্রম প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমরা পদ্ধতিভিত্তিক কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করছি। বাস্তবায়ন সহায়তার পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ কর্মব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং অগ্রগতি ও বাধাবিঘড়ব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের বিষয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের চলমান সংলাপকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে আমরা কর্মব্যবস্থা গ্রহণ করব।

৮৯. সিদ্ধান্ত ৬৭/২৯০ অনুসারে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম প্রধান দলসমূহকে ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অংশীজনদের ফলো-আপ ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে সহায়তা প্রদান করবে। এ সকল কুশীলবকে আমরা এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের অবদান বিষয়ে আমাদের অবগত করতে আহ্বান জানাচ্ছি।

৯০. মহাসচিব মহোদয়কে আমরা, সদস্যরাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে পরামর্শক্রমে, ২০১৬ সালের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের প্রস্তুতি হিসেবে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ পরিষদের সপ্ততিতম অধিবেশনে বিবেচনার জন্য একটি প্রতিবেদন প্রণয়নের অনুরোধ জানাচ্ছি। এই প্রতিবেদনে বৈশ্বিক পর্যায়ের সুসঙ্গত, দক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ফলো-আপ ও পর্যালোচনার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলো চিহ্নিত হবে। এই প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতাধন্য উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের জন্য ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রস্তুতের সাংগঠনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রস্তাব এবং স্বপ্রণোদিত সাধারণ প্রতিবেদন প্রস্তুতের নির্দেশনা সংক্রান্ত সুপারিশ থাকবে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব সম্পর্কে সু¯পষ্ট নির্দেশনা থাকবে এবং নির্দেশনা থাকবে ধারাবাহিক বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনার অংশ হিসেবে বার্ষিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে, এবং উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের পর্যায়নুবৃত্তিক পর্যালোচনার বিকল্প সম্পর্কে।

৯১. টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার সার্থক বাস্তবায়ন ও পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে একটি উনড়বততর ধরিত্রী রচনায় আমাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।