২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ সম্মেলনে সকল সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতি ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে সূচিত হয় “এজেন্ডা ২০৩০”, যা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) নামে অধিক পরিচিত। নতুন এই এজেন্ডার বৈশিষ্ট্য হলো এর সর্বজনীন, সমন্বিত, রূপান্তরমুখী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন দর্শন। এ উন্নয়ন চিন্তার মূল স্পৃহা হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি দেশের নাগরিককে উন্নয়নের সুফল একইভাবে পৌঁছে দিতে হবে। এই অভিপ্রায় অত্যন্ত ব্যাপক এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

উপরোক্ত প্রেক্ষিতে এজেন্ডা ২০৩০-এর সুষ্ঠ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয়সাধন এবং উন্নয়নের সুষ্ঠ বণ্টন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও সরকারের ভূমিকাই প্রধান। অপর দিকে এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি অনুসরণ, পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ, যেমন: সরকার, ব্যক্তিখাতে উদ্যোক্তা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, জ্ঞান-বলয়ের এবং উন্নয়নকর্মী – সহযোগী সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এর মাধ্যমে প্রসারিত হবে রাষ্ট্র ও সমাজের জবাবদিহিতা।

এই চিন্তার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে ১৮ই মে ২০১৭ তারিখে আয়োজিত হয় “টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ভূমিকা” শীর্ষক সম্মেলন। এই সম্মেলনটি দেশের ভেতর উন্নয়ন অংশীদারিত্বকে গভীর করার প্রচেষ্টায় ছিলো একটি প্রতিশ্রুতিশীল যাত্রার সূচনা। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর আন্তরিক আগ্রহে এই সম্মেলনের মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তাকে নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে। উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই মাঠ পর্যায়ে এসডিজি, এমনকি এমডিজি’র আগে থেকেই কাজ করে আসছে। গবেষণা তথা জ্ঞান-বলয়ের কর্মীরা সেই উদ্যোগে অবদান রাখছে। সরকার বিভিন্ন সময় তাদেরকে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে এবং মূল্যায়ন করেছে। এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই অংশীদারিত্বের সম্ভাবনার পূর্ণতা অর্জন তাই খুবই অভিপ্রেত।

সম্মেলনের আলোচনা থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। তার মধ্যে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার বিভিন্ন দিক, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বেসরকারি সংস্থাদেরকে অর্থায়ন ও নীতি সমর্থন প্রদান, এনজিওদের সক্ষমতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এসডিজি সর্ম্পকিত কাজের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি ইত্যাদি। এছাড়াও সমাজের প্রান্তিক মানুষদের সাথে কাজ করার সুবাদে সরকারকে তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলো একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে

এ প্রসঙ্গে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের কথা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। এবং সেই সাথে এই নীতিমালার মধ্যে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাজের ক্ষেত্রে যে সৃষ্টিশীলতা, তা যেন ব্যাহত না হয় সে বিষয়েও দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। আরও একটি বড় বিষয় প্রস্তাব আকারে এসেছে, তা হলো অর্থনীতিতে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কীভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবদান রাখছে তার একটি মূল্যায়ন করা।

গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনাগুলোকে বৃহত্তর পরিসরে নেওয়ার লক্ষ্যে একত্রে ধারণ করে এই পুস্তিকাটি প্রকাশ করা হলো।

প্রকাশকাল: নভেম্বর ২০১৭

প্রকাশক: এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

মুদ্রণ আর্থিক সহায়তায়: বাংলাদেশ আইএনজিও ফোরাম

ISBN: 978-984-34-3258-2